দুই প্ল্যাটফর্মের সমান সংখ্যক নেতা নিয়ে নতুন দলের কমিটি, আলোচিত সাবেক শিবির নেতারা থাকছেন না
Published: 27th, February 2025 GMT
তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি কত সদস্যের হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে কমিটির আকার যা-ই হোক, তাদের দুই প্ল্যাটফর্ম—জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে ৫০ শতাংশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫০ শতাংশ নেতাকে নিয়েই দলের আহ্বায়ক কমিটি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে কমিটির সবার নাম ঘোষণা না–ও হতে পারে। তবে শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে (ছয় বা ততোধিক পদ হতে পারে) মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন। অন্য পদগুলোতে মনোনীত নেতাদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।
অবশ্য নতুন দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামও অনেকটাই চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।
আলোচিত সাবেক শিবির নেতারা থাকছেন নাএদিকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলী আহসান জোনায়েদের নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জোনায়েদ বলেছেন, তিনি নতুন দলে থাকছেন না।
জোনায়েদের এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে শেয়ার করে গতকাল ভোরে রাফে সালমান রিফাত (ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক সাবেক সভাপতি) লিখেছেন, তিনিও নতুন দলে থাকছেন না।
শিবিরের আরেক সাবেক নেতা আরেফীন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহও নতুন দলে থাকছেন না বলে জানা গেছে। হিযবুল্লাহ ইতিমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির সহমুখপাত্র পদ থেকে পদত্যাগও করেছেন।
শিবিরের সাবেক এই তিন নেতা নতুন দলে যুক্ত না হলেও একসময় শিবির করতেন, এমন বেশ কয়েকজন নতুন দলে থাকছেন বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন।
নতুন দলের সম্ভাব্য কমিটিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নাম এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুল হান্নান মাসউদসহ কয়েকজন।
অবশ্য নতুন দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত বলে ইতিমধ্যে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর নামও অনেকটাই চূড়ান্ত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে।প্রস্তুতির জন্য দায়িত্ব বণ্টনসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চেয়ে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপকমিটি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
শিবিরের সাবেক এই তিন নেতা নতুন দলে যুক্ত না হলেও একসময় শিবির করতেন, এমন বেশ কয়েকজন নতুন দলে থাকছেন বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানিয়েছেন।পুনর্গঠিত হবে নাগরিক কমিটিনতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আগামীকাল শুক্রবার দলের আত্মপ্রকাশের পরও জাতীয় নাগরিক কমিটি একটি থাকবে। নেতারা জানান, এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের বর্তমান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। নতুন দলের কার্যালয় হবে আলাদা স্থানে।
বাংলামোটরের কার্যালয়ে গতকাল নাগরিক কমিটির একটি বৈঠক হয়। সেখানে নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো এক.
দুই. আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের উদ্যোগে নাগরিক কমিটির তিনজনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী অর্গানোগ্রাম নির্ধারণ করবে।
তিন. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হবে। দল গঠনের পর থেকে নাগরিক কমিটি ‘সিভিল-পলিটিক্যাল’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। আর কোনো দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।
নাগরিক কমিটি থেকে দলের বিভিন্ন পদের জন্য ১২০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানিয়েছেন। যাঁরা দলে যাবেন, তাঁদের বাইরে থাকা অন্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠিত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ই প ল য টফর ম ম খ য স গঠক সদস যসচ ব চ ড় ন ত বল দল গঠন র ইসল ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।