হিলি কাস্টমসের কর্মবিরতিতে শুল্কায়ন স্থবির
Published: 25th, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের টানা কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। ফলে আমদানি- রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এরফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বন্দরের আমদানিকারকরা।
গত ১৪ মে থেকে তাদের এই কর্মবিরতি চলছে। তবে একদিন কয়েক ঘণ্টা করে কর্মসূচি চললেও শনিবার (২৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আজ রবিবারও (২৫ মে) একইভাবে বন্দরে কাস্টমস কর্মকর্তারা এই কর্মসূচি পালন করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেলে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনে কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা অফিসে অবস্থান করলেও কাজকর্ম করতে দেখা যায়নি।
আরো পড়ুন:
হিলি ইমিগ্রেশনে কমেছে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার
হিলি সীমান্ত ও বন্দর পরিদর্শন করেছেন ২৬ প্রশিক্ষণার্থী
বন্দরের আমদানিকারকরা বলেন, ‘‘কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির ফলে বন্দরে মালামাল খালাস না হওয়ার কারণে সময়মতো নেয়া যাচ্ছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’’
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কর্মবিরতি সারা দেশে পালিত হচ্ছে। এই কর্মবিরতিতে সহমত পোষণ করে হিলি স্থলবন্দরেও পালিত হচ্ছে। বিকাল ৫টার পর কাজকর্ম শুরু হয়েছে। তবে আজ রবিবার (২৫ মে) বিকালে ঢাকায় এনবিআর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফলপ্রসূ আলোচনা না হলে কাল সোমবার (২৬ মে) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। তবে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।
বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্ট সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা কর্মবিরতিতে হিলি কাস্টমসে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বেশ কিছু আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে শুল্কায়ণ জটিলতায় পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। বলতে গেলে বন্দরে এক প্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি। প্রথমত, জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; তৃতীয়ত, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; চতুর্থত, এনবিআরে প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
ঢাকা/মোসলেম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত ক স টমস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের আমদানি বিধিনিষেধ তিন মাস স্থগিতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে সরকারকে চিঠি বিকেএমইএর
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে (বাংলাদেশের রপ্তানি) ভারত সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে অন্তবর্তী সরকারকে চিঠি দিয়েছে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে চলমান রপ্তানি ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধটি স্থগিত করতেও অনুরোধ করেন তিনি। সংগঠনটির একাধিক নেতা বাণিজ্যসচিবকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ১৭ মে ভারত সরকার স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ–সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
বিকেএমইএর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উদ্যোগে ১৮ মে এবং বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে ২০ মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব অংশীদার ঐকমত্যে পৌঁছান, সেটা হলো বাংলাদেশ সরকারকে সচিব পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থলবন্দরগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ রপ্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ করে, যার মধ্যে বড় একটি অংশ তৈরি পোশাক। গত ১০ মাসে স্থল বন্দরগুলো দিয়ে ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে গত ৮ মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
এই বিধিনিষেধের কারণে ইতিমধ্যে রপ্তানি পণ্য সীমান্তে আটকে গেছে, অনেক পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে এবং এলসির মাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেতাদের আস্থা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সুনাম দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মোহাম্মদ হাতেম সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানিকারকেরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ভারত সরকারকে অনুরোধ করতে হবে, যেন তারা অন্তত তিন মাসের সময় দেয় এবং বর্তমানে প্রক্রিয়ারত রপ্তানি আদেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখে।’
১৭ মে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্কস্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশ বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ।
বিকেএমইএর চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও পাঠানো হয়েছে।