যুদ্ধক্ষেত্রে ভালো করছিল ইউক্রেন, হঠাৎ স্টারলিংক বন্ধের নির্দেশ মাস্কের
Published: 26th, July 2025 GMT
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন সেনারা যখন ভালো করছিলেন, তখন স্টারলিংকের ইন্টানেট সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে স্টারলিংকের সেবা বন্ধে করে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।
ইউক্রেনের সেনারা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিজেদের হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারে রাশিয়ায় পাল্টা হামলায় ব্যস্ত ছিলেন। এই সময়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের মালিক ধনকুবের ইলন মাস্ক সেবা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে ইউক্রেনের পাল্টা হামলা বিঘ্নিত হয়েছিল।
রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা চালায়। স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক এই যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেন সেনাবাহিনীর জন্য সেবা দেওয়া শুরু করে। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সেনাদের যোগাযোগ বজায় রাখতে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস পর সেপ্টেম্বরে মাস্কের সেবা বন্ধের নির্দেশের পর স্টারলিংকের সেবার প্রতি কিয়েভের আস্থায় চিড় ধরে।
ইউক্রেনের কমান্ডের বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন তিন ব্যক্তির মতে, স্পেসএক্সের ক্যালিফোর্নিয়া কার্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগর খেরসনসহ কিছু এলাকায় স্টারলিংক সেবা বন্ধ করতে বলেছিলেন মাস্ক। খেরসন কৃষ্ণসাগরের উত্তরে অবস্থিত একটি কৌশলগত নগর, যেখানে ওই সময়ে ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনীর কাছ থেকে কিছু ভুখণ্ড পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।
তিন ব্যক্তির একজন জানান, মাস্কের নির্দেশ আদেশ পাওয়ার পর স্টারলিংকের প্রকৌশলী মাইকেল নিকোলস সহকর্মীদের বলেছিলেন, ‘আমাদের এটা করতে হবে।’ ওই তিন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সংস্থাটির কর্মীরা নির্দেশ মেনে চলছিলেন। তাঁরা অন্তত ১০০ স্টারলিংক টার্মিনাল নিষ্ক্রিয় করেছিলেন। এর প্রভাব পড়েছিল রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনের অন্যান্য এলাকা, বিশেষ করে দোনেৎস্ক প্রদেশের কিছু অংশেও; যেখানে ইউক্রেনের সেনাদের অভিযান চলছিল।
মাস্কের নির্দেশের পর ইউক্রেনের সেনারা হঠাৎ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হন। ইউক্রেনের একজন সেনা কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর একজন উপদেষ্টা এবং আরও দুজন রণক্ষেত্রের সম্মুখভাগের (ফ্রন্ট লাইনের) কাছাকাছি এলাকায় স্টারলিংকের সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ার কথার জানিয়েছেন। এমনটি হওয়ার ইউক্রেনের সেনারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, রুশ বাহিনীর ওপর নজরদারি করা ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল এবং দূরপাল্লার গোলন্দাজ ইউনিটগুলোকে নিশানায় আঘাত করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। কারণ, লক্ষ্য ঠিক করতে তাঁরা স্টারলিংকের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধক্ষেত্রের সম্মুখভাগে স্টারলিংকের একটি টার্মিনাল বসাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র স ন র বন ধ র ন র দ শ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫