বুলবুল চৌধুরী প্রজাপতির মতো ডেনজারাস
Published: 16th, August 2025 GMT
আকাশের মেঘ উত্তরে যায়। শিউলি ফুলের মতো অজস্র নক্ষত্র ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। কাশবন, বাঁশঝাড় নত হয়। অদূর থেকে নদীর বাতাস উঠে এসে কোথায় কোথায় চলে যায়। গাছের ডালে হঠাৎ পাখি ডাকে। কাশবন, বাঁশঝাড় সম্ভাবনার ছায়া ফেলে।
মানুষের পেটে মানুষ। কী অবাক কথা গো!
(গল্প: নিরবধি কাল)
—এই হলো বুলবুল চৌধুরীর গদ্য।
‘টুকা কাহিনী’র বুলবুল চৌধুরী।
কৃশতনু বই ‘টুকা কাহিনী’ বিগত শতকের সত্তর দশকে প্রকাশিত হয়েছিল। কথারূপ প্রকাশনা থেকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগ। স্নেহবশত অর্থায়ন করেছিলেন সাংবাদিক, অনুবাদক আবু শাহরিয়ার। প্রকাশক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছিল জনৈক আবদুর রৌফ চৌধুরীর। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: কাজী হাসান হাবিব।
বুলবুল চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হলো, সখ্য হলো।
‘আবদুর রৌফ চৌধুরী কে বুলবুল ভাই?’
‘আমিই, মিয়া।’
বুলবুল ভাইয়ের বন্ধু হাকিম ভাই। রহস্য সাহিত্যিক শেখ আবদুল হাকিম। এই আরেক ভবের পাগল। ‘দুশ্চরিত্র’ বুলবুল চৌধুরী সম্পর্কে আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘বুলবুলের সঙ্গে সাবধানে মিশবেন। ও কিন্তু ডেনজারাস ছেলে।’ কথা মিথ্যা না। বুলবুল ভাই ‘ডেনজারাস ছেলে’ ছিলেন। রঙিন প্রজাপতির মতো ডেনজারাস। কম ডেনজারাস একটা স্মৃতিচারণা করি।
চর উঠেছে। চর দেখতে যাব। বুলবুল ভাই, জামাল রেজা ও আমি। বাসে মাওয়া গেলাম। মাওয়া থেকে নৌকায় চরে। কোন দিকে, কোন চর, আমার মনে নাই। তবে সেই জিনিস কী দেখলাম—‘মুখখানি তার নতুন চরের মতো।’
সেই চর থেকে আরেক চরে গেছি, এই চরে মানুষের ঘরদোর আছে। তবে দূরে। মাইলের পর মাইল বিরান ভূমি পার হয়ে। আমাদের ডিস্টার্ব করবে না কেউ। আমরা হাঁটছি। বুলবুল ভাইয়ের নজরে কিছু পড়ল। বিস্ময়কর কিছু। দাঁড়িয়ে পড়লেন, ‘ওই রেজা, গিমা শাক না মিয়া এইডা?’
জামাল রেজাও নজর করে দেখল, ‘হ বুলবুল ভাই!’
গিমা শাক খেতে স্বাদ। আমি গিমা শাক জন্মে দেখি নাই। এই প্রথম দেখলাম। টাইম ফুল বা নাইন ও ক্লক ফুলের লতার মতো দেখতে। মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো।
বুলবুল ভাই ম্যাজিক দেখালেন। জামাল রেজা ম্যাজিক দেখাল। ছাব্বিশ সাতাশ বছর আগের ঘটনা বলছি। কী ম্যাজিক দেখলাম?—বুলবুল চৌধুরী ও জামাল রেজা প্যান্টের পকেট থকে দুটো পলিথিনের শপিং ব্যাগ প্রকাশ্য করলেন। মানে কী এর? এঁরা কি পলিথিনের ব্যাগ পকেটে নিয়ে ঘোরেন নাকি? কেন? সংসারী মানুষ বলে?
চরের শাক, মালিকানা নাই। তাঁরা তাঁদের ব্যাগ ভরে ফেলতে থাকলেন। সঙ্গে নানা পদের কথাবার্তা চলল—তাজা শাক। মাঠের শাক। বাসায় গিয়েই রান্না করে ফেলা হবে। আমি খেয়ে যাব। জামাল রেজা শাক নিয়েছে, তার বউ রান্না করে দিতে পারবে, তাতে কি, সে–ও গরম–গরম দুটো ভাত খেয়ে যাবে। গিমা শাক দিয়ে।
ঢাকায় ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত হয়ে যাবে। ভাবির দুর্দশার কথা ভাবছিলাম। শাক কোটা কি সহজ কাজ নাকি? কুটে আবার রান্না করে দিতে হবে।
চরের তিনজন মানুষ এর মধ্যে আমাদের নিকটবর্তী হয়েছে, খেয়াল করি নাই। তারা তিনজন, আমরা তিনজন। তারা অ্যালিয়েন চোখে আমাদের দেখছে।
‘আফনেরা এনে কী করোইন গো?’—একজন বলল।
বুলবুল ভাই বিগলিত বিনয় ভাই হলেন, ‘এই কয়ডা গিমা শাক টুফাই (টুকাই না)-রে ভাই।’
‘গিমা শাক! গিমা শাক কই পাইলেন গো এনে?’
বুলবুল ভাই তাঁর আবিষ্কৃত গিমা শাকের বিস্তার দেখালেন।
ভুলভাল কিছু একটা হয়েছে।
বুলবুল ভাই মানুষের মুখ দেখেন, আমি তিন চরুয়ার মুখ দেখার চেষ্টা করলাম। তারা হাসল না। চোখ বড় করল। আমার মনে হলো তিনজন একসঙ্গে বলল, ‘গিমা শাক! এইতান তো যুগীর খ্যাতা ঘাস গো! গরুয়েও মুখ দেয় না।’
এই হলো অবস্থা।
কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর জন্মদিন আজ। ১৬ আগস্ট। ৭৭তম জন্মদিন।
কাকতালীয়: বুলবুল চৌধুরীর ‘টুকা কাহিনী’ বই প্রথম ’৭৭-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র প রক শ ত নজন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম আর নেই
বন্দরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ওরফে মুক্তি কাসেম (৯৭) আর নেই। ইন্না লিল্লাহি....... রাজিউন।
শনিবার (১৬ আগস্ট ) সকল মাড়ে ৬টায় বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বন্দর উপজেলার কামতালস্থ তার নিজ বাস ভবনে বার্ধক্য জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর খবর পেয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযুদ্ধা মরহুম আবুল কাশেমের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
গার্ড অব অনার প্রদানে উপস্থিত ছিলেন কামতাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জহিরুল ইসলাম সহ সঙ্গীয় ফোর্স।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা প্রদানের পূর্বে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগের কারণে আজকে আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছি।
তিনি আরো বলেন, দিন দিন আমরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়ে ফেলছি।আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি তাদের সম্মান জানাতে।
এসময় পরিবারের হাতে আর্থিক সহযোগিতা অর্থ তুলে দেন তিনি। ওই সময় বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুল লতিফ,মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মরহুমের নামাজের জানাযা শেষে কামতাল ডাকসমাজ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।