মেঘনার ভাঙনে হুমকিতে রামগতি-বিবিরহাট সড়ক, আতঙ্কে এলাকাবাসী
Published: 1st, June 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রামগতি এলাকার মেঘনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে রামগতি-বিবিরহাট সড়কের কোরের বাড়ি মোড়ের পুরাতন বেড়ীবাঁধটিতে দেখা দিয়েছে এ ভাঙন। এতে করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে উপজেলার রামগতি-বিবিরহাট সড়কটি।
সড়কটি ধসে পড়লে ওই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর ও রামগতি উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রামগতি-বিবিরহাট সড়কের রামগতি বাজার সংলগ্ন কোরের বাড়ি মোড়ের পুরাতন বেড়ীবাঁধটি মেঘনা নদীর তীব্র জোয়ারের আঘাতে ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। তীব্র ঢেউয়ের তোড়ে সড়কের অর্ধেক ভেঙে পড়েছে নদীতে। সড়কের বাকি অংশ যে কোন সময় ধসে পড়লে তলিয়ে যাবে বিস্তীর্ণ এলাকা।
এতে পুরাতন বেড়ীবাঁধের আশেপাশের বাসিন্দারা রয়েছে চরম উদ্বিগ উৎকন্ঠায়। সড়কটি ভেঙে গেলে মেঘনার পানি প্রবেশ করে আশেপাশে দুইটি ইউনিয়নের কমপক্ষে চারটি গ্রামের অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে মেঘনায়। ভেঙে পড়বে মানুষের ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও হাটবাজার।
এছাড়া সড়কটি ধসে পড়লে রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডার বাজারে আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এতে কয়েক হাজার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরেও সড়কটির এ অংশে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে জিও ব্যাগ দিয়ে কোনমতে সড়কটি রক্ষা করা হয়। এ বছর জিও ব্যাগ দিয়েও আর রক্ষা করার কোন সম্ভাবনা দেখছে না তারা। সময়মত টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় এখন যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি।
সড়কটি দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রামগতি উপজেলা সদর আলেকজান্ডার বাজার, উপজেলা পরিষদ, রামগতি থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিবিরহাট ও রামগতি বাজারে যাতায়াত করে থাকেন এ অঞ্চলের অর্ধ লাখ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। রাস্তাটি ধসে পড়লে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী বলেন, “এ রাস্তার পাশেই মেঘনা নদী। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল নদীর তীরবর্তী এ সড়কটি ধরে রাখতে বর্ষার আগেই ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ উদাসীন ও অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। এখন যেকোনভাবেই রাস্তাটি রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন।”
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, “পুরাতন বেড়ীবাঁধটি ভেঙে গেলে ঐতিহ্যবাহী রামগতি বাজার ও আশেপাশের বাড়িঘর মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা আতঙ্কে রয়েছি। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। যেন তার কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, “গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের আঘাতে এ অঞ্চলের অনেকগুলো রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে। এমন অবস্থায় বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তারা খুব দ্রুত কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।”
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, “অতিরিক্ত জোয়ারের আঘাতে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি রক্ষা করতে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ ম প র ব যবস থ উপজ ল সড়ক র র মগত
এছাড়াও পড়ুন:
৬ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই বেয়ে
দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় একটি সেতু কাজে আসছে না। দুর্ভোগও শেষ হচ্ছে না ২০ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের। বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বয়স্ক মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। বাঁশের চওড়া মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার হতে হচ্ছে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক করতে হলে একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাই সড়কটি ঠিক রাখার জন্য আন্ডারপাস করা হবে। এ জন্য খরচও বাড়বে। নতুন করে নকশা ও বাজেট করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। প্রকল্প পাস হলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ ধরা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটির পশ্চিম পারে গাছের তৈরি মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করা হয়েছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
কথা হয় পূর্ব খেকুয়ানী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব
আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডাক্তার দেহাইতে আমতলী গেছিলাম। এই ব্রিজটা পাড়াইতে মোর ব্যামালা কষ্ট অইছে। ওঠতে আর নামতে ঠ্যাং (পা) কাঁপে।
বাইনবুনিয়া গ্রামের তালেব আলী জানান, আমড়াগাছিয়া বাজারে কাম আছিল। হেই লইগ্যা এইহান দিয়া আইছি। ব্রিজে রাস্তা নাই; ওঠতে হোয়স (শ্বাস) গরম অইয়া যায়।
উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজার। এ বাজারের পশ্চিম পাশের গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকার কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৯ মে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের জুন মাসে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও বিপত্তি বাধে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের ঢালের ৫ ফুটের মধ্যে রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানী গুচ্ছগ্রামের চলাচলের কার্পেটিং সড়ক। সেতুর নকশা ও উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারাদেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন।
ঠিকাদার কাওছার মিয়া বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মূল সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যারা কাজ পাবে তারা করবে। তিনি আরও বলেন, নকশা বদল হওয়ায় কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।