ফ্রান্সের ল্যুভর জাদুঘর থেকে চোরের দল ধনসম্পদ নিয়ে পালানোর এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এটি ছিল এমন এক পরিকল্পিত চুরি, যেখানে দলটির সদস্যরা জাদুঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থার ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা পুলিশকেও খুব দক্ষভাবে ফাঁকি দিয়েছে।

১৯ অক্টোবর সকালে ল্যুভরে ঢোকার তৃতীয় লাইনে ছিলেন হলি বার্কার ও তাঁর স্বামী জেক।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিস থেকে আসা এই দম্পতির পরিকল্পনা ছিল, ভিড় হওয়ার আগে সোজা ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্মের কাছে যাওয়া, তারপর দেলাক্রোয়াক্সের ‘লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল’ ও জ্যাক-লুই ডেভিডের আঁকা নেপোলিয়নের বিখ্যাত একটি চিত্রকর্মের দিকে ছুটে যাওয়া।

এই দম্পতির চতুর্থ দেখার জায়গায় ছিল এমন একটি স্থান, যাকে তারা ভার্সাই প্রাসাদের ‘হল অব মিররস’-এর ছোট সংস্করণ হিসেবে শুনেছিলেন, যেটা অ্যাপোলো গ্যালারি। সেখানে রাজকীয় গয়নার সংগ্রহ রয়েছে।

সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে মিসেস বার্কার অ্যাপোলো গ্যালারির হলটিতে ঢুকে একটি ছবি তোলেন। নেপোলিয়ন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন ৩২টি পান্না আর ১ হাজার ১০০টির বেশি হীরায় ঝলমল করা হার। সেই হার দেখে তাঁরা যখন মুগ্ধ হচ্ছিলেন, তখন তিনি তিনটি জোরালো শব্দের প্রথমটি শুনতে পান। তখন সময় ৯টা ৩৪ মিনিট। তখন মুখোশধারী চোরের দল জানালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছিল।

বার্কারের স্বামীর মতে, ঘরের সবাই থমকে যায়—মুহূর্তের বিভ্রান্তি। সবাই একে অপরের চোখে চোখ রাখেন। তারপর ব্যালকনির দিক থেকে কর্কশ শব্দ শোনা যায়। চোরের দল এমন একটি ডিস্ক গ্রাইন্ডার চালু করে, যা দিয়ে গুলি-প্রতিরোধী কাচও কাটা যায়।

বার্কার বলেন, এ সময় অ্যাটেনডেন্ট উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, সবাই বেরিয়ে যান।

বার্কার একজন মিডল-স্কুলশিক্ষিকা। তিনি এত সক্রিয়-শুটার মহড়ায় অংশ নিয়েছেন যে তাঁর মনে হয়েছিল এটি সন্ত্রাসী হামলা।

বার্কার ও তাঁর স্বামী হাতে হাত রেখে প্রায় ২০ জন দর্শনার্থীর সঙ্গে গ্যালারি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। মাত্র একবার পেছনে তাকিয়ে ছিলেন। একই অ্যাটেনডেন্ট দরজা টেনে বন্ধ করতে করতে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘সবাই দৌড়ান’।

প্রায় ৯০ মিনিট পর বার্কার দম্পতি জানতে পারেন, ১৯১১ সালে ‘মোনালিসা’ চুরির পর বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুঘরে সংঘটিত সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন তাঁরা।

ল্যুভর জাদুঘরের সামনে গাড়ি পার্ক করে পুলিশের কঠোর পাহারা। ২৭ অক্টোবর ২০২৫, প্যারিস.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল য ভর জ দ ঘর

এছাড়াও পড়ুন:

জয় যেন হাতছাড়া না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে তিন দিনের এই আয়োজন। শেষ দিনের আয়োজনে বক্তরা বলেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে বারবার জয় পেলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

এবার উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন হয়েছে দুই অংশে ভাগ হয়ে। আজ বিকেলে আয়োজিত হয় কেন্দ্রীয় সংসদের আলোচনা পর্ব এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।

শুরুতে জাতীয় পতাকা ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের পর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন উদীচীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্মরণ করা হয় সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, কলিম শরাফী, গোলাম মোহাম্মদ ইদু, কামাল লোহানী, পান্না কায়সার, যতীন সরকার ও বদিউর রহমানকে।

আজকের আয়োজনে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ৫৬ বছর ধরে মুক্তির ব্রত নিয়ে উদীচী কাজ করছে। হতাশা, নিরাশা আর সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্তিই উদীচীর চাওয়া। এ সময় সাবেক সংগঠক মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, আদর্শচ্যুতি হলে ঐক্য হয় না। উদীচীতে পারস্পরিক সংকট সব সময়ই ছিল। কিন্তু উদীচী কখনো রাজনৈতিক সংগঠন হয়নি।

উদীচীর সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারীর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৬৮ সালে একজন শিল্পীর নারিন্দার বাসায় উদীচী শুরু হওয়ার স্মৃতিকথা। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদীচীর কার্যক্রম আরও বেগবান করা প্রয়োজন। সত্যেন সেনের গানের কথা উল্লেখ করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

আয়োজনে উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানাসহ অন্য বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে উদীচী। যখনই দেশে কোনো সংকট দেখা দেয়, তখনই উদীচী আলোকবর্তিকা হয়ে মানুষকে পথ দেখানোর চেষ্টা করে। মানুষ বারবার আন্দোলন করে আত্মাহুতি দিয়ে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বারবারই সে জয় হাতছাড়া হয়ে যায়। এই জয় যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আলোচনা পর্ব সমাপ্ত করেন উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশটি সাম্প্রদায়িক করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু গোটা উপমহাদেশের ঐতিহ্য হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। সেই ঐতিহ্য এখন নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে—বিশেষ “মব” তৈরি করে।’ আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।

‘ঘোর আঁধারে পথ দেখাবে আগুনের নিশান’ স্লোগানে উদীচীর একাংশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী আয়োজন শুরু হয় ২৯ অক্টোবর। ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ে উদীচী’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠের পর সেদিন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাজধানীর ডিআরইউতে। একই দিনে আরেক অংশের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তাদের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রগতির পথে জীবনের গান’। দেশে ও বিদেশে উদীচীর সাড়ে তিন শতাধিক জেলা ও শাখা সংসদে এবার একযোগে উদ্‌যাপন করেছে ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ