শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে
Published: 2nd, April 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটির মধ্যে আমরা খসড়া প্রতিবেদনটি পেয়েছি। প্রতিবেদনে একাধিকবার অপরাধের তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। খসড়ার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। এরপর অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। পরবর্তীতে অভিযোগ গ্রহণ করবেন ট্রাইব্যুনাল। সব মিলিয়ে ফরমাল চার্জ গঠনের মধ্যে দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে-এমন প্রত্যাশা করেন সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তিনটি মামলার খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। চলতি মাসে আরও একটি খসড়া প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে চারটি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়া গত ২৭ মার্চ প্রসিকিউশন কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। সাভারের আশুলিয়ায় ৬ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় গণহত্যার মামলায় স্থানীয় এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের খসড়া প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়। এই দুটি প্রতিবেদন চুড়ান্তভাবে প্রস্তুত করে ট্রাইব্যুনালে দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা হিসেবে থাকছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এসব আদেশ বাস্তবায়নকারি হিসেবে সাবেক পুলিশ প্রধান চেৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। গত ১৬ মার্চ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার অপরাধের প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সহযোগী আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। গত ১৮ মার্চ মামুনকে তদন্ত সংস্থার সেফ হোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সম্ভাব্য দুই আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে এবং সাবেক আইজিপি মামুন কারাগারে আছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই মাস পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। একই সংগে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল শুনানিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে প্রথমে একমাস সময় দেওয়া হয়। এরপর আরও ২ মাস সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও ২ মাস সময় বাড়ান ট্রাইব্যুনাল। সেই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন, ২ মাস সময় হয়তো লাগবে না, এক মাসের মধ্যেই প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে তদন্ত সংস্থা থেকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে প্রথম মামলার খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণহত য গণঅভ য ত থ ন গণহত য র ম স সময় তদন ত স আগস ট র খসড় প রথম অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
২ মে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ, প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ৭ অপরাধ
‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে’ আগামী ২ মে (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশ হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত দল এনসিপি।
সমাবেশ উপলক্ষে তৈরি করা প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলের সাতটি অপরাধের কথা উল্লেখ করেছে এনসিপি। এগুলো হলো ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ দমনের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ড; গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহরণ; ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ; ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো হত্যাযজ্ঞ; লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার; ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চালানো নজিরবিহীন গণহত্যা।
এরপর চারটি দাবিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রচারপত্রে। এগুলো হলো প্রতিটি অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল বা কমিশন গঠন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যবস্থা; আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ প্রশ্নের মীমাংসা তথা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল; বিচার চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও তাঁদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জমায়েত হতে পারে। এই সমাবেশে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২১ এপ্রিল থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশালমিছিল করছে এনসিপি। এর ধারাবাহিকতায় এবার কিছুটা বড় পরিসরে ঢাকা মহানগর শাখার ব্যানারে সমাবেশ হতে যাচ্ছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরের থানা পর্যায়ে কিছুদিন ধরে এনসিপির যে কর্মসূচিগুলো হচ্ছে, এগুলোরই চূড়ান্ত সমাবেশটা হবে আগামী ২ মে।