নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বাগমারা বিলে এক সময় সারাবছরই বিভিন্ন ফসল আবাদ হতো। এখন সেখানে কোমর পর্যন্ত পানি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কোনো ফসল আবাদ হয় না। এতে সাধারণ কৃষকই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, প্রভাব পড়েছে গোটা এলাকায়।
তিন বছর আগে বাগমারা বিল-সংলগ্ন কালভার্টটির মুখ বন্ধ করে সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আড়াই শতাধিক বিঘা জমিতে ফসল আবাদ বন্ধ। ফলে প্রতিবছর লোকসান গুনতে হচ্ছে এলাকার কৃষকদের। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেও সমাধান মেলেনি। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে সড়ক নির্মাণ হলেও কর্মকর্তা দায় চাপান আগের কর্তার ওপর। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও নিবিড় তদারকি এবং সমন্বিত ত্বরিত পদক্ষেপে উদ্যোগ নেই।
ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই বছরে একাধিকবার কৃষকদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে আসছি। কয়েক দিন আগেও জলাবদ্ধতার ভিডিও করে তাঁকে দিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী নীতীশ কুমার বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে কোনো সুরাহা করা যায় কিনা চেষ্টা করে দেখা হবে।
একই কথা বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেন। তিনিও কয়েক মাস আগে যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, নানা ব্যস্ততার কারণে বিল এলাকায় যাওয়া হয়নি। সরেজমিন দেখে কালভার্ট নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিকাপুর ইউনিয়নের বাগমারা বিলের পানি নিষ্কাশনে উলাবাড়িয়া গ্রামে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এ কালভার্ট দিয়েই ধোপাখালি খাল ও ঝিয়ারী গ্রামের পাশ দিয়ে গোন্ড-গোহালিয়া হয়ে আত্রাই নদীতে নেমে যেত। বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টটি একসময় ভেঙে যায়। কিন্তু তা মেরামত না করে মাটি ভরাট করে মুখ বন্ধ করা হয়। পরে ইউনিয়নের কুশাতলা বাজার থেকে ঝিয়ারী গ্রাম অভিমুখে সড়ক পাকাকরণের কাজ শেষ করে। এ অবস্থায় বিল থেকে পানি নামতে না পেরে তিন বছর ধরে জলাবদ্ধ হয়ে আছে এলাকাটি। কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না কৃষকরা।
উলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক তুহিন হোসেন বলেন, এই বিল ঘিরে আছে বাগমারা, উলাবাড়িয়া, ঝিয়ারীগ্রাম, বামনিগ্রাম এবং ধনেশ্বরসহ কয়েকটি গ্রাম। আড়াইশ বিঘা জমিতে আগে ফসল আবাদ হতো। কালভার্ট বন্ধ হবার পর থেকে বিলের জমিগুলো পানির নিচে। কোনো ফসল ফলাতে পারছি না।
একই এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিলে আমার এক বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে চাষ করতে পারছি না। বিলের উপরিভাগে যে জমিগুলো রয়েছে, সেগুলোও কেউ চাষ করে না। কারণ, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিক লাগিয়ে ফসল আবাদ করলেও কোনো লাভ হয় না। এ অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়া কোনো পথ নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।
রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।
কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?
কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।
রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।
রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।
এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।
রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।