বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটে ভুগছে সুদান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার জন্য দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের মূল্য দিতে হচ্ছে। জাতিসংঘ ও এনজিওগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।

স্থগিত শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার প্রয়াসে যুক্তরাজ্যে মঙ্গলবার ২০টি দেশের মন্ত্রীরা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। তবে, ইউক্রেন এবং গাজার যুদ্ধসহ অন্যান্য সংকটের কারণে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা স্থগিত হয়ে পড়ছে।

খার্তুমে সুদানী সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই বছর পর, পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরএসএফের হামলায় শত শত লোক নিহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটি যুদ্ধের সর্বশেষ দৃশ্যমান নৃশংসতা।

সুদানের পাঁচ কোটি ১০ লাখ মানুষের জন্য এর পরিণতি ভয়াবহ। হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে বলে জানা গেছে। লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ৪০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে গেছে।

অক্সফামের আঞ্চলিক অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার এলিস নালবান্দিয়ান বলেন, “সুদান এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট, সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট, সবচেয়ে বড় ক্ষুধা সংকট.

.. এটি সব ধরণের ভুল রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে।”

সুদানে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস প্রতিনিধি দলের প্রধান ড্যানিয়েল ও'ম্যালি বলেছেন, সংঘাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের “ব্যাপক পরিমাণে লঙ্ঘন হয়েছে। দেশের যেখানেই থাকুক না কেন, সব বেসামরিক জনগণ মূলত এক, দুই বা ততোধিক দলের মধ্যে আটকা পড়েছে। এবং তারা সবকিছুরই বোঝা বহন করছে। নিছক পরিসংখ্যানগুলোই অবাক করার মতো।”

গত মাসে সুদানের সেনাবাহিনী খার্তুমের অত্যন্ত প্রতীকী প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ পুনরুদ্ধার করে এবং রাজধানীর বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধার করে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দারফুরে আরএসএফের সাম্প্রতিক হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। 

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সবচ য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
  • ‘গোলায় আমার এক মেয়ে মারা গেছে, অন্য মেয়ের চোখে আঘাত লেগেছে, ছেলেটিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত’