পরিচালকদের কাজের বছরভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে
Published: 31st, October 2025 GMT
এখন থেকে সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বছরভিত্তিক পারফরম্যান্স (কর্ম কৃতি) মূল্যায়ন করবে সরকার। সক্ষমতা বাড়াতে তাঁদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। তাঁদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া আর্থিক ও নৈতিকতার বিষয় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তাঁদের বয়স হবে ৪৫ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালাটির নাম ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৫।’ এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল জারি হওয়া এ-সংক্রান্ত নীতিমালা বাতিল করা হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা, পর্ষদের পেশাদারি নিশ্চিতকরণ এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্র খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের মালিকানা (শেয়ার) রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬টি। এসব প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের জন্যই প্রযোজ্য এ নীতিমালা।
এত দিন যে নীতিমালা ছিল, তাতে ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা অংশ নিতে পারবেন না, এমন কথা বলা ছিল না। তবে চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের কর্মপরিধিবিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছিল। এবার নীতিমালায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
নতুন নীতিমালায় কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে বুঝতে পারছি। আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালা করলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।হেলাল আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বেসিক ব্যাংকনতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি ও করখেলাপি হলে এবং ১০ বছরের প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা বা পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউই ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য হতে পারবেন না। ফৌজদারি অপরাধ বা জালজালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন, এমন কেউ পর্ষদ সদস্য হতে পারবেন না।
এ ছাড়া দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকলে এবং আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার বিধিমালা, প্রবিধান বা নিয়মাচার লঙ্ঘন করে দণ্ডিত হলেও পর্ষদ সদস্য হওয়া যাবে না। একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে কেউ অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।
নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বাছাই কমিটি নাম চূড়ান্ত করবে। চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা। তবে পরিচালক নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা।
২০০৯ সালে থেকে খেয়ালখুশিমতো পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদে বসানোর উদাহরণ তৈরি করা হয়েছিল।
তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া এসব পরিচালকের অনেকেরই দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের অভাব ছিল বলে সমালোচনা রয়েছে। সমালোচনার পরও আওয়ামী লীগ সরকার একইভাবে একই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর ২০০৯-১২ সময়ের অপকর্ম ধরা পড়ার পরও ২০১২ সালে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া যার অন্যতম উদাহরণ।
তবে ২০১৪ সাল থেকে পরিচালক নিয়োগের জন্য লোক বাছাই করে ব্যাংকগুলোর পর্ষদের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু এর পর থেকে বেশির ভাগ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল দলীয় আনুগত্য পোষণকারী সাবেক আমলাদের। সমানতালে চলতে থাকে শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়াও।
নতুন নীতিমালায় সনদপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক (সিএ), সাবেক জেলা জজ বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সাবেক একজন ব্যাংকার নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পর্ষদে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার বিষয় বিবেচনা করা হবে। ২০২৪ সালের নীতিমালায়ও এ কথা বলা ছিল।
জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে বুঝতে পারছি। আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালা করলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ন ত ম ল য় পর চ লকদ র ও আর থ ক প রব ন ন র জন য সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরিচালকদের কাজের বছরভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে
এখন থেকে সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের বছরভিত্তিক পারফরম্যান্স (কর্ম কৃতি) মূল্যায়ন করবে সরকার। সক্ষমতা বাড়াতে তাঁদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। তাঁদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালারও আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া আর্থিক ও নৈতিকতার বিষয় যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজে অংশ নিতে পারবেন না। তাঁদের বয়স হবে ৪৫ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছে। নীতিমালাটির নাম ‘রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা, ২০২৫।’ এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল জারি হওয়া এ-সংক্রান্ত নীতিমালা বাতিল করা হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা, পর্ষদের পেশাদারি নিশ্চিতকরণ এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্র খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের মালিকানা (শেয়ার) রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬টি। এসব প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের জন্যই প্রযোজ্য এ নীতিমালা।
এত দিন যে নীতিমালা ছিল, তাতে ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা অংশ নিতে পারবেন না, এমন কথা বলা ছিল না। তবে চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের কর্মপরিধিবিষয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছিল। এবার নীতিমালায়ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
নতুন নীতিমালায় কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে বুঝতে পারছি। আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালা করলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।হেলাল আহমেদ চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বেসিক ব্যাংকনতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি ও করখেলাপি হলে এবং ১০ বছরের প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা বা পেশাগত অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউই ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য হতে পারবেন না। ফৌজদারি অপরাধ বা জালজালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন, এমন কেউ পর্ষদ সদস্য হতে পারবেন না।
এ ছাড়া দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় আদালতের রায়ে বিরূপ পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য থাকলে এবং আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার বিধিমালা, প্রবিধান বা নিয়মাচার লঙ্ঘন করে দণ্ডিত হলেও পর্ষদ সদস্য হওয়া যাবে না। একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে কেউ অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।
নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বাছাই কমিটি নাম চূড়ান্ত করবে। চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা। তবে পরিচালক নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা।
২০০৯ সালে থেকে খেয়ালখুশিমতো পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ সরকার। বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদে বসানোর উদাহরণ তৈরি করা হয়েছিল।
তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া এসব পরিচালকের অনেকেরই দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের অভাব ছিল বলে সমালোচনা রয়েছে। সমালোচনার পরও আওয়ামী লীগ সরকার একইভাবে একই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর ২০০৯-১২ সময়ের অপকর্ম ধরা পড়ার পরও ২০১২ সালে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া যার অন্যতম উদাহরণ।
তবে ২০১৪ সাল থেকে পরিচালক নিয়োগের জন্য লোক বাছাই করে ব্যাংকগুলোর পর্ষদের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কিন্তু এর পর থেকে বেশির ভাগ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল দলীয় আনুগত্য পোষণকারী সাবেক আমলাদের। সমানতালে চলতে থাকে শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়াও।
নতুন নীতিমালায় সনদপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক (সিএ), সাবেক জেলা জজ বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সাবেক একজন ব্যাংকার নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পর্ষদে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার বিষয় বিবেচনা করা হবে। ২০২৪ সালের নীতিমালায়ও এ কথা বলা ছিল।
জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় কিছু বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে বুঝতে পারছি। আমরা একে স্বাগত জানাই। তবে নীতিমালা করলেই হবে না, এর বাস্তবায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
 মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা