মালপাহাড়িয়াদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না: মিনু
Published: 8th, September 2025 GMT
রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার মালপাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, ‘‘তাদের কেউ উচ্ছেদ করতে পারবে না।’’ যারা এ জমি দখলের চেষ্টা করছেন তাদের ‘লালঘরে’ যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন তিনি।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মোল্লাপাড়ায় গিয়ে মালপাহাড়িয়াদের নিয়ে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
তারেক রহমানের ৩১ দফা, টাঙ্গাইলে লিফলেট বিতরণ
ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে: ফখরুল
মিনু বলেন, ‘‘এই দেশ সবার। এরা জন্মসূত্রে এই জায়গার মালিক হয়েছে। আমাদের বর্তমান নেতা তারেক রহমান। এটি উনি দেশের বাইরে থেকে নিজে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সমাজের এই গরিব-অসহায় মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। যিনি এখন জমি দাবি করছেন, এরা হচ্ছে ভূমিদস্যু, জাতির শত্রু।’’
রাজশাহী সিটির সাবেক মেয়র ও সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘‘এদের নাম কোনো দিন শুনিনি। আমি এলাকার রাস্তাঘাট করেছিলাম। তাই জমির দাম অগ্নিমূল্য হয়েছে। এখন ভুয়া দলিল করে দখলের চেষ্টা করছে। আমরা সবকিছুই দেখছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি। শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা আমরা এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আছি। আপনাদের কেউ এখান থেকে তুলতে পারবে না। কোনো ভয় নাই।’’
পাহাড়িয়াদের উদ্দেশে মিনু বলেন, ‘‘গোটা দেশ এই বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আছে। ভাই পাবেন না। এখনই মাইকে হুকুম দিয়ে অনেক কিছুই করাতে পারি কিন্তু আমরা আইনকে সম্মান করি। এখানে আপনারা যুগের পর যুগ আছেন। এখানে আপনাদের জন্ম হয়েছে, পূর্বপুরুষরা মারা গেছে। এই মাটি আপনাদের ছিল, আপনাদের আছে, সারা জীবন আপনাদেরই থাকবে। কেউ অসহায় ভাববেন না। আমরা সবাই আছি আপনাদের সঙ্গে। সারা দেশ আছে, বিএনপি আছে। আপনারা বাড়িঘর আরো ভালো করে করেন।’’
জমির দাবিদার সাজ্জাদ আলীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যারা ভুয়া দলিল করেছেন, তারা রেডি হয়ে যান। যারা মনে করছেন, গরিব মানুষকে ভয় দেখাবেন, তারা লালঘরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যান। কোনো লাভ নেই। এটা দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছে যাবে। আপনি এই জমির আগে কত টাকার মালিক ছিলেন, এই এলাকায় এখন আপনার কতগুলো জমি আছে, কারা কারা এদের গোরস্থান বন্ধ করেছেন, সমস্ত কিছুই আইনের দ্বারাই করব।’’
এ জমি পাহাড়িয়াদেরই দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মিনু বলেন, ‘‘আল্লাহ যদি আমাদের দায়িত্ব দেয়, দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের অধিকারের কারণে যেভাবেই হোক এটা যেন আপনাদের নামে হয়, সেটা করব। আমার বয়স্ক মায়েরা ভয় পাচ্ছে আমি জানি, কোনো ভয় নেই। সবাই মিলে পাশে আছি। আমি চেষ্টা করব, দ্রুতই প্রশাসন দিয়ে আপনাদের গোরস্থান যেন ঠিক থাকে।’’
এর আগে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আনারুল ইসলাম, মহল্লার সর্দার বাবলু বিশ্বাস, বাসিন্দা বিশনি বিশ্বাস ও সরলা বিশ্বাস বক্তব্য দেন। পাহাড়িয়ারা কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পর ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে এখন বাড়ি হয়েছে ১৬টি। এত দিন পর সাজ্জাদ আলী নামে এক ব্যক্তি এই ১৬ কাঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন। তিনি ১৬টি পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে উচ্ছেদের আয়োজন করেছিলেন। তিনটি পরিবার কয়েক দিন আগে বাড়ি ছাড়ে।
গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সেখানে খাসি কেটে খাইয়ে-দাইয়ে তাদের ‘বিদায়ের’ আয়োজন ছিল। আর রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঘর ছাড়তে হতো বাকিদের। এ নিয়ে গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর তোলপাড় শুরু হয়। ভেস্তে যায় খাসি ভোজের আয়োজন।
পরদিন বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই মহল্লায় যান আদিবাসী সংগঠনের নেতাকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন। খোঁজ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। লন্ডন থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ফোন করে ওই মহল্লায় পাঠান।
পাহাড়িয়াদের বসতবাড়ী রক্ষার দাবিতে গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেখানে গিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। তাঁরাও একটি মানববন্ধন করেন। একই দিন মানববন্ধন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, রাজশাহী ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে এসে পাহাড়িয়াদের সঙ্গে কথা বলেন মানবাধিকারকর্মীরা।
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন স প ট ম বর আপন দ র পর ব র করছ ন রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫