সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
Published: 17th, January 2025 GMT
সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং ডি ফ্যাক্টো প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর দেশজুড়ে সংঘাতের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
আফ্রিকার এই দেশটি মূলত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দেশটির ডি ফ্যাক্টো শাসক আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের অধীনে থাকা সুদানের সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করছে।
অর্থাৎ দীর্ঘ ২১ মাসের এই গৃহযুদ্ধে দুই পক্ষের একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান। এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া রক্তক্ষয়ী এই সংঘাত দেশকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে “সুদানকে অস্থিতিশীল করার এবং একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যকে দুর্বল করার” জন্য জেনারেল বুরহানকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইরত আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)