খুলনার স্টেম ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
Published: 13th, April 2025 GMT
বৈজ্ঞানিক গবেষণার পদ্ধতি মেনে বাস্তবিক সমস্যা সমাধান ও ব্লক বেজড কোডিংয়ের মাধ্যমে আরডুইনো রোবোটিকসের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা দিতে খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে গতকাল শনিবার আয়োজিত হলো দুই দিনব্যাপী অ্যাডভান্সড স্টেম ক্যাম্প। স্টেম অ্যান্ড আইসিটি স্কিলস ফর দ্য গার্লস অব কোস্টাল এরিয়া প্রকল্পের আওতায় উপকূলের রামপাল, তালা ও সাতক্ষীরা উপজেলার ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৬০ শিক্ষার্থী দুই দিনব্যাপী এই আবাসিক ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করছে।
স্টেম প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সাল থেকে তিনটি উপজেলার এ ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে ব্যবহারিক পরীক্ষা–নিরীক্ষাসহ প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর হাতে–কলমে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনটি উপজেলায় মোট ছয়টি স্টেম ফেস্ট আয়োজিত হয়, যেখানে দক্ষতার ভিত্তিতে ৬০ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে এই অ্যাডভান্সড স্টেম ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
দুই দিনের বাস্তবিক সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কীভাবে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করতে হয় এবং একটি গবেষণাপত্র বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা পোস্টার তৈরি করা যায়, তা নিয়ে প্রথম দিন একটি বিস্তারিত সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড ও সায়েন্স কংগ্রেসের একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর তানভির উল ইসলাম, মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগারের সমন্বয়ক ফারজানা লিমা ও কুয়েট রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি নাফিস আহমেদ। প্রথম দিনের দ্বিতীয় ভাগে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে নিজেরা একটি বাস্তবিক সমস্যা খুঁজে বের করে, ডেটা সংগ্রহ করে ও গবেষণার পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে। দিনের শেষ ভাগে ক্যাম্পের বিচারকদের সামনে নিজ নিজ গবেষণা পোস্টার উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পের প্রথম দিন শেষ হয়। ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ও ব্লক বেজড কোডিংয়ের খুঁটিনাটি জানার মধ্য দিয়ে। এরপর ব্লক বেজড কোডিংকে আরডুইনো কিটের সঙ্গে যুক্ত করে একটি রোবোটিকস এক্সপেরিমেন্ট হাতে–কলমে তৈরি করে শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুনস্নাতক ও ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা পাবেন উপবৃত্তি, মিলবে ১০,০০০৪ ঘণ্টা আগেক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতার প্রাথমিক ধারণাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর আরও গভীরে জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহিত করা। দুই দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে হাতে–কলমে অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পে আসা কমরেড রতন সেন কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ কুমার সাহা বলেন, ‘এ রকম ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের যদি হাতে–কলমে প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত রাখা সম্ভব হয়, তাহলে উপকূল থেকেও প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকবল তৈরি করা সম্ভব হবে। আমাদের শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমরা আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারব।’ ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া বশরী জানায়, ‘উপজেলার বিজ্ঞান উৎসবে আমরা যখন বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করি, তখন সেই সমস্যা নিয়ে এত গভীরে ধাপে ধাপে চিন্তা করার কথা আমরা কখনোই ভাবিনি। এই ক্যাম্পে বিজ্ঞান গবেষণার নির্দেশনা পেয়ে মনে হয়েছে, গবেষণার এই ধাপগুলো আমার বিজ্ঞান প্রকল্পকে আরও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।’
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মকাণ্ডে মেয়েদের, বিশেষ করে উপকূলের পিছিয়ে পড়া ও কম সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়েশিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা মালালা ফান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের তিনটি উপকূলীয় উপজেলা খুলনার রূপসা, বাগেরহাটের রামপাল ও সাতক্ষীরার তালার মোট ছয়টি মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মেয়েশিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান, গণিত, প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। বিজ্ঞপ্তি
আরও পড়ুনকুইনস কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতা, অংশ নিয়ে ইংল্যান্ড ভ্রমণের সুযোগ ০২ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প সমস য উপজ ল উপক ল গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।