Samakal:
2025-06-02@08:04:20 GMT

পৃথক বরাদ্দের দাবি দলিতদের

Published: 31st, May 2025 GMT

পৃথক বরাদ্দের দাবি দলিতদের

বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি বারবার আলোচিত হলেও দলিত সম্প্রদায় আজও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। যুগের পর যুগ তারা পরিচ্ছন্নতা কর্ম, চর্মশিল্প, মৃতদেহ দাহ, নর্দমা ও বর্জ্য পরিষ্কারের মতো পেশায় নিয়োজিত থেকেছেন, কেউ বা যুক্ত রয়েছেন পৈতৃক জীবিকা নির্বাহের পেশায়। আমাদের সমাজ ও দেশের উন্নয়ন করতে হলে এ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন অসম্ভব। সময় এসেছে দলিত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনার।
বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের (বিডিইআরএম) ২০২৩ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৫৫ লাখ দলিত মানুষ বসবাস করছে; যাদের অধিকাংশই কর্মসংস্থানে, বাসস্থানে, স্বাস্থ্যসেবায় ও শিক্ষায় ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার। এ জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৮০ শতাংশ দলিত পরিবার এখনও নিরক্ষর বা প্রাথমিক শিক্ষার নিচে অবস্থান করছে। স্বাস্থ্যসেবায় তাদের মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ বৈষম্যের মুখোমুখি হন এবং প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ বাসস্থান বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করেন। সরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণের হার ১ শতাংশেরও নিচে, যা তাদের ক্ষমতায়নের পথে বড় বাধা।
বিশেষত দলিত নারীর অবস্থা আরও ভয়াবহ। উপরোক্ত জরিপে দেখা যায়, দলিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানি বা গার্হস্থ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ পরিসংখ্যান শুধু তাদের সামাজিক দুরবস্থাই নয়, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার ঘাটতিও তুলে ধরে।

যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু বরাদ্দ রয়েছে; দলিতদের জন্য আলাদা করে বাজেট বরাদ্দ দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে দলিতদের জন্য পৃথক কোনো অর্থ নির্ধারিত হয়নি (অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রতিবেদন, ২০১৯)। ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে দলিত, হিজড়া ও বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও দলিতদের জন্য আলাদা হিসাব উল্লেখ করা হয়নি (বাজেট বক্তৃতা ২০২০, পৃষ্ঠা ১৩৪)।
একমাত্র ব্যতিক্রম ২০২১-২২ অর্থবছরে দেখা যায়, ‘দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামে একটি প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী দুই অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭ কোটি ও ৮ কোটি টাকা। এসব বরাদ্দ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহির অভাব ছিল; যা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ২০২৩ সালের জুন মাসের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
দলিতদের জন্য বাজেট বরাদ্দ শুধু অর্থনৈতিক সমর্থন নয়, এটি একটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থানের ইতিবাচক কার্যকর রূপ। জেন্ডার বাজেট যেমন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নীতিগত স্বীকৃতি ও কর্মসূচির রূপরেখা নির্দেশ করে, তেমনি দলিত বাজেট সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অধিকার নিশ্চিতের দিকটি নির্দেশ করতে পারে।
বাংলাদেশের প্রায় ৩৫টিরও বেশি দলিত গোষ্ঠী রয়েছে। যেমন– জেলে, হরিজন, ডোম, রবিদাস, বাসফোর, বিন্ন, মালো, চুড়িহর, রাউত, সন্ন্যাসী, ধোপা, কায়পুত্র, রাজবংশী, পাটনি, ঋষি, ঢেলি, কাহার, গোপ, নট, কুমার, হরিজন ইত্যাদি। অধিকাংশই এখন সামাজিকভাবে অবহেলিত এবং উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে দূরে। তারা মূলত সেবামূলক পেশায় নিয়োজিত থাকলেও জাতীয় জনশুমারি বা সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

এ প্রেক্ষাপটে দলিত বাজেটের যৌক্তিকতা আরও জোরালোভাবে সামনে আসে। তাদের জন্য বাজেট বরাদ্দ করলে তা কেবল আর্থিক সহায়তা নয় বরং শিক্ষা-বৃত্তি, পেশাগত প্রশিক্ষণ, নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা, নারীর জন্য বিশেষ সহায়তা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সুযোগ তৈরি করবে। দলিত যুবদের জন্য প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার খাতে পৃথক বরাদ্দ থাকলে, তারা সমাজে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তবে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছ বাস্তবায়ন কাঠামো ও জবাবদিহিমূলক মনিটরিং ব্যবস্থা। দলিতদের জন্য আলাদা জনশুমারি, শিক্ষায় বরাদ্দ, ভূমিহীনদের জন্য খাসজমি বরাদ্দ, শ্রম অধিকার ও নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করতে হবে। বিশেষ করে বিধবা ও বৃদ্ধ দলিতদের জন্য রেশন কার্ড, বয়স্ক ভাতা ও আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি। সর্বোপরি, দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে সাধারণ প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভেতর ঢেলে না দিয়ে তাদের জন্য পৃথক সেবা কাঠামো ও বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে।
দলিত বাজেট মানে শুধু বরাদ্দ নয়, এটি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ। সময় এসেছে, জেন্ডার ও জাতীয় বাজেটের মতো দলিত বাজেটকেও জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থান দেওয়ার। তাদের জন্য সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে কেবল সুযোগ নয়, রাষ্ট্রের অঙ্গীকারই হতে হবে মূল ভিত্তি। v
শ্রুতিলিখন: ফারহানা আক্তার, উন্নয়নকর্মী
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব জ ট বর দ দ জনগ ষ ঠ র জ ত দ র জন য দল ত ব জ ট ত জনগ ষ ঠ বর দ দ র বর দ দ দ র জন য প

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেট কোথায় কীভাবে পাবেন

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট আজ সোমবার পেশ করা হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের এটিই প্রথম বাজেট। আজ বেলা তিনটায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তা প্রচার করবে।

জানা গেছে, বাজেট অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলসমূহ পাওয়া যাবে। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব দলিল পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন। এ ছাড়া দেশ ও বিদেশ থেকে যে কেউ বাজেট নিজস্ব সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ দিতে পারবেন। [email protected] ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত ও সুপারিশ দেওয়া যাবে।

তথ্য অধিদপ্তর গত বৃহস্পতিবার এক তথ্য বিবরণীতে জানিয়েছে, জাতীয় বাজেটের ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করতে বলা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের বই দেওয়া হবে এবার সচিবালয়ে অবস্থিত তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) থেকে।

বাজেট উপস্থাপনের পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট–উত্তর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেওয়ার পর অর্থ উপদেষ্টা আজ বাজেট উপস্থাপন করবেন। উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হবে। প্রতিবার বাজেট দেওয়া হতো জুনের প্রথম দিকে যেকোনো বৃহস্পতিবার। আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই এবার বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়েবসাইটে সব তথ্য দেওয়া থাকবে। যে কেউ যেকোনো মতামত দিতে পারবেন, বাজেট পাস করার আগে যেগুলো বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজেট কোথায় কীভাবে পাবেন
  • এক নজরে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট
  • আগামী বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ
  • অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ দিতে হবে
  • মে মাসে এলো ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স
  • সংকট ও বিধিনিষেধ পণ্য রপ্তানির জন্য চ্যালেঞ্জ
  • প্রণোদনা দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে চায় সরকার, ৫ সদস্যের কমিটি গঠন
  • সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পরিবর্তন আসছে