রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হাবিব, সম্পাদক ফায়েজ
Published: 8th, February 2025 GMT
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রবিসাস) প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যনির্বাহী পরিষদ আত্মপ্রকাশ করেছে।
এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রাইজিংবিডির সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন চ্যানেল২৪ এর সাংবাদিক ফায়েজুর রহমান। এছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এশিয়ান টিভির সাংবাদিক মো: রাকিব মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অ্যাকাডেমিক ভবন-৩ এ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে রবিসাস। এর আগে, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয় এবং তাদের শ্রদ্ধায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
কার্যনির্বাহী পরিষদের অন্যান্য পদে দায়িত্ব পেয়েছেন বিডি সারাবেলার সাংবাদিক মো. মেহেদী হাসান (কোষাধ্যক্ষ), মুক্তকন্ঠের সাংবাদিক মো. মিজানুর রহমান (দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক) ও ভোরের বাণীর সাংবাদিক সাংবাদিক মো. হাফিজুল ইসলাম (কার্যকরী সদস্য)।
প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ফায়েজুর রহমান বলেন, “প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যনির্বাহী পরিষদে আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত করায় সব সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা মুক্ত চিন্তা ও লেখনীর মাধ্যমে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপহার দিয়েছি সবসময়। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সবাইকে নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানাই।”
সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “সাংবাদিকরা জাতির দর্পণ। সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে দেশ ও জাতির ভাল-মন্দ নানা ঘটনা, লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা খবর তুলে ধরে দেশ ও সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। রবিসাস সবসময় বস্তুনিষ্ঠ, সঠিক, তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সাংবাদিকদের লেখার মধ্যদিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।”
ঢাকা/হাবিবুর/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল