দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে ফেরদৌসি আক্তার সোনালী আক্তারের সংগ্রামী জীবন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করা হয়। ‘আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে বিদেশে খেলতে যায়’ শিরোনামের এ প্রতিবেদন নজরে এলে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেনে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সোনালীদের বাড়ি পরিদর্শনে যান তিনি। পরে এই ফুটবলারের বাবা ফারুক ইসলামকে বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন একটি পাকা ঘর নির্মাণ ও ভ্যানের পরিবর্তে নতুন একটি ইজিবাইক কিনে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সেই সঙ্গে বাড়ির সামনের কাঁচা সড়ক পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন ডিসি। বর্তমানে সোনালীরা কুঁড়েঘরে বসবাস করেন। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে।

আরো পড়ুন:

এমবাপ্পের জোড়া গোলে রিয়ালের সহজ জয়

অধিনায়কের ব্যর্থতায় জয় হাতছাড়া, ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ল ম্যানইউ

প্রত্যন্ত গ্রামে ডিসির আগমনের খবরে সোনালীদের বাড়িতে আগে থেকেই উৎসুক জনতা ভিড় করেন। বাড়ির উঠোনে সামান্য আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। বিকেল ৪টার দিকে বনগ্রামে পৌঁছানে জেলা প্রশাসক। এ সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসা উপহারসামগ্রী তুলে দেন সোনালী ও তার বাবার হাতে। পরে সোনালীর অনুশীলন প্রতিষ্ঠান টুকু ফুটবল একাডেমিকে এক লাখ টাকা অনুদান এবং তার উঠে আসার তীর্থ সারথি হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়াল ও সাইকেল গ্যারেজের বরাদ্দ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে বাড়িতে একটি তেঁতুল গাছের চারাও রোপণ করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আবুল হাসেম, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর-ই-আলম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বুলবুল, টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান, ইউপি সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র রায়, শফিউল আলম শফিক প্রমুখ।

উচ্ছ্বাসিত ফারুক ইসলাম বলেন, ‘‘মেয়ের সাফল্যে আমার মতো ভ্যানচালকের বাড়িতে ডিসি, ইউএনও আসছে। আমি গর্বিত।’’

সংবাদ প্রকাশের জন্য রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেরদৌসী আক্তার সোনালী বলেন, ‘‘স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বহু প্রতিবন্ধকতা পারি দিয়ে এখানে এসেছি। আজ নিজেকে অনেকটাই সফল মনে হচ্ছে। যারা এক সময় কটু কথা বলত, আজ তারাও উৎসাহ দিচ্ছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসক আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এটা আমার বড় পাওয়া। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।’’

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ‘‘ভ্যানচালক বাবার মেয়ে সোনালী ফুটবলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। আজ তার সাফল্যের প্রতিদান স্বরূপ প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ এই বাড়িতে জেলা প্রশাসক এসেছেন। তিনি সোনালীর পরিবারের উন্নয়নের পাশাপাশি কাঁচা সড়ক পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং যেই বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সোনালীর ফুটবলে সূচনা হয়, সেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া। জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও আমাদের ইউনিয়নে। আমাদের ইউনিয়নের মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে এলাকাকে তুলে ধরছে এটাও আমাদের বড় গর্ব।’’

জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা সোনালী তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছেন। দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চেষ্টা করছেন। এতে তার পরিবার ও এলাকার মানুষের সঙ্গে আমরাও আনন্দিত। আমরা দেখেছি, সোনালী দরিদ্রতা জয় করে এ পর্যন্ত এসেছে। তার বাবা ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করেন, তাদের বাড়িটিও জরাজীর্ণ। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরটি সরিয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেব। আসার সময় দেখেছি, মূল রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ধরে তাদের বাড়ি, আমরা এই রাস্তাটিও পাকা করে দেব।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও এই এলাকায়। দুজনেরই ফুটবলের সূচনা হয় হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং টুকু ফুটবল একাডেমিতে। এ জন্য হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়তা এবং টুকু ফুটবল একাডেমিকেও বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছি। এর মাধ্যমে আরো প্রতিভাবানরা উঠে আসবেন বলে আশা রাখি।’’

ঢাকা/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল এক ড ম র পর ব র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ