দুই শিক্ষিকা তিন বছর ধরে অনুপস্থিত, একজন ফ্রান্সে আরেকজন পর্তুগাল
Published: 4th, February 2025 GMT
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে ৩ বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকা। তারা কোনো অনুমতি ছাড়াই একজন ফ্রান্স আর একজন পর্তুগালে অবস্থান করছেন।
এ নিয়ে শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়ে এলাকাবাসী কোন প্রতিকার পাননি। ফলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে।
জানা যায়, জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা উপজেলার মিঠাপুর গ্রামের বাসিন্দা জিতেন্দ্র পালের মেয়ে ফালগুনি পাল ইতি ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের তাজ উদ্দিন আহমদের মেয়ে মাসুমা সুলতানা গাজী ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
ওই দুই শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে না আসার কারণে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। ৫ জনের স্থলে তিনজন শিক্ষক এখন অনেক কষ্টে পাঠদান করছেন। ওই দুজন শিক্ষিকা উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বা প্রধান শিক্ষিকাকে কোন কিছু না জানিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী শিক্ষিকা ফালগুনি পাল ইতি ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বামীর সাথে ফ্রান্স চলে গেছেন। সেখানে তিনি নাগরিকত্ব নিয়েছেন। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা মাসুমা সুলতানা গাজীও স্বামীর সাথে পর্তুগালে চলে গেছেন এবং সেখানে নাগরিকত্ব লাভ করেছেন। ফলে ওই দুই শিক্ষিকা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি এলাকাবাসী ও প্রধান শিক্ষিকা নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জানালেও তারা কর্ণপাত করছেন না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তবারুক বেগম বলেন, “আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা দুইজন দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকার কারণে ক্লাসে পাঠদানে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই উক্ত পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। আমি এবং আমার কমিটি একাধিকবার জানালেও ওই পদগুলো শূন্য ঘোষণা করা হচ্ছে না।”
নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
ঢাকা/মামুন/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫