জয়পুরহাটে ঘন ঘন বদলি ও প্রত্যাহারের কারণে প্রায় এক মাস ধরে জেলার তিন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেই। সদর, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানায় পরিদর্শক (তদন্ত) পদে থাকা কর্মকর্তারা ওসির দায়িত্ব পালন করছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর একযোগে এ জেলার পাঁচ থানার ওসির বদলি করা হয়। এর দুই দিন পর ১ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাবের স্বাক্ষরিত এক আদেশে সদর, পাঁচবিবি, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হয়। ওই চিঠিতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি শাহেদ আল মামুনকে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) পরিদর্শক কাওসার আলীকে পাঁচবিবি থানার ওসি, জেলা ওআর হেডকোয়াটার্সের পরিদর্শক মশিউর রহমানকে ক্ষেতলাল থানার ওসি, সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে কালাই থানার ওসি এবং সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল ইসলামকে আক্কেলপুর থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
যোগদানের ৩ মাস ১২ দিনের মাথায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আক্কেলপুর থানার ওসি মইনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার ওসি মশিউর রহমানের বদলি হয়। এরপর পুলিশ পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। এক মাসের মধ্যে আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করলে মাহবুবুর রহমান সরকার ওসির দায়িত্ব পান।
আরো পড়ুন:
মেহেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কৃষকের মৃত্যু
শরীয়তপুরে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি শাহেদ আল মামুন ও পাঁচবিবি থানার ওসি কাওসার আলীকে বদলি করা হয়। আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুল ইসলামকে আবার পাঁচবিবি থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। অক্টোবরে যোগদানের পর একটানা শুধু কালাই থানায় জাহিদ হোসেন ওসির দায়িত্বে রয়েছেন।
ওসি শাহেদ আল মামুন বদলির পর সদর থানার দায়িত্ব পান নূর আলম সিদ্দিক। তাকেও বদলি করা হয়। চলতি বছরের ৫ মে ক্ষেতলাল থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করা খন্দকার ফরিদ হোসেনকে এক মাস না যেতে তাকে সদর থানায় বদলি করা হয়। কিন্তু ২২ দিন পর তাকেও প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। তিন দিনের ছুটি শেষে এ বছরের গত ৪ জুলাই তাকে থানায় যোগদানের কথা ছিল। তবে তিনি সেদিন যোগদান করেননি। এদিকে ৫ জুলাই জয়পুরহাট জেলায় আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ওইদিন দুপুরের দিকে খন্দকার ফরিদ হোসেন কর্মস্থলে হাজির হন। এরপর ওই দিনই প্রশাসনিক কারণের কথা উল্লেখ করে এসপি তাকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করে অফিস আদেশ জারি করেন।
একইভাবে, আক্কেলপুর থানার সাবেক ওসি মইনুলের পর দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমানও প্রত্যাহার হন। এরপর দায়িত্ব পান পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা। কিন্তু বিভাগীয় মামলায় পদাবনতি দিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) করে থানার দায়িত্ব থেকে গত ২৩ জুন তাকে সরিয়ে নেয়া হয়।
গত ১৩ জুন হাসমত আলী ক্ষেতলাল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২০১২ সালে জয়পুরহাট থানার এসআই থাকাকালীন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের মিছিল লাঠিচার্জ করেন। এ সময় গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। পুরাতন ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর ২৬ জুন সকালে ওসি হাসমত আলী থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেনকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে গোপনে থানা ছেড়ে চলে যান। পরে অবশ্য তাকে থানায় প্রত্যাহার দেখানো হয়।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর থানা, আক্কেলপুর থানা ও ক্ষেতলাল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদায়ন করা হয়নি। জয়পুরহাট সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) নাজমুল কাদের, আক্কেলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুল ইসলাম ও ক্ষেতলাল থানার পরির্দশক (তদন্ত) কামাল হোসেন এখন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঘন ঘন ওসি বদলি ও প্রত্যাহারের ঘটনায় বাইরে থেকে এ জেলায় অভিজ্ঞ কোনো কর্মকর্তা ওসি হয়ে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ কারণে একমাস হলেও তিন থানায় ওসি পদায়ন করা যায়নি।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, জেলায় এখন এমন অভিজ্ঞ কেউ নেই। আর ওসি পদের জন্য শর্ত থাকে। শর্ত পূরণ হলে থানায় ওসি করা হয়। আর ঢাকা (পুলিশ হেডকোয়াটার্স) থেকে কাউকে (অভিজ্ঞ পরিদর্শক) জেলায় এখনো দেয়া হয়নি। তবে শিগগিরই অভিজ্ঞ ওসি থানায় পদায়ন করা হবে।
ঢাকা/বাকী/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর থ ন র পর র ন ল ইসল ম সদর থ ন র কর মকর ত র রহম ন র পর দ বছর র তদন ত মইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।