লিভারের প্রতিরোধযোগ্য এই রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন
Published: 29th, July 2025 GMT
হেপাটাইটিস বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত (হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ই) লিভার রোগে আক্রান্ত হয় লাখ লাখ মানুষ; বিশেষ করে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই জানে না যে তারা সংক্রমিত। এই ‘নীরব মহামারি’ লক্ষণহীনভাবে শরীরে দীর্ঘদিন থেকে গিয়ে লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী অবস্থার সৃষ্টি করে। এই রোগে প্রতিবছর ১৩ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। এমন বাস্তবতায় গতকাল ২৮ জানুয়ারি ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫’ পালিত হলো।
হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ সাধারণত পানি, খাদ্য ও মলবাহিত, যা ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্ত খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপারে সচেতন হলেই রোধ করা যায়। অন্যদিকে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ আক্রান্ত মায়ের কাছ থেকে সন্তান যেমন সংক্রমিত হতে পারে, তেমনি অনিরাপদ রক্তসঞ্চালন ও যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সংক্রমিত হতে পারে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হেপাটাইটিস একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এখানে এখনো অনেক ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি, নিরাপদ রক্তসঞ্চালনেও ঘাটতি আছে এবং জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
তবে আশার কথা হলো, হেপাটাইটিস প্রতিরোধযোগ্য। হেপাটাইটিস বি-র কার্যকর ও নিরাপদ টিকা রয়েছে। হেপাটাইটিস সি-র চিকিৎসাও এখন অনেক সহজলভ্য ও কার্যকর। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণই পারে সংক্রমণ রোধ করতে ও জীবন বাঁচাতে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যশিক্ষা, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার এবং কমিউনিটি পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা.
এ কে এম শামসুল কবির, লিভার ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ প ট ইট স
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।