ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে আর ফেরেননি, রাতে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
Published: 14th, January 2025 GMT
প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়েছিলেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী মো. শাকের আহমদ (৬০)। এরপর সারা দিনও তাঁর কোনো খোঁজ পাননি স্বজনেরা। রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ফোন করে জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। জীবিত ফিরে পেতে চাইলে দিতে হবে ৫০ লাখ টাকা।
গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের ঘোনারপাড়া থেকে নিখোঁজ হন শাকের আহমদ। তিনি ওই এলাকার মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
শাকের আহমদের স্বজনেরা জানান, গতকাল ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হয়ে শাকের আর ফিরে আসেননি। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর স্ত্রীর কাছে একটি অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে ফোন করে ৫০ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দাবি করা টাকা না পেলে শাকের আহমদকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন ওই ব্যক্তি।
অপহৃত শাকের আহমদ তিন বছর আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন। তাঁর এক ছেলে এখনো মালয়েশিয়ায় কর্মরত।
শাকের আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাবাকে অপহরণের বিষয়ে আমরা টেকনাফ থানা–পুলিশকে জানিয়েছি। তাঁকে উদ্ধারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সহযোগিতা চাই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। মুক্তিপণ দাবির বিষয়টিও তিনি শুনেছেন বলে জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফে পরপর বেশ কিছু অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টায় টেকনাফের বাহারছড়ার বড় ডেইলের বাসিন্দা জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে স্বজনেরা ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ৮ জানুয়ারি তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। তাঁর শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময় টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৯৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জবির বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ৮ বছর ধরে একই চেয়ারম্যান
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষক সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতা। এছাড়া গত ৮ বছর ধরে একই শিক্ষক বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা গত ৮ বছর ধরে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, যা ২০০৫ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৪(২) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আইন অনুযায়ী, বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে পালাক্রমে ৩ বছরের জন্য চেয়ারম্যান নিযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করায় এর কার্যক্রম ও জবাবদিহিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া বিভাগটিতে বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে প্রায় ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক রয়েছেন মাত্র নয়জন, এর মধ্যে তিনজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ফলে মাত্র ছয়জন শিক্ষককে এই পুরো বিভাগ সামলাতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকদের বারবার শিক্ষা ছুটিতে যাওয়া পাঠদানের ধারাবাহিকতা ভেঙে দিচ্ছে এবং একাডেমিক সহায়তায় তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগে নেই সুনির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন বা একাডেমিক গাইডলাইন। ফলে সেশনজট তীব্র হয়ে উঠেছে। যেখানে অন্যান্য বিভাগে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরের শেষপ্রান্তে, সেখানে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেনি। এমনকি ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এখনও চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিভাগের সবচেয়ে বড় সমস্যা নেতৃত্বের অভাব। চেয়ারম্যান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় সময় দিতে পারেন না। পক্ষপাতমূলক আচরণও চোখে পড়ার মতো।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা বলেন, “আপনি আমাদের বিভাগের অফিসে কথা বলুন। সেখান থেকে সব জানতে পারবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদন পেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
অধ্যাপক ড. লাইসা আহমদ লিসা স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সহ-সভাপতি এবং খ্যাতিমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। তিনি ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক, আনন্দধ্বনীর সদস্য এবং জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (২০০৭) এবং বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (২০২৪) লাভ করেছেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী