জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘কনজ্যুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি)' এর উদ্যোগে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য খাদ্য অধিকার আইন, সিভি রাইটিং ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত সেশন আয়োজন করা হয়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে উক্ত সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

জাবিতে পোষ্য কোটা বহাল, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

জাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২১ সেপ্টেম্বর

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.

সোহেল আহমেদ, সহকারী প্রক্টর ও ১৬ নম্বর ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ শামীমা নাসরিন জলী, সহকারী প্রক্টর ও ১০ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল রকিব, মীর মশাররফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, সিওয়াইবি জাবি শাখার সভাপতি জিএম তাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হোসনী মোবারক, সাবেক সভাপতি মো. আরিফ সেনা, ইখতিয়ার মাহমুদ ও মো. নাঈম ইসলাম।

প্রাধ্যক্ষ শামীমা নাসরিন জলী বলেন, “অসৎ ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে ভেজাল দিবে কিন্তু আমাদেরও উচিত এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে ছেলে-মেয়েরা অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলছে। এজন্য পরিমিত খাদ্য, অনর্থক খাবারে ভুল না ধরা, সঠিক সময়ে ঘুমানো ও কাচা ফল খাওয়া প্রয়োজন।”

প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল রকিব বলেন, “আমরা সচেতনভাবেই নিজের জন্য এবং অন্যের জন্য খাদ্যে ক্ষতিকর ভেজাল দেই, যা আমাদের উভয়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সিওয়াইবি জাবি শাখা ক্যাম্পাসের ভেতরে ভেজালমুক্ত খাদ্য ও নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেন। যখন যেখানে আমাদের সহযোগিতা কামনা করেন, তখন সেখানেই আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি‌।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, “আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট সময় ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাবার প্রয়োজন। ক্যাম্পাসের ১৩ হাজার শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব এবং আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।আশা করি, সিওয়াইবি বিগত দিনের মতো শিক্ষার্থীদের ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন করবে এবং ভেজালমুক্ত খাদ্য ও নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতে আগামী দিনেও আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।”

কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, “সিসিএস এর যাত্রা শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়। এখন বাংলাদেশের ৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৩৫০টি উপজেলায় আমাদের কমিটি আছে, যেখানে প্রায় ২ লাখ ভলান্টিয়ার রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠন। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের খাদ্য ভেজাল ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতন করে সামাজিক পরিবর্তন সাধন করা। সে লক্ষ্যেই সিসিএস ও এর যুব শাখা সিওয়াইবি কাজ করে যাচ্ছে।”

জাবি/আহসান/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ য আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বাতিল ঘোষণা করা ‘পোষ্য কোটা’ ভিন্ন নামে ফিরছে, তবে যুক্ত হচ্ছে শর্ত

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। তবে ‘প্রতিষ্ঠানিক সুবিধার’ নামে কিছু শর্ত যুক্ত করে সেই পোষ্য কোটা পুনরায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্য নিজের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘষণার পর আবার সেটা ভিন্ন নামে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত প্রতারণা ও বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। তবে প্রশাসন বলছে, পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধা রয়েছে, সেটার আওতায় তাঁদের সুন্তানদের কিছু সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় পোষ্য ভর্তিতে পূর্বের নিয়মগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় সংস্কার করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু তাঁদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে এ সুবিধা ভোগ করবেন। আগে এই কোটার আওতায় ভাই, বোন এবং স্ত্রীও ছিলেন।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ৪০ জন পোষ্য ভর্তি হতে পারবেন এবং একই বিভাগে সর্বোচ্চ চারজন পোষ্য ভর্তির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া একজন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এ সুবিধা শুধু একজন সন্তানের ক্ষেত্রে পাবেন এবং যে বিভাগে পোষ্যদের মা–বাবা চাকরি করেন, সে বিভাগে ভর্তি করাতে পারবেন না। তবে পোষ্য ভর্তিতে পাস নম্বর কত হবে, সেটা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মতভেদ থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা শাখা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা প্রথম আলোকে বলেন, পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে পাস নম্বর কত হবে, সেটা নিয়ে শিক্ষকেরা একমত হননি, বিধায় বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পোষ্য ভর্তির ক্ষেত্রে বাকি বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পোষ্য কোটাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমৃত্যু গণ–অনশন শুরু করেন ১৪ জন শিক্ষার্থী। ১৯ ঘণ্টা অনশনের পর উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন রাতেই পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত জানান উপাচার্য।

সে সময় উপাচার্য নতুন যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন সেগুলো হলো—পোষ্য কোটায় মোট ৪০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে এবং শুধু সন্তানের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পোষ্য কোটায় পাস মার্ক করা হয় ৪০ শতাংশ।

প্রশাসনের ওই সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ৪ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই দিন প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সাঁটানো পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে দুই পক্ষের উত্তেজনার পর শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। একপর্যায়ে উপাচার্য বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনঅনশনের মুখে পোষ্য কোটায় কিছু পরিবর্তন এনেছে জাহাঙ্গীরনগরের প্রশাসন০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ওই কোটা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পোষ্য কোটা স্থগিত রেখেছিলাম। কিন্তু এটার ক্ষেত্রে কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ, ভর্তির বিজ্ঞপ্তির সময় পোষ্যদের বিষয়ে অর্ডিন্যান্স ছিল। যদি বাতিল করা হয় তাহলে যে কেউ রিট করলে এটা ফিরে আসত। এ বছর বাতিল করা সম্ভব নয়, আগামী বছর এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যাবে। তাই আমরা সংস্কার করে প্রতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় পোষ্যদের নিয়ে আসছি। তবে আগের মতো যে কেউ ভর্তি হতে পারবেন না। অনেকগুলো শর্ত দিয়েছি, যেগুলো পূরণ করেই ভর্তি হতে পারবেন এবং আসনও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, শুধু অনগ্রসর শিক্ষার্থীরা কোটা ভোগ করবে। পোষ্যরা কোনোভাবেই অনগ্রসর নন। তাঁরা প্রিভিলেজড বলে আমরা মনে করি। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সবার সামনে প্রশাসন পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করে সেটা আবার ফিরিয়ে আনছে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে।’

পোষ্য কোটার জটিলতায় ক্লাস শুরুতে বিলম্ব

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের (৫৪তম ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়, যা শেষ হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যখন এই শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করেছে আরও আগে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ছয় মাস পার হলেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি। পোষ্য কোটার হিসাব-নিকাশে ভর্তি কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ভর্তির শুরুতেই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন নবীন শিক্ষার্থীরা।

৫৪তম ব্যাচে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থী সামিয়া জামান বলেন, ‘আমাদের বন্ধুবান্ধব অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করে অনেকে পরীক্ষা দিচ্ছে। সেখানে আমাদের এখনো ভর্তি কার্যক্রমই শেষ হয়নি। বাসায় বসে থেকে আমরা একধরনের মানসিক হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছর মোট ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৫৯ জন, ২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৫৪ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৫৬ জন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৫৩ জন ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় শুধু পাস নম্বর পেয়েই পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কেউ কেউ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাতিল ঘোষণা করা ‘পোষ্য কোটা’ ভিন্ন নামে ফিরছে, তবে যুক্ত হচ্ছে শর্ত
  • জাকসু নির্বাচন ঘিরে সরগরম ক্যাম্পাস 
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২১ সেপ্টেম্বর