বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা বাড়ছে, সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে
Published: 16th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বাড়ছে উল্লেখ করে তা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সংগঠনটি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা দেখা দিয়েছিল যে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি হবে। কিন্তু সাংবাদিকেরা এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছেন। তাঁদের ওপর নিয়মিতই হামলার ঘটনা ঘটছে।
আরএসএফ ১৪ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, চলতি ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর গুরুতর হামলা বেড়েই চলেছে। পুলিশের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের লাঠিপেটা ও হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমের বার্তাকক্ষও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে সতর্ক করে প্যারিসভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, ‘এসব ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
চলতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে আরএসএফের বিবৃতিতে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কার্যালয়ে কয়েক শ ব্যক্তির হামলার চেষ্টার বিষয়টি এসেছে। শরীয়তপুরের একটি ক্লিনিক নিয়ে প্রতিবেদন করায় ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি সোহাগ খানকে হাতুড়িপেটা ও তাঁকে ছুরিকাঘাতের বিষয়টিও এসেছে আরএসএফের বিবৃতিতে।
এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের জাভেদ আখতারের ওপর বিএনপির প্রায় ২০ জন সমর্থকের হামলার বিষয়টি তুলে ধরেছে আরএসএফ। সংগঠনটি বলছে, তাঁকে সহযোগিতা করতে এলে আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়। পরদিন ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের সময় কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর বিক্ষোভকারীদের হামলার বিষয়টিও এসেছে বিবৃতিতে।
আরএসএফ বলছে, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশও সহিংস হামলা চালাচ্ছে। ৯ ফেব্রুয়ারি ছয় সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় ছাত্রদের একটি বিক্ষোভে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশ ওই ছয় সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা তাঁদের লাথি দেন এবং লাঠিপেটা করেন। এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকেরা বলেছেন, পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাঁদের ওপর হামলা হয়।
আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেস্কের প্রধান সিলিয়া মার্শিয়ে বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিগত কয়েক দিনে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক গুরুতর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা দেশটিতে উদ্বেগজনকভাবে গণমাধ্যমের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নতির আশা করা হলেও সাংবাদিকেরা অরক্ষিত রয়ে গেছেন।’
সিলিয়া মার্শিয়ে আরও বলেন, ‘দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তাঁদের (সাংবাদিকদের) আক্রমণ করা হচ্ছে। প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে প্রতিশোধমূলক শারীরিক হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা বার্তাকক্ষ আক্রমণ করছে। এসব হামলার জন্য দায়ী সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে আরএসএফ।’
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সংগঠনটির এ বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করেছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরপর ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে না পারে, সে জন্য সরকার কাজ করছে। কেউ যদি সাংবাদিকদের বাধা বা আঘাত করার চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব ষয়ট স গঠনট গণম ধ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)