বিকেলে মোটরসাইকেল চালিয়ে জরুরি কাজে নন্নী এলাকায় যাচ্ছিলেন নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও এলাকার শিপন। এ সময় মধুটিলা ইকোপার্ক সড়কে হাতির পাল দেখে ভয়ে মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান তিনি। হাতির পালে শাবকসহ প্রায় ৪৫টি হাতি ছিল বলে জানান এই যুবক।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা সড়কে অবস্থান করে হাতির পাল। হইহুল্লোড়, ডাক-চিৎকার করেও হাতিগুলোকে সরাতে পারেননি এলাকাবাসী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাহাড়ের জঙ্গলে চলে যায় হাতির পাল।
এলাকাবাসী জানান, তিন সপ্তাহ ধরে ৪০-৪৫টি বন্য হাতি গারো পাহাড়ের বুরুঙ্গা-কালাপানি পাহাড়ে অবস্থান করছে। যখন তখন খাদ্য ও পানির সন্ধানে হাতিগুলো নেমে আসছে লোকালয়ে। কয়েক দিনে হাতির পালটি বুরুঙ্গা-কালাপানি এলাকায় ভেদরকোনা পাহাড়ি গোপে কয়েকজন কৃষকের জমির আধাপাকা বোরো ধান খেয়ে ও পায়ে মাড়িয়ে বিনষ্ট করে। এ ছাড়া গত সোমবার সকালে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে আহত হয়েছেন বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের জামশেদুল ইসলাম ছোটন (৩২)। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিন দেখা যায়, এক পাল বন্যহাতি সীমান্ত সড়কের ঝোপঝাড়ে অবস্থান করছে। সাত-আটটি হাতি সড়কে দাঁড়িয়ে আছে। হাতিগুলোকে তাড়াতে অথবা দেখতে কয়েকশ উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে ঢিল, কারও হাতে বাঁশি। সমস্বরে হৈচৈ করছে কিন্তু হাতিগুলো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। 
শেরপুরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা শাহীন কবির জানান, সীমান্ত অঞ্চলে বন্যহাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্যহাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, আহত ও নিহত পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তাই বন্যহাতিকে উত্ত্যক্ত না করার আহ্বান জানান তিনি।
রাত নামলেই লোকালয়ে হাতির পাল
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জাগিরপাড়ায় ভারত থেকে আসা বন্যহাতির পালের তাণ্ডবে ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে কাঁচা-পাকা ধানক্ষেতে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় ১৫-২০টি হাতি। এ সময় ক্ষেতের ধান মাড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি গাছপালা ভাঙচুর করে হাতির পাল। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জাগিরপাড়া, হাতিবেড়, চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া গ্রামসহ আশপাশ এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, বন্যহাতির পাল দিনের বেলায় টিলায় থাকলেও রাত হলেই নামে লোকালয়ে। ক্ষেতের ফসল, ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতি করে।
রংছাতি ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খান পাঠান জানান, সীমান্ত এলাকায় হাতির আক্রমণ এখন নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ