বাংলাদেশের নদীতে চীনের সহায়তা: ভালো হবে না মন্দ হবে?
Published: 8th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় চীনা সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। নদী ব্যবস্থাপনাগত প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের অগ্রগতি সম্পর্কে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি দ্বারা উপকৃত হওয়ার প্রতি বাংলাদেশের উৎসাহ যুক্তিপূর্ণ।
বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনায় চীনা সহযোগিতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের আগে আগে। সে সময় খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে চীন ১১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে প্রস্তুত।
অনেকেই এই ঋণের সুযোগ নিয়ে প্রকল্প প্রণয়নে উৎসাহী হয়। সেই সূত্রে পাওয়ার চায়না নামক চীনা কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি আলোচনা শুরু হয়। সেই আলোচনার সূত্র ধরে এই মর্মে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় যে এই কোম্পানি বাংলাদেশের সব বড় নদ-নদীকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং যমুনা নদীকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘স্থায়িত্বশীল নদী ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি’ প্রণয়ন করবে।
তবে বিগত সরকার ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য নদীবিষয়ক চীনা সহযোগিতার বিষয়টিকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল। সেই সূত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাওয়ার চায়নাকে যমুনা নদীর পরিবর্তে তিস্তা নদীর প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ করে।
সে অনুযায়ী পাওয়ার-চায়না ‘তিস্তা নদী সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ প্রণয়ন করে। পরে জানা যায় যে ভারত নিজেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর ফলে তৎকালীন সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
চীনে অবস্থানকালে প্রধান উপদেষ্টা চীনা কোম্পানির মাধ্যমেই তিস্তাবিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চীনের পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি চীনের কাছে বাংলাদেশের নদ-নদীবিষয়ক ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি সরকার কিংবা সংস্থা দ্বারা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের অতীত অভিজ্ঞতা তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।
২.
পঞ্চাশের দশকে ক্রুগ কমিশনের সুপারিশক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে (আইইসিও) বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর ভিত্তিতে আইইসিও ১৯৬৪ সালে দুই খণ্ডের মাস্টারপ্ল্যান
প্রস্তুত করে।
এই মহাপরিকল্পনার সময়-প্রেক্ষিত ছিল ২০ বছর। কিন্তু মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনার যে ধারা বাংলাদেশে সূচিত হয়েছিল, প্রায় ৬০ বছর ধরে বাংলাদেশে মোটাদাগে সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।
নদ-নদীর প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে আইইসিও যে পন্থার প্রচলন করে, তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় ‘বাণিজ্যিক পন্থা’। বদ্বীপের জন্য এর সুনির্দিষ্ট রূপ হলো ‘বেষ্টনী পন্থা’।
এই পন্থার মূল লক্ষ্য হলো, প্লাবনভূমিকে নদীখাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। সেই লক্ষ্যে সারা দেশে অসংখ্য বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেটসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। (সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি বইয়ে আমি এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা উপস্থিত করেছি। বই দুটো হলো, বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন: বর্তমান ধারার সংকট এবং বিকল্প ধারার প্রস্তাব এবং ওয়াটার ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: পাস্ট প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার)
খালি চোখেও আইইসিওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলাফল স্পষ্ট; দেশের নদী ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অসংখ্য নদী হারিয়ে গেছে, বাকিগুলোও মুমূর্ষু। একদিকে নদীখাতগুলো ভরাট করা হয়েছে, অন্যদিকে প্লাবন ভূমির অবক্ষয় সাধিত হয়েছে।
বহু নদীকে সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধের অন্তর্গত করে বস্তুত মেরে ফেলা হয়েছে। নদী ব্যবস্থার এই পরিণতির একটি দিক হলো জলাবদ্ধতা, যা এখন বাংলাদেশের শহর-গ্রাম সর্বত্র ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে
বেষ্টনী পন্থার একটি চরম রূপ হলো পোল্ডার, যখন বেষ্টনী চতুর্মুখী হয়। আইইসিওর মাস্টারপ্ল্যানের আগেই পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের উপকূলে পোল্ডার নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।
এখন যেমন আমরা নদী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চীনের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছি, আগে আকর্ষণ ছিল নেদারল্যান্ডসের প্রতি। সে দেশে পোল্ডার নির্মাণের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ভূমি উদ্ধার করে বসতি স্থাপন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের জন্য সমুদ্রগর্ভ থেকে ভূমি উদ্ধারের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও নেদারল্যান্ডসের ‘পোল্ডার পন্থা’ বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ড উভয়ই বদ্বীপে অবস্থিত হলেও এদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি।
যেখানে বাংলাদেশের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বার্ষিক প্রবাহের আনুমানিক পরিমাণ যথাক্রমে ৪০৪ ও ৬২৮ ঘনকিলোমিটার, সেখানে নেদারল্যান্ডসের মূল নদী রাইনের বার্ষিক প্রবাহের পরিমাণ হলো মাত্র ৭৫ ঘনকিলোমিটার। এ ছাড়া যেখানে বাংলাদেশের নদ-নদীর প্রবাহ চরম ঋতুভেদসম্পন্ন, সেখানে রাইন নদীর প্রবাহের কোনো ঋতুভেদ নেই। সর্বোপরি, বাংলাদেশের নদ-নদী প্রতিবছর প্রায় ১১৫ কোটি টন পলিবালু নিয়ে আসে, যেখানে রাইন নদীর এই পরিমাণ মাত্র ৩৪ লাখ টন।
বাংলাদশের নদী ব্যবস্থাপনার মূল করণীয় হলো, প্রবাহের ঋতুভেদ মোকাবিলা এবং পলিবালুর সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করা। নেদারল্যান্ডসের জন্য এই দুই করণীয়র একটিও প্রাসঙ্গিক নয়।
এই অবিমৃশ্যকারিতার ফল হয়েছে যে পলিবালু পোল্ডারের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলে এগুলোর ভূমি-উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমে হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে চলে গেছে এবং আরও যাচ্ছে। অর্থাৎ বিদেশি পরামর্শে আমরা দেশের উপকূলকে নিমজ্জনের দিকে ঠেলে দিয়েছি।
৩.
চীনের বড় দুই নদী হলো দক্ষিণের ইয়াংশি এবং উত্তরের হোয়াংহো (পিত নদী)। ইয়াংশি নদীর বার্ষিক গড় প্রবাহের পরিমাণ (ডাটোং জরিপ স্টেশনে) আনুমানিক প্রতি সেকেন্ডে ২৭ হাজার ৫০০ বর্গমিটার (কিউমেক)। এদিক থেকে এই নদী আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের সমতুল্য। বাহাদুরাবাদে ব্রহ্মপুত্রের বার্ষিক গড় প্রবাহের পরিমাণ আনুমানিক ২২ হাজার কিউমেক।
তবে গঙ্গা-যমুনার যৌথ প্রবাহের তুলনায় ইয়াংশি নদীর প্রবাহ অনেক কম। ইয়াংশি নদীর পলিবালুর পরিমাণ বাংলাদেশের গঙ্গা-যমুনা বাহিত পলিবালুর অর্ধেকের কম। ফলে ইয়াংশি নদীর পলিবালু ব্যবস্থাপনার সমস্যা বাংলাদেশের সমতুল্য নয়।
ইয়াংশি নদীর প্রবাহের ঋতুভেদ থাকলেও তা বাংলাদেশের মতো এত চরম নয় এবং নদীতীরের মাটি-গঠন বাংলাদেশ থেকে ভিন্ন। ফলে এই নদীর পাড় ভাঙানের সমস্যা বাংলাদেশের মতো তীব্র নয়। ইয়াংশি বাংলাদেশের যমুনা কিংবা তিস্তা নদীর মতো বেনুনী নদী নয়।
চীন ইয়াংশি ও তার উপনদীর ওপর বহু বৃহদাকার বাঁধ নির্মাণ করেছে, যার অন্যতম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘তিন গিরিখাত বাঁধ’। এসব বাঁধ নির্মাণের ফলে ইয়াংশি নদীর বাঁধপরবর্তী অংশে পলিবালুর পরিমাণ মারাত্মকভাবে (কোনো কোনো জরিপ অনুসারে ৯৩%) হ্রাস পেয়েছে।
এর ফলে ভাটিতে ক্ষয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মোহনা ও বদ্বীপ অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ইয়াংশি নদীর ওপর আরোপিত বিভিন্ন চ্যানেলাইজেশন প্রকল্প এই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত বহু হ্রদের বিপর্যয় ঘটিয়েছে।
উত্তরের হোয়াংহো নদীর প্রবাহের বার্ষিক গড় পরিমাণ মাত্র ২ হাজার ১১০ কিউমেক, যা আমাদের মেঘনার অর্ধেকের কম। অতীতে এই নদী প্রায় ১৬০ কোটি টন পলিবালু বহন করত।
চীন এই নদীর দুই পাড়ে (বিশেষত সমতল এলাকায়) ৪ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছে; যার ফলে পলিবালু পতিত হয়ে এই নদীখাতের উচ্চতা পার্শ্ববর্তী এলাকার কোথাও কোথাও প্রায় ৩০ ফুট ওপরে উঠে গিয়েছে। ফলে হোয়াংহো এখন ‘আকাশস্থ নদী’ বলে অভিহিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় এই নদীর ওপর প্রায় ২০টি বড় ধরনের বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর প্রবাহ বেশির ভাগ সময় আর সমুদ্রে পৌঁছায় না, যার ফলে নদীর মোহনা ও বদ্বীপ অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
লক্ষণীয়, ইয়াংশি ও হোয়াংহো নদীর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩ হাজার ৯১৫ মাইল এবং ৩ হাজার ৩৯৫ মাইল। উভয় নদীর পুরোটাই চীনের সীমানার অভ্যন্তরে। ফলে চীন যেভাবে তার নদ-নদীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাংলাদেশের পক্ষে তা মোটেও সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের নদীপ্রবাহের প্রায় ৯৩ শতাংশ সীমান্তের বাইরে থেকে আসে। তা ছাড়া ইয়াংশি ও হোয়াংহো নদীর যথাক্রমে মাত্র ২৫ ও ১৪ শতাংশ সমতল এলাকায় প্রবাহিত হয়, বাকিটা পার্বত্য এলাকায়। ফলে চীনের পক্ষে সম্ভব হয়েছে পার্বত্য এলাকায় বহু বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এসব নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। বাংলাদেশের জন্য সে ধরনের কোনো সুযোগও নেই।
৪.
নেদারল্যান্ডসের মতো চীনের নদ-নদীর পরিস্থিতিও বাংলাদেশের পরিস্থিতি থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন। নদ-নদীর প্রতি চীন অত্যন্ত আগ্রাসী বাণিজ্যিক পন্থা অনুসরণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তার পরিণতি ভালো হয়নি। এ নিয়ে সেই দেশে সমালোচনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
বাংলাদেশের তিস্তা নদীর জন্য পাওয়ার চায়না যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, তাতেও আমরা আগ্রাসী বাণিজ্যিক পন্থার প্রতিফলন দেখি। এই পরিকল্পনায় তিস্তার মতো একটি বেনুনী নদীর গড় প্রস্থ একলাফে আনুমানিক ৩ হাজার মিটার থেকে ৮১৬ মিটারে হ্রাসের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার স্থায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ।
পাওয়ার চায়না অথবা পাউবো এই প্রকল্পের কোনো ‘সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন’ (ফিজিবিলিটি রিপোর্ট) জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি। এই প্রয়োজনীয় তথ্য ছাড়া পাওয়ার চায়নার তিস্তা পরিকল্পনার ওপর সাম্প্রতিক গণশুনানির কী উদ্দেশ্য হতে পারে, তা পরিষ্কার নয়।
সব মিলিয়ে বলতে হচ্ছে যে বাংলাদেশের নদ–নদীর পরিস্থিতি ভিন্ন। সে জন্য প্রয়োজন ভিন্ন দর্শন ও পন্থা। বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হলো, নদ-নদীর প্রতি প্রকৃতিসম্মত ও উন্মুক্ত পন্থা এবং দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে পাড় স্থিতিশীলকরণ।
অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে বিদেশিদের পক্ষে বাংলাদেশের এই বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রয়োজন হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। বস্তুত, অতীতে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিস্তাবিষয়ক পাওয়ার চায়না প্রণীত প্রকল্প ইঙ্গিত দেয় যে বাংলাদেশের নদ-নদী ব্যবস্থাপনায় আবার কোনো বিদেশি কোম্পানিনির্ভর প্রয়াস যে সফল হবে, সে বিষয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
সর্বোপরি, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের নদী, জ্বালানি, শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য বিদেশিদের শরণাপন্ন হওয়াটা দুঃখের বিষয়। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশ অনেকখানি অগ্রসর হয়েছে। চিন্তা ও পরিকল্পনার বিষয়ে আমরা কবে স্বনির্ভর হব?
ড. নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান এবং এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র নদ নদ প রব হ র প নদ নদ র প নদ র প র পর স থ ত পল ব ল র র পর ম ণ প রকল প প রণয়ন এল ক য় ণ কর ছ প রস ত ত হয় ছ র জন য হয় ছ ল র ওপর ব ষয়ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করাসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ৩৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
আরো পড়ুন:
‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’
শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিলে কেউ যেন খুনের কনটেক্সট না ভুলে যান: প্রেস সচিব
বিএফইউজের দাবিগুলো হলো:
০১. ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া’ নীতি কার্যকর করতে হবে।
০২. অবিলম্বে স্বাধীন ও কার্যকর তথ্য কমিশন গঠন করতে হবে।
০৩. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিও, সংবাদ সংস্থা, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন ও দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে না। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর হয়নি। অথচ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। তাই, বর্তমান সরকারকে দ্রুত নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
০৪. সাংবাদিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একইভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে। আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে এবং বর্তমান সময়ে প্রতিনিয়ত তা-ই হচ্ছে।
০৫. সাংবাদিকদের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও দুই দিন ছুটির ব্যবস্থা চালু আছে। সাংবাদিকদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন সাপ্তাহিক ছুটিও পান না। এতে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে।
০৬. সাংবাদিক হত্যা, হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
০৭. সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
০৮. আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য পৃথক শ্রম আদালত স্থাপন করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানাভাবে হয়রানি ও হামলা-মামলার শিকার হন। এসব মামলা ঘাড়ে নিয়ে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। থানা বা কোর্ট নয়, সংবাদসংক্রান্ত সব মামলা শ্রম আদালতে করতে হবে।
০৯. সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন, মাল্টিমিডিয়ার জন্য একটি ‘সমন্বিত জাতীয় সংবাদমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে। এই সমন্বিত নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য ভিন্ন নীতিমালা থাকবে। অনেক নীতিমালা প্রণয়ন না করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে সেটি প্রয়োগ করা ও মেনে চলা সহজ হবে।
১০. সংবাদপত্র, অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদ সংস্থা ও মাল্টিমিডিয়ার জন্য অভিন্ন ওয়েজ বোর্ড করতে হবে। বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ওয়েজ বোর্ড থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। তাই, টেলিভিশন সাংবাদিকদের চাকরি শেষে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এটা অত্যন্ত অমানবিক।
১১. রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব স্তরে এবং আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সাংবাদিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হবে, তত দিন পর্যন্ত স্বাধীন সাংবাদিকতাও সম্ভব হবে না। বর্তমানে ব্যাপক হারে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কারণে-অকারণে। মামলা-গ্রেপ্তারেও পিষ্ট হচ্ছে।
১২. কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ এবং ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের পুনর্বহাল করতে হবে।
১৩. চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া অথবা অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের দেনা-পাওনা ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
১৪. কোনো গণমাধ্যম নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র ছাড়া এবং বিনা বেতনে কোনো সাংবাদিককে অস্থায়ী, স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারবে না।
১৫. মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দিতে হবে। জেলা পর্যায়ে কিছু পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বেতন দিলেও অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ উপজেলা প্রতিনিধিদের এক টাকাও বেতন দেয় না। উপন্তু, তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ দেওয়া হয়। সংবাদকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞাপনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিতে না পারলে চাকরিচ্যুত করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
১৬. তিন বছর সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পর ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে পদোন্নতি দিতে হবে।
১৭. সরকার ও গণমাধ্যম কর্তৃক দ্রুত সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১৮. বছরের শুরুতে আগের বছরের গড় মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যান্য ভাতার ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর পর পর মুদ্রাস্ফীতি সামঞ্জস্য করে বিবেচনা করতে হবে।
১৯. পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে ক্যামেরা, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল, গাড়ি, মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শারীরিক ক্ষতির জন্য দুর্ঘটনা বীমা থাকতে হবে। চিকিৎসার ব্যবস্থা মালিকপক্ষকেই নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট কাভারের জন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং দুর্ঘটনা ভাতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্থায়ী সংবাদকর্মীদের জন্য দুর্ঘটনা বীমা ও চিকিৎসা বীমার ব্যবস্থা, জীবন বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদকর্মীদের আইনি সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠানে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারী সংবাদকর্মীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, বিশেষ করে তাদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম রাখতে হবে।
২০. সাংবাদিকদের তৈরি প্রতিবেদনের কারণে যেসব ফৌজদারি মামলা আছে, তা প্রত্যাহার ও বাতিল করতে হবে।
২১. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
২২. কোনো গণমাধ্যমকে গোয়েন্দা সংস্থা কোনো ধরনের নির্দেশনা দিতে পারবে না।
২৩. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা কোনো সংবাদমাধ্যম/গণমাধ্যম পরিচালিত হতে পারবে না।
২৪. সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের রিপোর্ট প্রতি তিন মাস অন্তর সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দিতে হবে। এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, মনিটরিং করতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সত্যিকার অর্থে ওয়েজ বোর্ড কার্যকর করেছে কি না, সেটা সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
২৫. সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। সাংবাদিকদের শুরুতে বেতন ন্যূনতম ৩৫ হাজার টাকা হতে হবে এবং প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে।
২৬. রেডিও, টেলিভিশনের লাইসেন্স প্রদানে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিকে পুরোপুরি ঢেলে সাজাতে হবে। দলীয় বিবেচনায় নয়, যোগ্যতায় হতে হবে লাইসেন্সপ্রাপ্তির মূল ভিত্তি।
২৭. কোনো সাংবাদিক যত দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার মতো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, তার বিরুদ্ধে যদি আর্থিক দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো প্রমাণিত অভিযোগ না থাকে, তা হলে তাকে অবসর দেওয়া যাবে না।
২৮. সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন পরশোধ করতে হবে।
২৯. দেশে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন প্রক্রিয়া এখনো সেকেলে রয়েছে গেছে। কেউ যদি যথাযথভাবে সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়াও অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। নিবন্ধন পেতে হয়রানি, ঘুষ দাবিসহ সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে সংবাদমাধ্যমের অবমূল্যায়ন ও হয়রানি বন্ধ করে যেকোনো এক জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধন-সংক্রান্ত বিশেষ সেল রাখা যেতে পারে। ভেরিফিকেশন থেকে শুরু করে নিবন্ধনসহ সব কিছু বিশেষ সেলের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা করবেন।
৩০. চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বর্তমানে প্রিন্ট পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন হার নির্ধারণ করে থাকে। এখানে অনেক শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। যেসব পত্রিকা দৈনিক ৫০০ কপিও ছাপা হয় না, সেসব পত্রিকা লাখ লাখ কপি ছাপানোর ভুয়া তথ্য দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে বেশি বিজ্ঞাপন রেট নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে রেট আপ-ডাউন বন্ধ করতে হবে।
৩১. সংবাদমাধ্যমের বিজ্ঞাপন রেট বাড়াতে হবে। ৯০০ টাকা রেট দিয়ে এখনকার সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। এখনকার মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় রেট আরো অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে। একই কথা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের জন্যও প্রযোজ্য। সব মিডিয়ার জন্যও বাস্তবসম্মত বিজ্ঞাপন নীতিমালা করতে হবে;
৩২. রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। ঠিক তেমনই করপোরেট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন টিভি-রেডিও ও সংবাদপত্রকে মালিকের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩৩. কথায় কথায় সংবাদমাধ্যম ডিক্লারেশন বাতিল বন্ধ করতে হবে। সরকার কোনো সংবাদমাধ্যম বন্ধ করলে সরকারকে অন্তত ৬ মাস ওই মিডিয়ার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বহন করতে হবে।
৩৪. নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিকের নির্বাচনী তথ্য জানার অধিকারকে সংকুচিত করবে। বিশেষ করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ চলাচল, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আমরা অবিলম্বে এই নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
৩৫. নিউজ প্রিন্টের আমদানি শুল্ক ২ শতাংশ (বর্তমানে প্রযোজ্য ৫ শতাংশ), ভ্যাট ১৫ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর (এটি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ন্যূনতম ১ শতাংশ করতে হবে। সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে করপোরেট ট্যাক্স সর্বনিম্ন নির্ধারণ অথবা অবলোপন করতে হবে।
৩৬. সামগ্রিক মিডিয়াকে শিল্প ঘোষণা করে এই শিল্পের বিকাশে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, সরকারের পছন্দমতো সংবাদ না করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হুমকি দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে। সংবাদের কারণে কোনো গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন বন্ধ করাকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩৭. সাংবাদিকতাকে বাধাহীন করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩৮. রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
দাবিগুলো উপস্থাপন করে সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “আমরা এমন একটি পরিবর্তিত সংবাদমাধ্যম চাই, যেখানে একজন সাংবাদিক কোনো পক্ষের চাপ ছাড়াই ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারবেন। যেখানে অনুসন্ধানই হবে সত্যের সমাহার আর দায়িত্ববোধ হবে সাংবাদিকতার মূলশক্তি।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বাছির জামাল, এরফানুল হক নাহিদ, রফিক মুহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, সাঈদ খান, আবু বকর, অপর্ণা রায়, মোদাব্বের হোসেন, খন্দকার আলমগীর, ডিএম অমর, আল আমিন প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রফিক