পবিত্র ঈদুল আজহার দিন চারটি কর্তব্য
Published: 1st, June 2025 GMT
প্রতিবছর জিলহজ মাসের দশম দিনে মুসলিম বিশ্বে উদ্যাপিত হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই দিন কেবল আনন্দের নয়; বরং কোরবানির ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির অপূর্ব মিলনবিন্দু। একই সময় আসে হজের মৌসুম, লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
নামের তাৎপর্য
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পবিত্র ঈদুল আজহার ভিন্ন ভিন্ন নাম। মাগরিব (উত্তর আফ্রিকা) অঞ্চলে এটি ‘ঈদুল কাবির’ বা বড় উৎসব নামে পরিচিত। সিরিয়া ও ইরাকের কিছু এলাকায় এটি ‘ঈদুল হাজ্জাজ’ ও তুরস্ক, ইরানসহ এশিয়ার কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ‘ঈদুল কোরবান’ নামে পরিচিত। আরবি শব্দ ‘ঈদ’ অর্থ যা নিয়মিত ফিরে আসে। ইসলামে বছরে মাত্র দুটি ঈদের বিধান দেওয়া হয়েছে—পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। এই দুটি উৎসব ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রোজা ও হজের সঙ্গে সংযুক্ত।
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।এই অতুলনীয় ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠান, ইসমাইল (আ.
পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে কর্তব্য
পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে তাকবির, ঈদের নামাজ, কোরবানি ও আনন্দ ভাগাভাগি।
১. তাকবির: আরাফার দিন ফজর থেকে তাশরিকের শেষ দিন (জিলহজের ১৩তম দিন) পর্যন্ত ঘরে–বাইরে, মসজিদে ও বাজারে তাকবির ধ্বনিত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’। এটি আল্লাহর মহিমা ঘোষণা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম।
কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)২. ঈদের নামাজ: ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি দুই রাকাত, যেখানে প্রথম রাকাতে তিনটি ও দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি অতিরিক্ত তাকবির দিতে হয়। এ জন্য আজান বা ইকামতের প্রয়োজন নেই। নামাজের পর খুতবা দেওয়া হয়, যা শোনা মুস্তাহাব। রাসুল (সা.)–এর সুন্নাহ অনুযায়ী, নামাজে যাওয়ার পথে এক রাস্তা ও ফেরার পথে অন্য রাস্তা ব্যবহার করা উত্তম।
৩. কোরবানি: কোরবানি পবিত্র ঈদুল আজহার অন্যতম প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কোরবানির জন্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়া নির্দিষ্ট বয়স ও শারীরিক শর্ত পূরণ করতে হবে। রাসুল (সা.) দুটি সাদা–কালো মোটা ও শিংওয়ালা দুম্বা কোরবানি করেছিলেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৫৫৩)। কোরবানির সময় ঈদের নামাজের পর থেকে তাশরিকের শেষ দিন পর্যন্ত। একটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি নামাজের আগে কোরবানি করেছে, সে যেন আরেকটি কোরবানি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬০)
কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে নিজে খাওয়া, আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ ও গরিব–দুঃখীদের দান করা সুন্নাহ।
৪. আনন্দ ও শুভেচ্ছা বিনিময়: ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ, নতুন পোশাক পরা, আত্মীয়–বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা ইসলামের শিক্ষা। সাহাবিরা ঈদের দিন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের থেকে কবুল করুন)। এই শুভেচ্ছা সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে।
সূত্র: আল–জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুনমক্কার জমজম কূপের উৎপত্তি০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ র ন ম জ ক রব ন র আল ল হ ইসল ম আকব র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
অলিম্পিয়াডগুলোতে সরকারি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ গণশিক্ষা উপদেষ্টার
অলিম্পিয়াডগুলোতে সরকারি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে মাত্র চারটা দেশে বায়োলজি অলিম্পিয়াডে সরকার সহযোগিতা করে না। তারমধ্যে বাংলাদেশ একটি। অথচ কতশত প্রজেক্টে কত কোটি টাকা নষ্ট করছি।
শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মিলনায়তনে জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজিত জীববিজ্ঞান উৎসব ২০২৫ সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারও উপস্থিত ছিলেন।
বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, পৃথিবীতে যতগুলো দেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় এরমধ্যে চারটা মাত্র দেশ যাদের সরকার কোনো সাহায্য করে না। এই চারটা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমি সাধ্যমত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, আমাদের এটা উৎসাহিত করা দরকার।
তিনি বলেন, শুধু বায়োলজি নয় আরও অনেক অলিম্পিয়াড রয়েছে। ছাত্ররা নিজে টাকা দিয়ে এখানে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু আমরা আমরা তাদের কিছু সাহায্য করতে পারছি না। আমাদের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন প্রতিযোগীদের বাইরে পাঠাতে চাই কিন্তু বাইরে পাঠানোর খরচ কে আমাদের দেবে? আমরা ছাত্রদের থেকে টাকা নিতে বাধ্য হই।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যে অলিম্পিয়াড আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি মনোভাব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাদেরকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? কতশত প্রজেক্টে কতশত কোটি টাকা নষ্ট করছি কিন্তু আমরা যদি অলিম্পিয়াডকে ন্যূনতম বলতে পারি, বাইরে যখন যাবে আমরা তোমাদের টাকা দিয়ে দিব। তাহলে অলিম্পিয়াড চালানো যায়। আমরা অলিম্পিয়াড ছাড়াও বায়োটেক, সেমিনার আয়োজন, গবেষণা করতে পারি। কিন্তু মন দিতে পারি না। আমাদের মনোযোগ যায় টাকা কোথা হতে ম্যানেজ হবে। আমি এটা দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বিবেচনার অনুরোধ করব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন হলো এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার পুরোপুরি এখনও সব বিষয়ে ধারণা হয়নি। তবে ন্যূনতম স্কোপ থাকে, তরুণ তরুণদের সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে, যেটা আমার সিদ্ধান্তের সুযোগ রয়েছে। আমি সেটা কমিটমেন্ট দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার কাজগুলো বেগবান করা আমাদের দায়িত্ব। যদি আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে অন্যদেরকে দোষ দেওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই। এই ছাত্রদের জন্যই নতুন বাংলাদেশ সম্ভব হয়েছে। তাই আমাদের কাজ হলো এমন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাতে করে তরুণ প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত যে স্বপ্ন সেটা যেন তৈরি করে দিতে পারি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বুয়েটের উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. ছগীর আহমেদ। উৎসবে সারা দেশের দশটি অঞ্চল থেকে ১২৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে ৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।