আরও এক কার্গো এলএনজি কেনা হচ্ছে, দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে ১২ ডলার
Published: 22nd, April 2025 GMT
সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫৯৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এলএনজি সরবরাহের এ কাজ পেয়েছে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগ দিতে অর্থ উপদেষ্টা এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি অনলাইনে এ সভায় অংশ নেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণখাতে ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এ এলএনজি আমদানি করা হবে। এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি। এ দফায় প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছে ১২ দশমিক ৪৭৫ মার্কিন ডলার।
এর আগে গত ৫ মার্চ ক্রয় কমিটিতে দুই কার্গো এলএনজি কেনার দুটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। একটিতে দর ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক ৭৩ মার্কিন ডলার, আরেকটিতে দর ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫ দশমিক ৪৭ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে এখন দাম কিছুটা কম পড়ছে।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন সরকার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য আগ্রহী বিক্রেতা বা সরবরাহকারীদের তালিকা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে সাড়া দিয়ে ২৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাদের মধ্য থেকে ১৭টির সঙ্গে প্রথম দফায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) অনুস্বাক্ষর করা হয়।
তবে আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) পর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে এমএসপিএ স্বাক্ষরের অনুমোদন দেওয়া হয় ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে। পরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অবশ্য ২৩–এ উন্নীত হয়। ভিটল এশিয়া সেই ২৩টিরই একটি।
এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দর প্রস্তাব আহ্বান করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব দাখিল করে। এর মধ্যে চারটি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় ভিটল এশিয়া। এ ছাড়া ক্রয় কমিটিতে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পে নিয়োজিত আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স, ইউএই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৩ লাখ টাকা ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪