ভালো বস যে পাঁচটি কথা কর্মীদের বলেন
Published: 28th, August 2025 GMT
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের একটি লক্ষ্য আছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ করে যান কর্মীরা। একজন বস লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কর্মীদের দারুণভাবে উজ্জ্বীবিত রাখতে চান। কিন্তু অনেক সময় কর্তৃত্ব দেখাতে গিয়ে কর্মীদের উৎসাহ আরও নষ্ট করে ফেলেন। কিন্তু তিনি যদি কর্মীদের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ গড়ে তোলেন, কথাবার্তায় কৌশলী ও সংযত হন তাহলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়। একজন ভালো বস কর্মীদেরকে যে পাঁচটি কথা বলে থাকেন—
নতুন কী কাজ করছেন?
শুনতে সাধারণ মনে হতে পারে, তবে অগাস্টিন বলেছেন, ‘এটি এক দারুণ কার্যকর প্রশ্ন।’ দলের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে আপনার প্রতিদিন অন্তত একবার কথা বলার বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখুন। ‘কেমন আছেন?’ বা ‘কী খবর?’—এমন সাধারণ জিজ্ঞাসাও কর্মীদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ সহজ করে দেবে। কর্মীদের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করুন, এতে আপনি পুরো দলের মনোভাব টের পাবেন।
আরো পড়ুন:
ডায়াপার পাল্টে দেওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করছে রোবট
মানবজীবন খুব সংক্ষিপ্ত এবং নশ্বর: তৌকীর আহমেদ
আমি আমার কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করতে পারি?
আদর্শ বস যে কঠোর হন না, তা কিন্তু নয়। কর্মীদের অগ্রযাত্রায় বরং তা সাহায্যই করে। কিন্তু এই কঠোরতা দেখাতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। আটকে থাকা কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনার আগে কর্মীকে বলতে পারেন, ‘আমি কি আপনার সঙ্গে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ শেয়ার করতে পারি?’ আর একবার যদি আপনি এভাবে বলেন, দেখবেন, কর্মীরা আপনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
আপনি ভালো কাজ করেছেন
আদর্শ বস কখনো কর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করতে দ্বিধা বোধ করেন না। তারা জানেন, প্রশংসা করা গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানানোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীদের এটা জানতে দিন যে আপনি তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করেন। কর্মীরা যদি জানেন যে বস হিসেবে আপনি তাদের কাজের মূল্যায়ন করেন, তাহলে তারা নিজে থেকেই দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
আপনার মতামত কী?
আদর্শ বস হিসেবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার সঙ্গে যোগাযোগের পথ সব সময় খোলা। যখন নতুন প্রকল্প বা কোনো অ্যাসাইনমেন্ট কর্মীকে বুঝিয়ে দেবেন কিংবা কোনো বিষয়ে আপনার মতামত দেবেন, তখন এটা নিশ্চিত করুন যে আপনারা ‘যাত্রী একই তরণির’। অর্থাৎ আপনার দায়িত্ব এবং কর্মীর দায়িত্ব আদতে একই। কর্মীর ভালো মানে আপনারাও ভালো। তাই কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহ বা দ্বিধা থাকলে খোলাখুলি প্রশ্ন করুন—এতে কি ভালো কিছু হবে? এই প্রশ্নে ধোঁয়াশা কেটে যাবে এবং কর্মী কোনো কিছুতে দ্বিধায় ভুগবেন না।
এই কাজটি প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য কতটা বাস্তবায়ন করবে?
আদর্শ বস হিসেবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের কথা কর্মীদের মনে গেঁথে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। কেউ যদি কোনো প্রকল্পের প্রস্তাব আপনার সামনে উপস্থাপন করেন, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করুন, এর মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কতটা বাস্তবায়িত হবে? লক্ষ্যের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দলকে গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে সাহায্য করুন।
তথ্যসূত্র: সিএনবিসি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ম দ র কর ম র লক ষ য ক জ কর আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ