ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের তাগিদে বিরোধী জোট এখন থেকেই কোমর কষা শুরু করেছে। বিরোধী নেতারা দুটি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এক. মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্ন ঊহ্য রেখে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে তাঁরা ভোটযুদ্ধে নামবেন। দুই. বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর মোকাবিলায় ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে শক্তিশালী করে তোলা হবে।

বিহার বিধানসভার লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বহর বেড়েছে। গত ভোটে বিজেপির সঙ্গে থাকা বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) নেতা মুকেশ সাহনি এনডিএ ছেড়ে তেজস্বীর হাত ধরেছেন।

বিহার বিধানসভার ভোট চলতি বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

গত সপ্তাহে দিল্লি এসে তেজস্বী যাদব দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন ‘মহাগঠবন্ধন’ শরিক কংগ্রেসের সঙ্গে। সেই বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। মূলত দুটি বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছিল। এক.

জোটের নেতৃত্বের প্রশ্ন; দুই. আসন বণ্টন।

বৈঠকের নির্যাস নিয়ে দুই দলের কেউই প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। দিল্লি থেকে পাটনা ফেরার পর তেজস্বী বৈঠকে বসেন রাজ্যস্তরে মহাগঠবন্ধনের সব শরিক দলের সঙ্গে। সেই বৈঠকে ঠিক হয়, জোটের সব শরিক ভোটের প্রচার শুরুর আগে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করবে। সে জন্য সব শরিকের প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়ে তোলা হবে এক সমন্বয় কমিটি।

সেই বৈঠকেই এনডিএ ছেড়ে যোগ দেন ভিআইপি নেতা মুকেশ সাহনি। বিদায়ী বিধানসভায় তাদের সদস্যসংখ্যা ৪।

বৈঠকে ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনো মুখ ঘোষণা করা হবে না। যদিও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে তেজস্বীকে সামনে রেখে। ওই বৈঠকে সবাই মোটামুটি একমত, ‘ইন্ডিয়া’ যে জোটবদ্ধ আছে, বিহারে তার প্রমাণ দিতে হবে।

বিরোধীদের ‘জোটবদ্ধতা’ এই পর্যন্ত মোটামুটি অটুট থাকলেও আসন বণ্টন নিয়ে তাতে চিড় ধরবে কি না, সেই প্রশ্ন এখন থেকেই উঠতে শুরু করেছে। গত ভোটে মহাগঠবন্ধনের বড় শরিক আরজেডি সিংহ ভাগ আসন নিয়েছিল। ১৪৪ আসনে লড়াই করে আরজেডি জিতেছিল ৭৫টি।

হতাশজনক ফল করেছিল কংগ্রেস। তাদের ছাড়া হয়েছিল ৭০টি আসন, কিন্তু জিতেছিল মাত্র ১৯টি আসনে। সেদিক থেকে চমকপ্রদ ফল করেছিল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। ১৯টি আসনে লড়ে তারা জিতেছিল ১২টি। তিন কমিউনিস্ট পার্টির ঝুলিতে এসেছিল মোট ১৬ আসন। তারা লড়েছিল ২৯ আসনে।

ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘স্ট্রাইক রেট’ ভালো না হওয়ায় আরজেডি এবার কংগ্রেসকে বেশি আসন ছাড়তে রাজি নয়। তারা বড়জোর ৫০টি আসন দিতে চাইছে জোটের মেজ শরিককে। কংগ্রেসের দাবি, গত ভোটে তাদের এমন ৩০টি আসন দেওয়া হয়েছিল, যেগুলো শহরের এবং ৩০ বছর ধরে বিজেপির দখলে রয়েছে। যেখানে জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। আসন নিয়ে এই টানাপড়েনের সামাল কংগ্রেস ও আরজেডি কীভাবে দেবে, এখনো অজানা।

সমস্যা অন্যদিকেও। গতবারের সাফল্যে উজ্জীবিত সিপিআইএমএল (লিবারেশন) এবার ২৫–৩০টি আসন দাবি করছে। সিপিআই গতবার লড়েছিল ৬টি আসনে। জিতেছিল ২টি। সিপিআই (এম) লড়েছিল ৪টিতে, জিতেছিল ২টি। স্ট্রাইক রেট তাদেরও ভালোই। ভিআইপিকে বিজেপি ও জেডিইউ ছেড়েছিল ১১টি আসন। তারা জিতেছিল ৪টিতে।

হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও জম্মু–কাশ্মীরে বিপর্যয়ের পর বিহারে দর–কষাকষির জায়গা কংগ্রেসের খুব একটা নেই। তবুও তারা চেষ্টা করবে হারা আসন কমিয়ে জয়যোগ্য আসন বেশি পেতে।

‘ইন্ডিয়া’ জোট মনে করছে, নীতীশ কুমারের জন্য বিহারে জেডিইউ খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। ওয়াক্ফ আইন সমর্থন করায় ওই দলের মুসলমান সমর্থনে বড় ধস নামবে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে শুধু নিশ্চিত করতে হবে ওয়াক্ফসহ অন্যান্য ইস্যু সামনে এনে বিজেপি যাতে হিন্দু মেরুকরণ চূড়ান্ত করতে না পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব ধ নসভ ইন ড য় আরজ ড

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ