ক্রিকেট সুন্দর লাগে জেমাইমাদের প্রেমে পড়লে
Published: 31st, October 2025 GMT
ক্রিকেট সুন্দর। এই সৌন্দর্যের সঠিক ব্যাখ্যা হয় না। ঠিক যেভাবে বুকের ভেতরে শান্তি শান্তি ভাবটা ভাষায় পুরোপুরি প্রকাশ করা যায় না, তেমনি সেই শান্তি কখনো কখনো জলের আকৃতি নিয়ে চোখ বেয়ে নেমে এলে তাঁর চেয়ে সুন্দর দৃশ্যও বোধহয় আর হয় না। অথচ কান্না ব্যাপারটাই নাকি দুঃখের। কিন্তু কাল রাতে জেমাইমা রদ্রিগেজের চোখে চোখ রাখলে আপনি টের পাবেন, পৃথিবীতে এমন সব সুখের কান্না আছে যা দীঘির টলটলে জলের চেয়েও সুন্দর। কেমন শান্তি শান্তি লাগে। মনে হতে পারে জেমাইমারা আছেন বলেই ক্রিকেট সুন্দর।
কিন্তু এই সুন্দরের আসলেই কোনো ব্যাখ্যা হয় না। যেমন হয় না ওয়ানডেতে ৫১টি সেঞ্চুরি করা বিরাট কোহলি যখন টানা দুই শূন্যের পর এক রান করে ব্যাট তোলেন—সেই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা। ১৪১ কিলোমিটার গতির ইয়র্কারের আঘাতে হাঁটতে না পারা শামার জোসেফ যখন ৭ উইকেট নিয়ে দলকে জেতান তখন সেই সৌন্দর্যকে কি বলবেন? রক্তাক্ত আঙুলে তানপুরায় তোলা সুর? তবু কি এতটুকু বলে আঁশ মেটে? রেশ থেকে যাওয়া সেই চিরকালীন অতৃপ্তিটুকুর জন্যই ভেতরে ভেতরে প্রচুর বদহজমের শিকার হয়েও মনে হতে পারে ক্রিকেটকে ভালোবেসে আপনি ভুল করেননি।
অতি ক্রিকেটের বদহজমএত ভালোবাসার ক্রিকেট আসলে ভুগছে বদহজমে। কারণ অতিশয় মাত্রার ক্রিকেট। ভুল করেও টেলিভিশন চ্যানেল পরিবর্তন করলে খেলা চলে আসে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের যেন কোনো শেষ নেই!  বিগ ব্যাশ, বিপিএল শেষে আইপিএল, পিএসএল। এরপর জিএসএল থেকে সিপিএল, এমএলসি আরও কত কী। এত কিছু দেখার পর আবার শুনতে হয়, আসছে ইন্ডিয়ান হ্যাভেন লিগ! সেখানে আবার খেলবেন সাকিব আল হাসান। চোখ না রেখে উপায় কী! সব মিলিয়ে আপনার পরম ভালোবাসার এই খেলাটা এত বেশি হচ্ছে যে কখনো কখনো বদহজমও হচ্ছে। কারণটা আপনি খুঁজে নিতে পারেন ‘শিকাগো’ ব্যান্ডের গানের দু–একট লাইনে, ‘এভরিবডি নিডস অ্যা লিটল টাইম অ্যাওয়ে.                
      
				
বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমী হলে সমবেদনা, সহমর্মিতা এবং এমন আরও যা যা শব্দ আছে তার সবই আপনার জন্য। কারণ আপনি জানেন প্রেম যত গভীরই হোক ছ্যাঁকা খেতেই হবে! নষ্টালজিক হলে তো কথাই নেই। কারণ পৃথিবী সামনে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কখনো কখনো আপনাকে ফেলে আসা পথে হাঁটাবে। ভুল করে ভেবে বসতে হয়, কী রে এটা ২০০৫ সাল না তো!
মিরপুরের কালো মাটিতে কিছুদিন আগে শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজের কথা ধরুন। প্রথম দুই ওয়ানডেতে যেভাবে ৩০-৩২ ওভারে দুই দল কষ্ট করে ১০০ রান তুলল, তা অনেককেই ২০-৩০ বছর আগের ক্রিকেটে ফিরিয়ে নিয়েছে। কিংবা চলমান টি–টোয়েন্টি সিরিজ—যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যেভাবে ১৫০ রান করতে ব্যর্থ হলো তাতে ভেবে অবাক লাগতে পারে যে সালটা ২০২৫! এখন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই ১০ ওভারে ১৫০ রান দেখা যায়।
কিন্তু ভালোবাসা অন্ধ। বাংলাদেশের খুব জনপ্রিয় এক সিনেমার একটি গানের লাইনই সেই সাক্ষ্য দেয়, ‘ভালোবাসা অন্ধ এ কথাই বলে সবাই/আমি নিজেকে অন্ধ করে সারাটা জীবন ধরে/তোমার... ঘরে রয়ে যেতে চাই।’ আপনি কিংবা আমরা হয়তো এভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘরে থেকে যেতে চাই, তাতে ঘরের চাল–বেড়া থাকুক বা না থাকুক। কারণ দলকে ভালোবাসেন। ক্রিকেটারদের প্রতিও ভালোবাসাটা নিঃশর্ত। আর খেলোয়াড়দের ভুল–ভাল শট খেলায় মনে ঝড় উঠলেও দলা দলা কষ্টগুলো বেরিয়ে আসে খুব কমই।
তবে কষ্ট ভোলার পথও আছে। সেটা ভিন্নপথ। ধরুন বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো আম্পায়ার যদি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েই ফেলেন, তাহলেই কেল্লাফতে! কমপক্ষে ৫ বছর এই অজুহাতে চলা যায়।বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে ঘটলে বছরসংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রতিটি ম্যাচই যে নতুন, ওসব কে ভাবে! কথার শুরুই হতে পারে এভাবে, ‘আরে, সেই দিন যদি আম্পায়ার....!’ কিন্তু অজুহাতের পর অজুহাতে যখন মনের সিলিং ছুঁয়ে যায় তখন ক্লান্ত লাগে। তখন কি ক্রিকেট আর ভালো লাগে? লাগে না।
হঠাৎ একদিন...ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের ২৯২ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৯২ রানেই ৭ উইকেট পড়বে। মাংসপেশিতে টান লেগে হাঁটতে না পারা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সেখান থেকে এক পায়ে দাঁড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে দলকে জেতাবেন। ১০ ছক্কা ও ২১ চারে ১২৮ বলে ২০১ রান করে অকল্পনীয় সব ব্যাপার ঘটাবেন অবলীলায়। আর তাই দেখে আপনি বলতে বাধ্য হবেন, ‘ক্রিকেট, ইউ ব্লাডি বিউটিফুল!’
আপনি আরও দেখবেন ব্রিসবেনে শামার জোসেফের উত্থান। মিচেল স্টার্কের গোলার আঘাতে জোসেফ মাঠ ছাড়বেন দুজনের কাঁধে ভর করে। ব্রিসবেন টেস্টে কি তিনি আর খেলবেন? প্রশ্নই আসে না। তাতে স্টার্কের ঘণ্টায় ১৪১ কিলোমিটারের ‘গোলা’র মান থাকে।
কিন্তু জোসেফ মাঠে ফিরবেন। যেখানে সংশয় থাকবে একটা বলও করতে পারবেন কি না, জোসেফ সেখানে করবেন টানা ১১.৫ ওভার। ফল? ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর জয় এনে দেবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আপনি আবারও বলতে বাধ্য হবেন, ‘ক্রিকেট—তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না!’
পারবেন কীভাবে? কারণ বিরাট কোহলিদের মতো মানুষেরা যে এই খেলাটা খেলেন। কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন ২২৩ দিন পর। ফেরার পর প্রথম দু্ই ম্যাচেই করবেন শূন্য। তৃতীয় ম্যাচে এক রান করতেই সিডনি স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকেরা দাঁড়িয়ে করতালি দেবেন। কোহলিও তুলবেন ব্যাট। আহ, ৫১ সেঞ্চুরি করা এক ক্রিকেটারের কাছেও একটা রানের কী মর্যাদা! সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি শিখবেন, জীবনে যত বড় মহীরুহই হয়ে উঠুন না কেন, একটু খারাপ সময়ে খুব ছোট ছোট সাফল্যও আসলে কত মূল্যবান!
তারপর একদিন আপনার জীবনে প্রেম আসতে পারে। সেই প্রেমের নাম হতে পারে জেমাইমা রদ্রিগেজ। পাশের দেশের এই মেয়েটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রানের পাহাড় টপকে যাবেন অবিশ্বাস্য সেঞ্চুরিতে। আপনি দু চোখে মায়াঞ্জন মেখে দেখবেন, যে দলটি বিশ্বকাপে এর আগে (নারী) বিশ্বকাপে কখনো ২০০ রানও তাড়া করে জিততে পারেনি, সেই দলটাই কেমন ‘দৈত্য সংহার’ করল এক অভয়ার কঠিন–কোমল হাতে!
আপনি টিভিতে দেখবেন, নিজের দেশের হাজারো সমর্থকের সামনে ওইরকম এক কাণ্ড ঘটিয়ে মেয়েটি কেমন কেঁদে ফেলল। গ্যালারিতে তাঁর বাবা–মায়ের চোখেও জল। আর আপনার? চোখে হয়তো কিছু পড়তে পারে, কে জানে! তবে ততক্ষণে আপনি বুঝে গেছেন, এই এমন অবিশ্বাস্য সব খেলোয়াড় গোটা পৃথিবীজুড়ে—তাদেরকে ভালোবাসাটাই আসলে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা।
জেমাইমার নিবেদন ছিল তাঁর দলের প্রতি,আর আপনার ক্রিকেটের প্রতি। জেমাইমার ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়না, আর আপনি চেয়েছিলেন প্রায় প্রতিদিনই হেরে যাওয়ার জীবনে কাউকে দেখে একটু পিঠ সোজা করে বাঁচার চেষ্টা করা। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠার পর কেমন লাগে সেটাও আপনি জেনে নিতে পারেন ভারতকে ফাইনালে তোলার পর জেমাইমার কথা শুনে, ‘আমি আমার মা, বাবা, কোচ এবং প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। গত একটি মাস সত্যিই খুব কঠিন ছিল; মনে হচ্ছে যেন একটা স্বপ্ন, এখনো পুরোটা বুঝে উঠতে পারছি না।’
জেমাইমা বলে যাবেন আর আপনি শুনবেন তন্ময় হয়ে, ‘গত বছর আমাকে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। একের পর এক ঘটনা ঘটছিল, কিছুই আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এই সফরে প্রায় প্রতিদিনই কেঁদেছি। মানসিকভাবে ভালো ছিলাম না। কিন্তু জানতাম আমাকে মাঠে নামতেই হবে বাকিটা সৃষ্টিকর্তা সামলে নিয়েছেন।’
জেমাইমা কথাগুলো বলার পর আপনি হঠাৎ টের পেতে পারেন, আরে ক্রিকেট তো আসলে জীবনেরই প্রতিরুপ। আপনি চেষ্টা না করলে যেমন ভাগ্যকে (সৃষ্টিকর্তা) পাশে পাবেন না, ক্রিকেটেও ঠিক তাই। পেছনে ফেলে আসা পথে স্টার্ক, জোসেফ, কোহলি ও জেমাইমাদের ঘটনাগুলো ঠিক এই শিক্ষাই দেয়। তাহলে বলুন তো, ক্রিকেটকে ভালো না বেসে, জেমাইমাদের প্রেমে না পড়ে উপায় আছে!
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ই স ন দর ব শ বক প আর আপন র ন কর আপন র র আপন
এছাড়াও পড়ুন:
মণিপুরে আশ্রয়শিবির বন্ধে সরকারের পরিকল্পনায় দুশ্চিন্তায় গৃহহীন মানুষ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে দুই বছর আগে সংঘটিত জাতিগত সংঘাতের কারণে স্থায়ীভাবে গৃহহীন হওয়া হাজার হাজার মানুষের জীবন এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে। কারণ, রাজ্য সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব অস্থায়ী আশ্রয়শিবির বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
২০২৩ সালের মে মাসে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতেই ও আদিবাদী খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংঘাত শুরু হয়। এটি ছিল গত কয়েক দশকের মধ্যে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা।
মেইতেই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি লাভের দাবি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এতে তারা কুকিদের মতো কোটাসহ বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা লাভ করবে। অন্যদিকে মেইতেই সম্প্রদায়ের এ দাবির জোরালো বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে কুকি সম্প্রদায়। ওই বিক্ষোভ থেকেই সহিংসতা দানা বাঁধে। এতে দুই বছরে প্রায় ২৬০ জন নিহত এবং প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করতে বাধ্য হন।
গত দুই বছরে সরকার বারবার গৃহহীনদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বাস্তবে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বললেই চলে। ঘর এবং স্থায়ী আয় না থাকায় বেশির ভাগ মানুষের জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
মণিপুরে জাতিগত বিভাজন এখনো তীব্র। মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা ইম্ফল ভ্যালিতে বসবাস করছে, আর কুকিরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়। নিরাপত্তা বাহিনী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার জোনে টহল চালাচ্ছে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বললেন, তাঁর কাজ হলো মেইতেই ও কুকিদের আলাদা রাখা এবং মিশতে না দেওয়া।জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে, যখন রাজ্যের তখনকার চিফ সেক্রেটারি প্রশান্ত সিং ঘোষণা করেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব আশ্রয়শিবির বন্ধ করা হবে এবং বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা হবে। যারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে না, তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে।
সংঘাত শুরুর পর সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর সফরে যান। তিনি ঘোষণা করেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত স্থানে সাত হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। তবে তিনি এর বেশি বিস্তারিত তথ্য দেননি।
তবে মণিপুরে জাতিগত বিভাজন এখনো তীব্র। মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেরা ইম্ফল ভ্যালিতে বসবাস করছে, আর কুকিরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায়। নিরাপত্তা বাহিনী দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার জোনে টহল চালাচ্ছে। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বললেন, তাঁর কাজ হলো মেইতেই ও কুকিদের আলাদা রাখা এবং মিশতে না দেওয়া।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গৃহহীনদের তাঁদের নিজেদের এলাকায় পুনর্বাসন করা অপরিহার্য, যাতে হিংসার কারণে মণিপুরের সামাজিক মানচিত্র বদলে না যায়।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গৃহহীন মানুষকে তাদের নিজেদের এলাকায় পুনর্বাসন করা অপরিহার্য, যাতে হিংসার কারণে মণিপুরের সামাজিক মানচিত্র বদলে না যায়।
মণিপুর গভর্নরের সচিব আর কে নিমাই সিং বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতের জন্য এটি ভালো নয়। মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে পুনর্বাসন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিমাই সিং আরও বলেন, অনেক গৃহহীন মানুষের আশঙ্কা, একবার আশ্রয়শিবির ছেড়ে অস্থায়ী বাড়িতে গেলে তারা হয়তো আর কখনোই নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবে না।
আরও পড়ুনমণিপুরে কী ঘটছে, এত অস্ত্র আসছে কোথা থেকে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪হাটনু হাওকিপের জন্য এটি একটি ভয়ানক চিন্তার বিষয়। ২২ বছর বয়সী এই কুকি তরুণী চুড়া চাঁদপুর অঞ্চলের আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে বাড়ি মানে ইম্ফল, আর কিছু না। তবে তাঁর গ্রাম এখনো মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকেদের দখলে। কুকি সম্প্রদায়ের নেতাদের একটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত এলাকা প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা দিলে তিনি হয়তো আরও নিরাপদ বোধ করতেন।
দীর্ঘদিন ধরে গৃহহীন থাকা এবং তীব্র অনিশ্চয়তা আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত বহু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। শিবিরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাচ্ছে না।অনেক কুকি বাসিন্দা একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তাঁদের এলাকায় ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় বেশির ভাগ মেইতেই জানিয়েছেন, তাঁরাও বাড়ি ফিরতে চান।
আরও পড়ুনআবার উত্তাল মণিপুর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চাপে প্রশাসন০৯ জুন ২০২৫নতুন বাড়িগুলো কোথায় তৈরি হবে—এ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সাধারণ মানুষের অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, সরকার আদৌ ডিসেম্বরের মধ্যে সব আশ্রয়শিবির বন্ধ করতে পারবে কি না।
গত বছর মণিপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর বহু পরিবার নিজেদের গ্রাম ও শহর ছেড়ে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেয়। এসব শিবিরে এখনো হাজার হাজার গৃহহীন মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আবাসন প্রকল্পে বিলম্ব, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনমণিপুরের মুসলমানদের কথা কেউ ভাবছে কি০৫ অক্টোবর ২০২৩তবু সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ‘পুনর্বাসন পরিকল্পনা এখনো সঠিক পথে আছে এবং ধীরে ধীরে তা এগোচ্ছে।’ মণিপুরের এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে প্রায় ২৯০টি আশ্রয়শিবির ছিল। এখন আমরা সংখ্যাটা কমিয়ে প্রায় ২৬০টিতে আনতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ধীরে ধীরে এই সংখ্যাকে শূন্যে নামিয়ে আনা।’
দীর্ঘদিন ধরে গৃহহীন থাকা এবং তীব্র অনিশ্চয়তা আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত বহু মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলছে। শিবিরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
২৫ বছর বয়সী সালাম মনিকা বলেন, ‘আমার চাচা গত বছর আত্মহত্যা করেছেন। কারণ, উপার্জন না থাকায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর পরিবার যথাযথ চিকিৎসার সুযোগও পাননি।’
 মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা