রাজশাহী নগরের একটি বহুতল ভবনে ঢুকে ‘হাওয়া’ হয়ে গেছেন মোস্তাক আহমেদ বাবু নামের এক ব্যক্তি, যিনি ‘ব্যাটারি বাবু’ নামেও পরিচিত। ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় তার নাম ছিল, সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তাকে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখা গেছে। তবে, ওই ভবনটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দীর্ঘ অভিযানেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মোস্তাক আহমেদ বাবু নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাতে ছাত্র-জনতা খবর পায়, বাবু নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি বহুতল ভবনে নিজের ফ্ল্যাটে উঠেছেন। এরপর তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভবনটি ঘেরাও করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তল্লাশির পরও বাবুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি ভবনটিতে। ভোররাত পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভবনটি ঘিরে রেখেছিল।

আরো পড়ুন:

কড়া নিরাপত্তায় বিএসইসিতে ঢুকলেন চেয়ারম্যান-কমিশনার

স্বরাষ্ট্র সচিব
কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, ভারী বুট পরা পুলিশ তার পিছনে দৌড়াতে পারে না

বাবু রাজশাহীতে একটি ব্যাটারি দোকান পরিচালনা করেন, যার নাম ‘সাব্বির আয়রন স্টোর’। এ কারণেই তার ডাকনাম ‘ব্যাটারি বাবু’ হয়ে গেছে। ব্যাটারির ব্যবসা ছোট হলেও তিনি অত্যন্ত বিলাসী জীবনযাপন করেন। তার বিরুদ্ধে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাটারি বাবু ২০০৩ সালে ক্রিকেটার জিকো হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন। ওই মামলার পর তিনি মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে যান এবং ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফেরেন। এইপর মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মীর তৌহিদুর রহমান কিটুর ছত্রছায়ায় রাজনীতি শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান।

ব্যাটারি বাবুর খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। রাতে ভবনের সামনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, “আমরা তাকে ঢুকতে দেখেছি। তারপর কীভাবে তিনি হাওয়া হয়ে গেলেন, তা বুঝতে পারছি না।”

এক ছাত্র জানান, ফ্ল্যাটের সামনে গেলে তার (বাবু) পরিবারের সদস্যরা পাঁচ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন, তাকে গ্রেপ্তার না করানোর জন্য। কিন্তু তারা টাকা না নিয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “রাত ৩টা পর্যন্ত অভিযান চলেছে, আসামিকে পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ