বাতিঘর ‘রিভিউ’ করা ছাড়া বই প্রকাশ করে না: দীপঙ্কর দাশ
Published: 24th, January 2025 GMT
বাতিঘর একদিকে প্রকাশনী সংস্থা অন্যদিকে বাংলাদেশের বই রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। দেশের চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট এবং রাজশাহীতে একাধিক শাখা রয়েছে এই প্রকাশনী সংস্থার। প্রতিটি শাখা লেখক-পাঠকদের মিলনমেলা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, পাঠচক্র ও আড্ডার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাতিঘরের শাখা প্রতিষ্ঠা হয়েছে কলকাতাতেও। বাতিঘরের প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ স্বপ্ন দেশের দেশের পাঠক সংখ্যা বাড়াতে কাজ করে যাবেন এবং বাতিঘর একটি মর্যাদা সম্পন্ন প্রকাশনী হিসেবে মান অক্ষুন্ন রাখবে। এই প্রকাশক মনে করেন পাঠক সংখ্যা বাড়ানো না গেলে বই সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। ২০২৫ বইমেলায় সর্বপ্রথম প্যাভেলিয়ন পেয়েছে বাতিঘর। এই প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। নতুন লেখকদের বই প্রকাশেও আন্তরিক ভূমিকা রাখতে চান দীপঙ্কর দাশ। বইয়ের প্রচার ও সম্প্রসারণে রয়েছে তার একান্ত ভাবনা।
দীপঙ্কর দাশ রাইজিংবিডিকে বলেন ‘‘আমাদের দেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ। কিন্তু রিডারশীপ অনেক কম। পাঁচ, সাত কোটি মানুষ বই পড়ে বা আরও কম সংখ্যক মানুষ বই কেনে। পাঠকের এই সংখ্যা যদি আরও বাড়াতে চাই তাহলে তাদের বই প্রাপ্তি ও পাঠের সুযোগটা দিতে হবে। সুযোগটা একদিন তৈরি হবে না, আস্তে আস্তে ‘রিডার্স সোসাইটি’ তৈরি করতে হবে। সেটা জরুরি। ‘আলটিমেটলি’ যদি আমরা পাঠক বাড়াতে না পারি তাহলে, বইয়ের চাহিদা বাড়াতে না পারি; তাহলে বই প্রসারের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না।’’
একটা ভালো বইয়ের খবর পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকাশনী সংস্থাগুলোর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?— এই প্রশ্নের জবাবে দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘‘শুধুমাত্র প্রকাশনী সংস্থা এটা পারবে না। মিডিয়া আছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে, অনেক ‘রিভিউ গ্রুপ’ আছে—এই সবগুলো মাধ্যম বইয়ের প্রকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের এখানে যদি কেউ পড়ে রিভিউ দেয় তাহলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তৈরি হয়। কারণ আরেকজন পাঠক সেটা বিশ্বাস করে। এ ছাড়া একটি বই নিয়ে পাঠচক্র হতে পারে। বইয়ের প্রচার শুধুমাত্র ‘পেইড’ বিজ্ঞাপন দিয়ে হয় না। আর প্রকাশনীর প্রধানতম কাজ হচ্ছে মানসম্মত বই প্রকাশ করা। পাণ্ডুলিপির ম্যারিট বিবেচনা, রিভিউ করা, ভালো সম্পাদনা করা এবং একটি পাণ্ডুলিপির সম্ভাবনা যাচাই করে প্রকাশক বই প্রকাশ করবেন।’’
বাতিঘর এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০-এর অধিক বই প্রকাশ করেছে। এই প্রকাশনী সংস্থার প্রকাশক বইয়ের প্রচারে ‘রিভিউ’ করাকে সবচেয়ে মানসম্মত উপায় হিসেবে দেখেন। তিনি মনে করেন, বই রিভিউ প্রকাশনী এবং পাঠক উভয় পক্ষ থেকে হলে ভালো। দীপঙ্কর দাশের ভাষ্য ‘‘ আমরা ‘জেনারেলি’ বই রিভিউ করি, বাতিঘর রিভিউ করা ছাড়া কোনো বই প্রকাশ করে না। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বাতিঘর অনেক সময় নেয়। আমরা প্রত্যেকটা কাজ সময় নিয়ে ভালোভাবে করার চেষ্টা করি। একটা পাণ্ডুলিপি পেলাম আর বই আকারে প্রকাশ করে ফেললাম—একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রকাশনীর পক্ষে তা কখনো সম্ভব নয়। ’’
২০২৫ বইমেলায় বাতিঘর প্রথমবারের মতো প্যাভেলিয়ন পেয়েছে। এর ফলে বইমেলায় পাঠকেরা বাতিঘরের নতুন-পুরোন বইগুলো ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন দীপঙ্কর দাশ। এই সময়ে থ্রিলার, অনুবাদ সাহিত্যের পাঠক চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানান এই প্রকাশক। তিনি বলেন, ‘‘এখানে অনুবাদ সাহিত্যের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরেই বেশি। বর্তমানে থ্রিলারের পাঠক বেড়েছে। ট্রেন্ড সব সময় পরিবর্তন হয়। আগে নন ফিকশনের চাহিদা কম ছিল। লেখাও কম হতো। বর্তমানে নন ফিকশনের চাহিদা অনেক বেড়েছে। লেখাও অনেক বেশি হচ্ছে। ইতিহাস, দর্শনের চাহিদা বেশ ভালো। ’’
ভারতের অনেক বই বাংলাদেশে বিপণনের কাজ করছে বাতিঘর। বাংলাদেশের লেখকদের বই যাতে কলকাতায় বিক্রি হয় সেজন্যও একটি উদ্যোগ নিয়েছেন দীপঙ্কর দাশ। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় গত মাসে (ডিসেম্বর, ২০২৪) একটি স্টোর চালু হয়েছে ‘বাতিঘর কলকাতা’ নামে। যেখানে এক্সক্লুসিভলি শুধুমাত্র বাংলাদেশের বই বিক্রি হচ্ছে। শুধুমাত্র বাতিঘরের বই নয় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ভালো বইগুলো আমরা কলকাতায় পৌঁছে দিচ্ছি।’’
নতুন লেখকদের মানসম্মন পাণ্ডুলিপি পেলে প্রকাশের উদ্যোগ নেন বলে জানান দীপঙ্কর দাশ। তিনি জানান, প্রতিবছরই বাতিঘর একেবারে নতুন লেখকের দুই, একটা বই প্রকাশ করে। বাতিঘরের সঙ্গে পাণ্ডুলিপি পাওয়ার পরে রিভিউ করা হয়। এরপর ভালো লাগলে তারাই যোগাযোগ করেন। সেক্ষেত্রে নতুন কোনো লেখক যদি বাতিঘর থেকে বই প্রকাশ করতে চান তার কাজ হচ্ছে গোছানো এবং মানসম্মত একটি পাণ্ডুলিপি পাঠানো।
দীপঙ্কর দাশ মনে করেন বইয়ের প্রচারে, প্রকাশনীর সংস্থার পাশাপাশি লেখকের ভূমিকা থাকা মোটেও দোষের কিছু না। একজন লেখক তার জায়গা থেকে বইয়ের প্রচারণা চালাতেই পারেন।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ত ঘর র র ভ উ কর বই প র কলক ত ম নসম
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?