সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে দৃষ্টি হারানো মুবিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

পেশায় একজন কম্পিউটার অপারেটর মুবিন। জুলাই আন্দোলনে দুই চোখের দৃষ্টি মারাত্মকভাবে হারাতে বসে কিশোর মুবিন।

১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলি তার বাম চোখের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান চোখের পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়া মুবিনকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে এবং পরে বেসরকারি ভিশন আই হাসপাতালে তার একাধিক অপারেশন সম্পন্ন হয়।

বাবা হারা মুবিন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ভিশন আই হাসপাতালে তার চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান না থাকায় বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি মুবিন ও তার মা মিডিয়ায় তুলে ধরেন।

বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসলে সোমবার তার নির্দেশে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা.

মো. রফিকূল ইসলাম ছুটে যান মুবিনের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে তিনি তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা এবং আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেন। একইসঙ্গে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে মুবিনকে আশ্বস্ত করেন।

সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ডা. মো. রফিকূল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে সরকারের উদাসীনতা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রায়শই দেখা যায়, আহতরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আন্দোলন করছে। সরকারের উচিত এই বিষয়ে আরও মানবিক ও যত্নবান হওয়া।

তিনি আরও বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে জুলাই আন্দোলন হয়েছিল, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে গত ১৬ বছর ধরে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। সেই স্বপ্নকে ভঙ্গ করার হীন চক্রান্ত এখন দৃশ্যমান। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার প্রক্রিয়া চলছে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অথচ এখন সেই নির্বাচন নিয়েও গড়িমসি করা হচ্ছে। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে ডিসেম্বরে নির্বাচন না দিয়ে এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক। এপ্রিল মাস বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, তখন এসএসসি পরীক্ষা থাকে— এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে নির্বাচন সাধারণত শীতকালে হয়। সুতরাং, এ ধরনের একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সরকার যদি ডিসেম্বরে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে, তা হবে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক।

এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ এমনই এক ভূখণ্ড, যেখানে প্রকৃতি আর রাজনীতি একসঙ্গে হেঁটে চলে। রাজনীতি আমাদের নিত্যজীবনের অজানা এক সুর, যার বাঁশি বাজে কখনও মধুর, কখনও বিষণ্ন। এই দেশের গণতন্ত্রও যেন সেই সুরেরই অন্তর্গত এক সংগীত। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। প্রথম দশকে গণতন্ত্রের কাঠামো হোঁচট খেতে শুরু করে সামরিক শাসন ও একদলীয় নীতির ভারে। কিন্তু এই দেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। 

১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের পতন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুথান ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারও সেই আশা পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে এই যাত্রাপথ মসৃণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা, অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, এসব যেন গণতন্ত্রের মঞ্চে অনাহূত দর্শক। তবুও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠনের ধারা অব্যাহত আছে, যা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কেবল নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় নয়, বরং কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চায় নিহিত। সংসদে বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সুশাসন– এসব উপাদান মিলেই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলোতে আজও অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা কিংবা প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ– এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষীণ করে। আবার বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা, ধ্বংসাত্মক আচরণও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নষ্ট করে। বড় আশার কথা, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কিংবা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব, সবই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ দিতে পারে। এই তরুণ শক্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের বাহক। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন কৃষকের মাঠ থেকে শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও দরকার মাটির ঘ্রাণ, জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণ। দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে রাজনীতি গড়ে উঠলে ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্ব নয়, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকশিত হলে, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আজ রাজনীতির গুণগত মানের দিকে তাকিয়ে আছে, শুধু ভোটের সংখ্যার দিকে নয়।

গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, যেখানে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, সংলাপের প্রতি বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকা চাই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন এক স্নিগ্ধ প্রভাতের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে নদীর মতোই প্রবহমান গণতন্ত্র, মাঠের ফুলের মতোই সহিষ্ণু রাজনীতি, আর আকাশের পাখির মতোই মুক্ত মতপ্রকাশ। 

জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও নির্বাচন—দুটোই চাই: মির্জা ফখরুল
  • সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করার দাবি পুনর্ব্যক্ত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া