হালদার শাখা খালে ভেসে উঠল ১৫ কেজি ওজনের মৃত ডলফিন
Published: 12th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীর শাখা খাল থেকে ১৫ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া খালের মজিদাপাড়া থেকে খালে ভাসমান অবস্থায় ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়।
মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভেসে ওঠা ডলফিনের কিছু অংশ পচে গেছে। ডলফিনটি উদ্ধারের পর প্রাথমিক সুরতহাল করে মাটিচাপা দেন উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের কর্মী, নৌ পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) হালদা রিচার্স অ্যান্ড ল্যাবরেটরি সেন্টারের তথ্যমতে, চলতি বছরে হালদায় মারা যাওয়া দ্বিতীয় ডলফিন এটি।
রাউজান উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডলফিনটি চার থেকে পাঁচ দিন আগে মারা গেছে। এ কারণে সামন্য পচন ধরেছে। তাই ময়নাতদন্ত না করে এটি মাটিচাপা দেওয়া হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের ধারণা, নদীদূষণ কিংবা মাছ ধরতে নদীতে বিষ দেওয়ার কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে ডলফিনটির।
উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলফিনটির ওজন প্রায় ১৫ কেজি। দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট। এর আগে সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে কাগতিয়া খালের ৩ কিলোমিটার দূরে নদীর বিনাজুরী এলাকা থেকে আরেকটি ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত ৬ বছরে হালদা থেকে ৪৮টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত হালদা এবং এর শাখা খালে মোট ৪৮টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠে। দু-একটি ছাড়া প্রায় সব ডলফিনেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করেছিল উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ। একাধিক ডলফিনকে হত্যাও করা হয়।
হালদা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালদার ডলফিন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত (অতিবিপন্ন প্রজাতি) জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী । বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গত ৭ বছর হালদায় ৪৮টি ডলফিন মারা যাওয়ার ঘটনাটি খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন নদী ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এটি পচন ধরার ময়নাতদন্ত ছাড়া প্রাথমিক সুরতহাল করে নদী পাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নদীদূষণের কারণে এই ডলফিনের মৃত্যু হতে পারে। তাঁদের প্রাথমিক সুরতহালে এ তথ্য উঠে এসেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি