সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসার মেয়াদ কমিয়ে এক মাস করার সিদ্ধান্ত
Published: 31st, October 2025 GMT
সৌদি আরব ওমরাহর ভিসার মেয়াদ তিন মাস থেকে কমিয়ে এক মাস করেছে। ভিসা ইস্যু করার তারিখ এ এক মাস গণনা করা হবে।
তবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আল-অ্যারাবিয়া জানিয়েছে, হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর সেখানে থাকার সময়কাল আগের মতোই তিন মাস থাকবে, তাতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
নতুন ওমরাহ মৌসুম শুরুর পর থেকে, অর্থাৎ জুন মাসের প্রথম দিক থেকে এ পর্যন্ত ৪০ লাখের বেশি বিদেশি জন্য ওমরাহর ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ওমরাহযাত্রীর চাপ বেশ বেশি। চলতি বছর ওমরাহ মৌসুমের মাত্র পাঁচ মাসে বিদেশি হজযাত্রীর সংখ্যায় ইতিমধ্যে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণে মন্ত্রণালয় ওমরাহ ভিসা–সংক্রান্ত নিয়মে কিছু পরিবর্তন এনেছে। সংশোধিত নিয়ম অনুযায়ী, ভিসা ইস্যু হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে যদি কোনো হজযাত্রী সৌদি আরবে প্রবেশ করতে নাম নথিভুক্ত না করেন, তবে তাঁর ওমরাহ ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই নতুন নিয়মাবলি আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে।
ন্যাশনাল কমিটি ফর ওমরাহ অ্যান্ড ভিজিটের উপদেষ্টা আহমেদ বাজাইফার বলেছেন, ওমরাহ হজযাত্রীদের প্রত্যাশিত ভিড় সামলানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুম শেষ হওয়া এবং মক্কা ও মদিনায় তাপমাত্রা কমার পর ওমরাহ যাত্রীদের ভিড় বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনপবিত্র ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের জন্য সুখবর দিল সৌদি আরব০৮ অক্টোবর ২০২৫উপদেষ্টা বাজাইফার বলেন, নতুন এ সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হলো এই দুটি পবিত্র শহরে অতিরিক্ত ভিড় এড়ানো।
এর আগে হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় সুখবর দিয়ে জানিয়েছিল, সৌদি আরবে অবস্থানকালে যেকোনো ধরনের ভিসাধারী একজন মুসল্লি পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ই–ট্যুরিস্ট, ট্রানজিট, শ্রম ও অন্যান্য ভিসাসহ সব ধরনের ভিসাধারীই ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে নতুন এ সুবিধার আওতায় আসবেন। তবে নতুন নিয়ম ঘোষণার পর ওই সিদ্ধান্তের কী হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
আরও পড়ুনকখন হজ করবেন, কখন ওমরাহ করবেন২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মণিপুরে আশ্রয়শিবির বন্ধে সরকারের পরিকল্পনায় দুশ্চিন্তায় গৃহহীন মানুষ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই বছর আগে সংঘটিত জাতিগত সংঘাতের কারণে স্থায়ীভাবে গৃহহীন হওয়া হাজার হাজার মানুষের জীবন এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে। কারণ, রাজ্য সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব অস্থায়ী আশ্রয়শিবির বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
২০২৩ সালের মে মাসে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতেই ও আদিবাদী খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংঘাত শুরু হয়। এটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা।
মেইতেই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি লাভের দাবি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এতে তারা কুকিদের মতো কোটাসহ বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা লাভ করবে। অন্যদিকে মেইতেই সম্প্রদায়ের এ দাবির জোরালো বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে কুকি সম্প্রদায়। ওই বিক্ষোভ থেকেই সহিংসতা দানা বাঁধে। এতে দুই বছরে প্রায় ২৬০ জন নিহত এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করতে বাধ্য হন।
গত দুই বছরে সরকার বারবার গৃহহীনদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বাস্তবে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বললেই চলে। ঘর এবং স্থায়ী আয় না থাকায় বেশির ভাগ মানুষের জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
মণিপুরে জাতিগত বিভাজন এখনো তীব্র। মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা ইম্ফল ভ্যালিতে বসবাস করছে, আর কুকিরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়। নিরাপত্তা বাহিনী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার জোনে টহল চালাচ্ছে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বললেন, তাঁর কাজ হলো মেইতেই ও কুকিদের আলাদা রাখা এবং মিশতে না দেওয়া।জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে, যখন রাজ্যের তখনকার চিফ সেক্রেটারি প্রশান্ত সিং ঘোষণা করেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব আশ্রয়শিবির বন্ধ করা হবে এবং বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা হবে। যারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে না, তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে।
সংঘাত শুরুর পর সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর সফরে যান। তিনি ঘোষণা করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত স্থানে সাত হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। তবে তিনি এর বেশি বিস্তারিত তথ্য দেননি।
তবে মণিপুরে জাতিগত বিভাজন এখনো তীব্র। মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা ইম্ফল ভ্যালিতে বসবাস করছে, আর কুকিরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়। নিরাপত্তা বাহিনী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার জোনে টহল চালাচ্ছে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বললেন, তাঁর কাজ হলো মেইতেই ও কুকিদের আলাদা রাখা এবং মিশতে না দেওয়া।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গৃহহীনদের তাঁদের নিজেদের এলাকায় পুনর্বাসন করা অপরিহার্য, যাতে হিংসার কারণে মণিপুরের সামাজিক মানচিত্র বদলে না যায়।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গৃহহীন মানুষকে তাদের নিজেদের এলাকায় পুনর্বাসন করা অপরিহার্য, যাতে হিংসার কারণে মণিপুরের সামাজিক মানচিত্র বদলে না যায়।
মণিপুর গভর্নরের সচিব আর কে নিমাই সিং বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য এটি ভালো নয়। মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে পুনর্বাসন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিমাই সিং আরও বলেন, অনেক গৃহহীন মানুষের আশঙ্কা, একবার আশ্রয়শিবির ছেড়ে অস্থায়ী বাড়িতে গেলে তারা হয়তো আর কখনোই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবে না।
আরও পড়ুনমণিপুরে কী ঘটছে, এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪হাটনু হাওকিপের জন্য এটি একটি ভয়ানক চিন্তার বিষয়। ২২ বছর বয়সী এই কুকি তরুণী চুড়া চাঁদপুর অঞ্চলের আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে বাড়ি মানে ইম্ফল, আর কিছু না। তবে তাঁর গ্রাম এখনো মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেদের দখলে। কুকি সম্প্রদায়ের নেতাদের একটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত এলাকা প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা দিলে তিনি হয়তো আরও নিরাপদ বোধ করতেন।
দীর্ঘদিন ধরে গৃহহীন থাকা এবং তীব্র অনিশ্চয়তা আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত বহু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। শিবিরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাচ্ছে না।অনেক কুকি বাসিন্দা একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তাঁদের এলাকায় ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় বেশির ভাগ মেইতেই জানিয়েছেন, তাঁরাও বাড়ি ফিরতে চান।
আরও পড়ুনআবার উত্তাল মণিপুর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চাপে প্রশাসন০৯ জুন ২০২৫নতুন বাড়িগুলো কোথায় তৈরি হবে—এ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সাধারণ মানুষের অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, সরকার আদৌ ডিসেম্বরের মধ্যে সব আশ্রয়শিবির বন্ধ করতে পারবে কি না।
গত বছর মণিপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর বহু পরিবার নিজেদের গ্রাম ও শহর ছেড়ে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেয়। এসব শিবিরে এখনো হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আবাসন প্রকল্পে বিলম্ব, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনমণিপুরের মুসলমানদের কথা কেউ ভাবছে কি০৫ অক্টোবর ২০২৩তবু সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ‘পুনর্বাসন পরিকল্পনা এখনো সঠিক পথে আছে এবং ধীরে ধীরে তা এগোচ্ছে।’ মণিপুরের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে প্রায় ২৯০টি আশ্রয়শিবির ছিল। এখন আমরা সংখ্যাটা কমিয়ে প্রায় ২৬০টিতে আনতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ধীরে ধীরে এই সংখ্যাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।’
দীর্ঘদিন ধরে গৃহহীন থাকা এবং তীব্র অনিশ্চয়তা আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত বহু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। শিবিরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
২৫ বছর বয়সী সালাম মনিকা বলেন, ‘আমার চাচা গত বছর আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, উপার্জন না থাকায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর পরিবার যথাযথ চিকিৎসার সুযোগও পাননি।’
 মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা