নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূলতা সয়ে টিকে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এবার মানুষের তৈরি হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। প্লাস্টিক-পলিথিন ও মাছ শিকারে ব্যবহৃত বিষ এই বনের প্রাণ-প্রকৃতির অস্তিত্বের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের মতো অপচনশীল বর্জ্য শুধু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নয়, বরং দীর্ঘ মেয়াদে মানুষের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এসব বর্জ্য নদীনালা ও খালের প্রবাহকে ব্যাহত করছে, নষ্ট করছে মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রজননক্ষেত্র। পাশাপাশি বনের ভেতরে নতুন গাছপালা জন্মানো ও বিস্তারের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা করা হয়। এ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সুন্দরবনে প্রতি লিটার পানিতে অন্তত দুটি মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং প্রতি কেজি মাটিতে সাড়ে সাত শতাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবন ও এর সংলগ্ন নদ-নদী-খাল থেকে শিকার করা প্রতি কেজি মাছ ১০-১৫ মিলিগ্রাম মাইক্রোপ্লাস্টিক বহন করছে। ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি থাকার পাশাপাশি কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম এ মাইক্রোপ্লাস্টিক সুন্দরবনের প্রকৃতি, পরিবেশ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষতি করছে।
সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন কদমতলা, হরিনগর, নীলডুমুর ও কৈখালী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীগুলোতে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক-পলিথিন ভেসে বেড়াচ্ছে। খাবার কাজে ব্যবহৃত প্লেটের (একবার ব্যবহারযোগ্য) পাশাপাশি ভাসমান সেসব প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয়সহ খাবার পানির বোতল। এ ছাড়া চানাচুর, চিপস, বিস্কুটসহ নানা প্রকার খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্য বহনের কাজে ব্যবহৃত পলিথিনও ভাসতে দেখা গেছে এসব নদীতে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট ও গ্লাস ব্যবহারের জনপ্রিয়তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পারিবারিক সব অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক-পলিথিন। ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত সেসব প্লাস্টিক-পলিথিন ধ্বংস না করে বরং নানাভাবে তা পাশের নদী-খালে ফেলা হচ্ছে। জোয়ার-ভাটায় সেসব প্লাস্টিক-পলিথিন সুন্দরবনসহ আশপাশের নদ-নদীতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সুন্দরবন ও এর সংলগ্ন নদ-নদী দূষিত হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়ছে জীব ও প্রাণবৈচিত্র্য। শিকার করা মাছর পেটে প্লাস্টিক-পলিথিনের অস্তিত্ব পাওয়ার দাবি করে স্থানীয়রা জানান, পলিথিনে আটকে মাছ ও কচ্ছপের মৃত্যুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারা। এ ছাড়া অপচনশীল এসব বর্জ্যের আধিক্যে সুন্দরবনের চর ও ফাঁকা জায়গায় গাছপালার বিস্তার কমে গেছে।
শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন তীরবর্তী মধ্য খলিশাবুনিয়া গ্রামের যুবক মতিউর রহমানের ভাষ্য, পেশায় ট্রলারচালক হওয়ায় সারাক্ষণ তাঁকে নদীতে থাকতে হয়। ফলে প্রতিনিয়ত সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে প্রচুর পরিমাণে প্লাস্টিক-পলিথিন ভাসতে দেখেন তিনি। তিন পুরুষ ধরে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মতিউরের দাবি, আগের মতো আর সুন্দরবনের চরে পর্যাপ্ত গাছ জন্মাচ্ছে না। নতুন গাছ না জন্মানোয় সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে ভাঙনের দৃশ্য অনেকের মতো তাঁর চোখও এড়ায়নি। ভাটার সময় চর ও বনের মধ্যে প্লাস্টিক-পলিথিন আটকে যাওয়া অংশে বীজ পড়েও চারা গজানোর সুযোগ মিলছে না বলে দাবি তাঁর।
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের নুরুন্নাহার বেগমের স্বামী প্যারালাইসিস হওয়ায়বদলে তিনি সুন্দরবন-সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীতে মাছের পোনা ধরে সংসার সামলাচ্ছেন। নুরুন্নাহার জানান, ভাটার সুযোগে চরে নামলে অধিকাংশ সময় তাঁর জালে উঠে আসে পানির মধ্যে থাকা পলিথিন। লোকালয় থেকে এসব পলিথিন ভেসে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এসব প্লাস্টিক-পলিথিনের ক্ষতির বিষয়ে জানেন না। কিছু না ভেবেই আরও অনেকের মতো তিনিও ব্যবহার অনুপযোগী প্লাস্টিক-পলিথিন পাশের নদীতে ফেলে দেন।
নীলডুমুর বাজারের ব্যবসায়ী শরিফ উদ্দীনের ভাষ্যমতে, তিনি কাইন ও লাউ ভোলা মাছের পেটের মধ্যে পলিথিন পেয়েছেন। পলিথিনে জড়িয়ে মৃত কচ্ছপ নিয়ে ফিরতে দেখেছেন জেলেদের। অসাধু কিছু বনজীবী বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের পাশাপাশি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া পলিথিন ও প্লাস্টিক বনের মধ্যে ফেলে দেন বলে অভিযোগ তাঁর।
সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে কাজ করা ইয়ুথ নেট গ্লোবালের সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়কারী ইমাম হোসেনের মতে, প্লাস্টিক-পলিথিনে সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকসহ পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সুন্দরবনের অস্তিত্বকে রীতিমতো ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাচ্ছে।
উপকূলের সুরক্ষা ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা এ তরুণের দাবি, সুন্দরবনের নদ-নদীতে থাকা প্লাস্টিক-পলিথিনের কারণে মাছসহ উদ্ভিদের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মাছ মারা যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি বৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবন তার অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। প্লাস্টিক-পলিথিনের উপস্থিতি সুন্দরবনের প্রাণীর ওপর নানাভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তিনি জানান, আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই সুন্দরবনের নদ-নদীগুলো প্লাস্টিক-পলিথিনের দূষণমুক্ত করা দরকার। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিসহ আইনের কঠোর প্রয়োগ খুবই জরুরি।
বেসরকারি সংগঠন রূপান্তরের জেলা সমন্বয়কারী ও ইকো-সুন্দরবন প্রকল্প কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, সুন্দরবনকে প্লাস্টিক-পলিথিন ও বিষের প্রভাবমুক্ত রাখতে তারা স্থানীয়দের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে সেখানকার মাটি ও পানি দূষণমুক্ত রাখার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি জানান, উপকূলবর্তী এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্লাস্টিক-পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনা অতি জরুরি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মিলন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদীতে বিষ দিয়ে শিকার করা মাছ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া লেইদসহ অপরাপর ক্ষতিকর পদার্থ থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার হাবিবুর রহমান জানান, সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পর্যটকবাহী কয়েকটি নৌযানকে জরিমানা করা হয়েছে। বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকারিদের আইনের আওতায় আনতে সহযোগিতার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বেশির ভাগ প্লাস্টিক-পলিথিন উপকূলবর্তী বাজারসহ এলাকার বাসিন্দাদের মাধ্যমে নদ-নদীতে ছড়াচ্ছে বলে দাবি তাঁর।
শ্যামনগরের ইউএনও রনী খাতুন জানান, সুন্দরবনকে দূষণমুক্ত রাখতে যেখানে সেখানে প্লাস্টিক-পলিথিন না ফেলতে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন অংশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপকূলবাসীকে মায়ের মতো আগলে রাখা সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়দের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল স ট ক পল থ ন র সব প ল স ট ক স ন দরবন র র ব যবহ র নদ নদ ত ব যবহ ত র নদ নদ বর জ য র জন য উপক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে
দেশে এক দশকে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর, যা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। গত এক দশকে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির গাছ।
সারা দেশে বনাঞ্চলে যে পরিমাণ গাছ আছে, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তবে গ্রামে গাছের ঘনত্ব কম। আর বন উজাড় বেশি হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সেখানে একমুখী প্রজাতির ফসল চাষের প্রসার ও সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বন উজাড় হচ্ছে।
বনের সার্বিক চিত্র জানতে ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তরের করা জাতীয় বন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়২০১৫ সালে জাতীয় বন জরিপে বন আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেটি এখন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বন জরিপে দেশে বনভূমি আছে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর। আগের বন জরিপে যেটির পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর।
জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।’
‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা’র আহ্বান জানিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে বন উজাড়ীকরণের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে সেটি ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
বন অধিদপ্তরের ২০টি দল মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে ২০২৪ সালের মার্চে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়। উপকূলীয় বন, শালবন, সুন্দরবন, পার্বত্যাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৫৮টি নমুনা প্লটের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জরিপে দেশে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১১৭টি। সবচেয়ে বেশি গাছের ঘনত্ব আছে সুন্দরবনে। এখানে গাছের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৭০২টি। বনাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় গাছের ঘনত্ব কম হলেও মোট গাছের পরিমাণ বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি।
২০১৫ সালের বন জরিপে গাছের সংখ্যা ছিল ১৬৯ কোটি। সাম্প্রতিক জরিপে সেটা কিছুটা কমে হয়েছে ১৫৭ কোটি। গত এক দশকে হ্রাস পাওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জরিপে সারা দেশে ৩২৬টি গাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২টি প্রজাতি পাওয়া গেছে পার্বত্যাঞ্চলে। সুন্দরবনে পাওয়া গেছে ২২ প্রজাতির গাছ। এর আগে বন জরিপে (২০১৫) ৩৯০ প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিল বন অধিদপ্তর। গত এক দশকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির বৃক্ষ।
কেন কমছে পার্বত্যাঞ্চলের বন
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের মোট বন আচ্ছাদনের ৪০ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দ্রুত প্রসার ঘটছে অর্থকরি ফলের চাষ (হর্টিকালচার) ও একমুখী প্রজাতির বনায়ন (মনোকালচার), যেমন রাবারবাগান।
জানতে চাইলে জাতীয় বন জরিপের সঙ্গে যুক্ত থাকা বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) জহির ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈধ ও অবৈধভাবে বন উজাড় হয়ে আসছে। এখানে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বনায়ন করা যায় না। যার কারণে এখানে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার পরিমাণ বেশি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগ কিছু করতে পারে না। পাহাড়িরা কিছু গামার আর সেগুনগাছের বাগান করেন। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে গত কয়েক দশকে। যেমন সীমান্ত রোড হয়েছে।
কামাল হোসাইন বলেন, এ ছাড়া এখানে বিনোদনকেন্দ্র ও রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে অনেক প্রভাবশালী এখন ড্রাগন, কাজু ও আমের চাষ করছেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে। এ অঞ্চলের বনের ওপর বহুমুখী চাপের কারণে এখানে বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার হার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি।
কামাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বনকে ভালোবাসে না। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বন। এটাই আমাদের সর্বনাশ করেছে।’