অলিম্পিয়াডগুলোতে সরকারি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেছেন, পৃথিবীতে মাত্র চারটা দেশে বায়োলজি অলিম্পিয়াডে সরকার সহযোগিতা করে না। তারমধ্যে বাংলাদেশ একটি। অথচ কতশত প্রজেক্টে কত কোটি টাকা নষ্ট করছি।

শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মিলনায়তনে জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড আয়োজিত জীববিজ্ঞান উৎসব ২০২৫ সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারও উপস্থিত ছিলেন।

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, পৃথিবীতে যতগুলো দেশ বায়োলজি অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় এরমধ্যে চারটা মাত্র দেশ যাদের সরকার কোনো সাহায্য করে না। এই চারটা দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমি সাধ্যমত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, আমাদের এটা উৎসাহিত করা দরকার।

তিনি বলেন, শুধু বায়োলজি নয় আরও অনেক অলিম্পিয়াড রয়েছে। ছাত্ররা নিজে টাকা দিয়ে এখানে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু আমরা আমরা তাদের কিছু সাহায্য করতে পারছি না। আমাদের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন প্রতিযোগীদের বাইরে পাঠাতে চাই কিন্তু বাইরে পাঠানোর খরচ কে আমাদের দেবে? আমরা ছাত্রদের থেকে টাকা নিতে বাধ্য হই।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যে অলিম্পিয়াড আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি মনোভাব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাদেরকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? কতশত প্রজেক্টে কতশত কোটি টাকা নষ্ট করছি কিন্তু আমরা যদি অলিম্পিয়াডকে ন্যূনতম বলতে পারি, বাইরে যখন যাবে আমরা তোমাদের টাকা দিয়ে দিব। তাহলে অলিম্পিয়াড চালানো যায়। আমরা অলিম্পিয়াড ছাড়াও বায়োটেক, সেমিনার আয়োজন, গবেষণা করতে পারি। কিন্তু মন দিতে পারি না। আমাদের মনোযোগ যায় টাকা কোথা হতে ম্যানেজ হবে। আমি এটা দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের বিবেচনার অনুরোধ করব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন হলো এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার পুরোপুরি এখনও সব বিষয়ে ধারণা হয়নি। তবে ন্যূনতম স্কোপ থাকে, তরুণ তরুণদের সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে, যেটা আমার সিদ্ধান্তের সুযোগ রয়েছে। আমি সেটা কমিটমেন্ট দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার কাজগুলো বেগবান করা আমাদের দায়িত্ব। যদি আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে অন্যদেরকে দোষ দেওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই। এই ছাত্রদের জন্যই নতুন বাংলাদেশ সম্ভব হয়েছে। তাই আমাদের কাজ হলো এমন বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাতে করে তরুণ প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত যে স্বপ্ন সেটা যেন তৈরি করে দিতে পারি।  

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বুয়েটের উপাচার্য আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড.

ছগীর আহমেদ। উৎসবে সারা দেশের দশটি অঞ্চল থেকে ১২৩৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্য থেকে ৫টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ক ষ ভ প রক শ অল ম প য় ড উপদ ষ ট আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ