মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরার প্রথম ১০০ দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও প্রমাণ করেছেন, প্রচণ্ড ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে আমোদিত করার তাঁর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তিনি যা বলেন, তাতে কখনোই কোনো কিছুর ঘাটতি রাখেন না।

নিজের প্রশংসা থেকে শুরু করে মিত্রদেশগুলোকে অপমান করা—হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্পের কিছু আলোচিত কথা নিচে তুলে ধরা হলো:

ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমেরিকাকে আবার মহান করার জন্য ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়েছেন।’

ক্ষমতায় ফেরার প্রথম দিনেই ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘মেসিহ’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন—গত বছর পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী সভায় তিনি কীভাবে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন ছাড়া এক স্বৈরশাসক।’

ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই অভাবিত মন্তব্যটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন, রুশদের ‘ভুয়া তথ্যের’ শিকার হয়েছেন ট্রাম্প।

পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এই মন্তব্য থেকে সরে আসেন এবং এক সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করে বসেন, ‘আমি কি এটা বলেছিলাম?’

আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এসব দেশ আমাদের ফোন করছে, আমাকে তেল দিচ্ছে।’

চলতি এপ্রিলে রিপাবলিকানদের এক সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের নিয়ে এই কটাক্ষমূলক মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশের ওপর তাঁর পাল্টা শুল্ক আরোপের ব্যাপারে যখন বিশ্বনেতারা তাঁকে শান্ত করার জন্য যোগাযোগ করছিলেন, তখন তিনি এই মন্তব্য করেন। পরে ট্রাম্পে এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।

গাজাকে মালিকানা নিজেদের করে নেওয়ার পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দর্শনীয় উপকূলীয় অবকাযাপনকেন্দ্র’।

ইসরায়েলি নৃশংস ও নির্বিচার হামলায় গাজার বিধ্বস্ত অঞ্চলে একটি বিলাসবহুল অবকাশযাপনকেন্দ্র বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার সময় ট্রাম্পের এমন বক্তব্য সবাইকে চমকে দেয়। এটি তিনি ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন।

শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশি কানাডাকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘কানাডাকে আমাদের লালিত–পালিত ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া পোস্টে এই মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর এই মন্তব্যে কানাডায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অনেকেই আশঙ্কা করেন, এটি যেন মার্কিন দখলদারত্বের চেষ্টার কোনো ইঙ্গিত না হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছেড়ে কথা বলেননি ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরি হয়েছে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এই বক্তব্য দেন। এর মাধ্যমে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের ইতিবাচক সম্পর্ককে সম্পূর্ণ উল্টে দেন এবং একধরনের বাণিজ্যযুদ্ধের ইঙ্গিত দেন।

দেশের বিচার বিভাগকে আক্রমণ করতেও পিছু হটেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এই বিচারক, আর পাঁচজন দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকের মতোই। যাঁদের সামনে আমাকে হাজির হতে হয়, তাঁকে অভিশংসন করা উচিত।’

মামলায় অভিযুক্ত এমনকি আর্থিকভাবে দণ্ডিত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত মার্চে তিনি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’–এ এক পোস্টে বিচারক জেমস বোয়াসবার্গকে আক্রমণ করে এই মন্তব্য করেন। পরে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ট্রাম্পের এই মন্তব্যের নিন্দা জানান, যা অনেকটা বিরল।

বোয়াসবার্গ ছিলেন সেসব বিচারকের একজন, যাঁরা অভিবাসী বহিষ্কারের বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতার সীমা টেনেছেন, প্রশাসনের কাজের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন র প রথম র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার জবাব শেষ হয়নি বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও ইরানের হামলা ‌‘চলবে’।

নাম প্রকাশ করেননি এমন একজন কর্মকর্তার বরাতে ফার্স এ তথ্য দিয়েছে। ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে ইরান ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

তেহরানে শুক্রবার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার জবাবে রাতে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। 

অন্যদিকে ইসরায়েলের ইংরেজি পত্রিকা দ্য জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ জন আহত হয়েছেন। তেল আবিব ও জেরুসালেমে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এছাড়া ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের সমুদ্র উপকূলবর্তী সমতল এলাকায় অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মাঝে একজন ছিলেন ৬০ বছর বয়সী একজন নারী, যাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে, তখন তার শরীরে কোনও প্রাণচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৪৫ বছর বয়সী এক পুরুষকেও উদ্ধার করা হয়, পরে যাকে মৃত ঘোষণা করা হয়, জানিয়েছে এমডিএ।

ইরান ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এ কথা জানিয়েছে।

এক্সে দেওয়া পোস্টে তারা লিখেছে, ‌‘ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি শনাক্ত হওয়ার পর-ই বিভিন্ন অঞ্চলের ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হামলার উৎস শনাক্ত করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী উৎসকে লক্ষ্য করে প্রতিরোধমূলক অভিযানে নামছে। তবে, ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘শতভাগ দুর্ভেদ্য না’ উল্লেখ করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তারা যেন সমস্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলে।

এর আগে ইরানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার ভোরে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধারে চালানো হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি ও রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি।

জবাবে অন্তত ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার রাতে চালানো ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামের ওই অভিযানে ইসরায়েলের তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরপর দুই দফায় ইসরায়েলে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ সময় সাইরেন বেজে ওঠে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। 

এর আগে ইসরায়েলে দফায় দফায় হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রাজনীতিক আলি শামখানি। অন্তত ২০০ ‍যুদ্ধবিমান দিয়ে চালানো ইরানের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীরও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। ভোর থেকে দিনভর দফায় দফায় এ হামলা হয়। 

বেসরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩২০ জন। এটাকে ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বর্ণনা করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। জাতিসংঘকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের উচিত বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসা।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার রাতেও ইরানে হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান অনড়, ইসরায়েল কঠোর
  • ইরানে নিরাপদে আছেন ৬৬ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  • নীরব ভালোবাসার আরেক নাম
  • নারীবাদের ছদ্মবেশে ভারত যখন যুদ্ধ চালায়
  • কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪
  • একজন মার্করাম, একটি সেঞ্চুরি এবং ২৭ বছর পর একটি ট্রফি
  • বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে নতুন ভর্তি ১০১ জন
  • ঝালকাঠিতে দূরপাল্লার বাস-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে দুজন নিহত
  • চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ইরানের