পটুয়াখালীর আড়তে ইলিশের কেজি ২৫০০ টাকা
Published: 13th, April 2025 GMT
বাঙালির অন্যতম উৎসব বাংলা নববর্ষ। আর এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ পান্তা-ইলিশ। এ উৎসব ঘিরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। দেশের বৃহৎ পটুয়াখালীর পাইকারি মাছ বাজার মহিপুর ও আলীপুরে ইলিশের দাম চড়া। এতে পাইকারি ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে সমুদ্রে মাছের অকাল থাকায় ইলিশের দাম অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা।
মহিপুর ও আলীপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই দুই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফাইস্যা, ছুড়ি, পোয়া, মটকা চিংড়ি, টোনা, তাপসী, কোরাল, চাপলি, পবদা ও টাইগার চিংড়ি, স্বল্প সংখ্যক বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ থাকলেও বাজার প্রায় ইলিশ শূন্য। যেখানে প্রতিনিয়ত টন টন ইলিশ বিক্রি হয়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি আড়তে ইলিশ মাছ দেখা গেল। তাও মাঝারি ও ছোট সাইজের ইলিশ। এ বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। আর ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
কলাপাড়া থেকে মহিপুর মাছ বাজারে আসা পাইকারি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘‘সকাল ৮টায় মহিপুরে এসেছি। এখন পর্যন্ত ইলিশ মাছ কিনতে পারিনি। এখানে নিলামের মাধ্যমে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ সব ইলিশ কিনে কত টাকায় বিক্রি করব?’’
আরো পড়ুন:
‘হাসিনার দোসররা ভোরে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে’
নববর্ষের দিন টিএসসি-শাহবাগ মেট্রো স্টেশন ‘সাময়িক বন্ধ থাকবে’
আমতলী থেকে আসা অপর পাইকারি ক্রেতা রিয়াজুল বলেন, ‘‘আজ এখানে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দাম চড়া থাকায় এক মণ ছুড়ি মাছ নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বিকালে আমতলী বাজারে বিক্রি করব।’’
মহিপুর আড়তদার মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মাহতাব ফিসের স্বত্ত্বাধিকারী মাহতাব হাওলাদার জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি না থাকার কারণে জেলেদের জালে খুব কম পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। যার কারণে বাজারে ইলিশের সংখ্যা খুবই কম। আর আজ একেবারে ইলিশ নেই বললেই চলে। যার কারণে দাম অনেকটা চড়া।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের সংখ্যা একটু কমেছে। এছাড়া এই উপকূলে অনেক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না, যার ইলিশ কম ধরা পড়ছে এবং দামও বেশি। ১৫ এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার পর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এবং দামও অনেকটা কমবে।
ঢাকা/ইমরান/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পয়ল ব শ খ
এছাড়াও পড়ুন:
২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
ভোলার ভ্যাপসা গরম, দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সদর রোডজুড়ে তীব্র যানজট নাগরিক জীবনকে ব্যস্ত করে ফেলে। গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি খোঁজে। আর সেই স্বস্তি এনে দিতে পারে ভোলার বিখ্যাত বৈষা দধি।
দুপুরের আগেই সব দোকানের হাঁড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। মহিষের কাঁচা দুধে পাতানো এই দই ভোলার স্বাদ, ইতিহাস ও গর্বের এক অনন্য বহিঃপ্রকাশ।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়। এই দইয়ের বিশেষত্ব হলো, মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে এটি পাতা হয়। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায়, সেসব তৈরি হয় গরুর দুধ দিয়ে এবং দুধ জ্বালিয়ে গাঢ় করে। কিন্তু ভোলার বৈষা দধি হয় মহিষের কাঁচা দুধ দিয়ে।
জলবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার এক অমূল্য সম্পদ মহিষ। পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—এই চার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার মহিষ। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি, তবে স্থানীয় লোকজনের মতে তা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এই মহিষের দুধই বৈষা দধির প্রাণ।
প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকে এই দই। এ ছাড়া অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম প্রধান উপাদান এটি। উৎসব-পার্বণ, বিয়েশাদি কিংবা যেকোনো সামাজিক আয়োজনে বৈষা দধি ছাড়া যেন ভোলার কোনো উৎসব পরিপূর্ণতা পায় না।
মুহাম্মদ শওকাত হোসেনের ‘ভোলা জেলার ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, দুই শ বছর আগে থেকে ভোলায় চর জাগতে শুরু করে। বসতি হয়, মহিষ পালন শুরু হয়। দুধ সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দই বানাতেন। সেখান থেকেই বৈষা দধির যাত্রা শুরু, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো অঞ্চলে।
ভোলার মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এই দই। এটি ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, চিড়া-মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় মুখরোচক খাবার, আবার গরমের দিনে দই, পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘোল—যা শরীরকে শীতল রাখে। শীতকালে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই ও খেজুরের গুড়—ভোলার ভোজনরসিকদের কাছে এক অনন্য স্বাদ। পান্তাভাতের সঙ্গে দই ও খেজুরের গুড় এই অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার।
বর্তমানে প্রতি কেজি বৈষা দই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। তবে ঈদে দাম বেড়ে যায়। ঈদের আগেই বিক্রেতারা দুধ জমাতে শুরু করেন এবং এ সময়ে প্রতিদিন ৮০০–৯০০ কেজি পর্যন্ত দই বিক্রি হয়।
ভোলার দোকানগুলোতে প্রতিদিন মণকে মণ বৈষা দধি তৈরি হয়