উখিয়ার বনে হাতির মৃত্যু, দেড় কিলোমিটারজুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত
Published: 13th, March 2025 GMT
কক্সবাজারের উখিয়ার বনে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী একটি এশিয়ান জাতের পুরুষ বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। হাতিটির মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। দেড় কিলোমিটারজুড়ে দেখা যায় ছোপ ছোপ রক্ত। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে উখিয়া রেঞ্জের সদর বিটের জুমছড়ি এলাকার পাহাড়ি এলাকা থেকে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো.
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের সাত হাজার একরের বেশি বনাঞ্চল ও পাহাড় ধ্বংস করে আট বছর আগে গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়শিবির। দুই উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। আশ্রয়শিবির গড়ে তোলার কারণে ৫০টির বেশি এশিয়ান জাতের বন্য হাতি খাবার সংকটে পড়েছে। হাতি চলাচলের সাতটির বেশি করিডর দখল হয়ে যাওয়ায় টেকনাফের বনাঞ্চলের হাতিরা উখিয়া-রামু এবং রামু ও উখিয়া বনাঞ্চলের হাতিরা টেকনাফের দিকে যেতে পারছে না। তা ছাড়া পাহাড়ি ছড়া, জলাশয় ভরাট হওয়ায় হাতি খাবার পানির সংকটেও পড়েছে। রোগাক্রান্ত হয়ে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। প্রসবের সময় মা হাতির মৃত্যু ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে গবেষণা দরকার।
বনকর্মীরা জানান, গত ৪ জানুয়ারি টেকনাফের গহিন পাহাড়ে শাবকের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় একটি মা হাতি। বেঁচে যাওয়া শাবকটি উদ্ধার করে বন বিভাগ। সেটি এখন কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে লালনপালন করা হচ্ছে। একইভাবে সাফারি পার্কটিতে মানুষের স্নেহে বড় হচ্ছে আরও দুটি শাবক। ওই দুটি শাবককে এর আগে উদ্ধার করে সাফারি পার্কে আনা হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।