আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
Published: 17th, September 2025 GMT
আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে ফিরেছি এক প্রবল উদ্বেগ নিয়ে। ফেরার সময় আমার মনে হয়েছে আমেরিকার গণতন্ত্রপ্রেমীদের হাতে দেশটির গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই শুরু করার জন্য আর মাত্র ৪০০ দিন হাতে আছে।
আগামী বছরের শরতে যদি এমন এক কংগ্রেস গঠিত হয়, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার লাগাম টানতে পারবে, তাহলেই নির্বাহী ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের প্রস্তুতির জন্য পরের ৭০০ দিন কাজে লাগানো যাবে। এটাই এই প্রজাতন্ত্রকে রক্ষার একমাত্র পথ। এর নাম দেওয়া যেতে পারে ‘আমেরিকান গণতন্ত্র রক্ষার অভিযান’—প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপ।
এটাকে কি বাড়াবাড়ি বা আতঙ্ক ছড়ানো বলা যায়? আমার মনে হয় না। কারণ, গত গ্রীষ্মে সাত সপ্তাহ আমেরিকায় কাটিয়ে আমি দেখেছি ট্রাম্প কী ভয়ানক গতিতে ও নির্মমতায় দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে ভেঙে দিচ্ছেন। আরও হতাশাজনক ব্যাপার হলো তাঁর বিরুদ্ধে সেখানে প্রতিরোধ প্রায় নেই বললেই চলে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলে, একবার কোনো উদার গণতন্ত্র ভাঙতে শুরু করলে সেটিকে পুনর্গঠন করা প্রায় অসম্ভব। ধ্বংস করা সহজ, কিন্তু নতুন করে গড়া ভীষণ কঠিন।
তাই দল বা মত যা–ই হোক, সব গণতন্ত্রপন্থীরই এখন কামনা করা উচিত—২০২৬ সালের ৩ নভেম্বর প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে ফিরুক। ডেমোক্র্যাটদের নীতি বা নেতৃত্ব নয় (যা নিজেই দুর্বল ও এলোমেলো); বরং গণতন্ত্রের স্বার্থেই তা ফিরুক।
সংবিধান কংগ্রেসকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী করেছে। কিন্তু রিপাবলিকানরা (যাঁরা এখন ট্রাম্পের ভয়ে ও প্রভাবে বন্দী) যতক্ষণ দুই কক্ষই নিয়ন্ত্রণে রাখবে, ততক্ষণ সেই দায়িত্ব পালিত হবে না।
অনেকে এই পরিস্থিতির সঙ্গে তিরিশের দশকের ইউরোপের কর্তৃত্ববাদী উত্থান বা হাঙ্গেরির ভিক্তর অরবানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশলের তুলনা করছেন। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আমেরিকার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন নির্বাহী শাখার অতিরিক্ত ক্ষমতা, নির্বাচনী সীমানা কারসাজি, রাজনৈতিক সহিংসতার গভীর শিকড়, আর এক স্বৈরশাসককে সহায়তা করে এমন চরম পুঁজিবাদী প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি।
সম্প্রতি আবার ডানপন্থী কর্মী চার্লি কার্ককে গুলি করা হয়েছে। হত্যাকারীর পরিচয় প্রকাশের আগেই ইলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছেন, ‘বামপন্থীরাই হত্যাকারীদের দল’। আর ট্রাম্প দায় চাপালেন ‘চরম বামপন্থীদের ঘৃণা ছড়ানো বক্তৃতা’র ওপর।আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের অতিরিক্ত ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এই রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তা ছিল। বিপ্লবী যুদ্ধের নায়ক প্যাট্রিক হেনরি সংবিধান অনুমোদনের বিরোধিতা করেছিলেন এই আশঙ্কায়, কোনো একদিন কোনো অপরাধী প্রেসিডেন্ট কার্যত ‘আমেরিকার সিংহাসনে’ বসে পড়তে পারেন। পরে ২০ শতকে দুই দলের প্রেসিডেন্টই ধীরে ধীরে সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের অস্পষ্ট ‘নির্বাহী ক্ষমতা’ আরও বাড়াতে থাকেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রক্ষণশীল সুপ্রিম কোর্টও এই ক্ষমতার ব্যাপক ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ইউনিটারি এক্সিকিউটিভ থিওরি’র পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এখন ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সালের মতো অপ্রস্তুত নয়। এই বাড়তি ক্ষমতা ও ফাঁকফোকর নির্মমভাবে কাজে লাগাচ্ছে তারা। তারা এখন আইন ভাঙছে, আদালতের রায় মানছে না।
একইভাবে নির্বাচনী সীমানা কারসাজির সমস্যাও বহু পুরোনো। ‘গেরিম্যান্ডারিং’ (নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে কারসাজি করা, যাতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী বাড়তি সুবিধা পায়) শব্দটি চালু হয়েছিল ১৮১২ সালে। কিন্তু আজকের বিভক্ত আমেরিকান রাজনীতিতে এটা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আরও পড়ুনচার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ট্রাম্প এখন আইন ভাঙছেন, আদালতের রায় মানছেন না.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র ক ষমত র আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান
ঢাকা-৮ আসনে দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান। তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার জনগণের পবিত্র আমানত, এটি সচেতনভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জননেতা সাইফুল হক-এর ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।
গণসংযোগের শুরুতে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়।
সেখানে আকবর খান বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে অবিলম্বে ভোটের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে—২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে—ঢাকা-৮ আসনের বহু নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যে তরুণের এখন বয়স ২৫ বা ২৬, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তা জানে না- এটি গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৬-১৭ বছর ধরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমাদের নেতা সাইফুল হক জনগণের ভোটাধিকারের আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করে আসছেন। এর জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি থেমে থাকেননি। ভোটাধিকার গণমানুষের দীর্ঘ লড়াই ও ত্যাগের ফসল। এই অধিকার ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”
আকবর খান বলেন, “জননেতা সাইফুল হক গণমানুষের পরীক্ষিত নেতা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের জনগণ যেন তাকে ভোট দিয়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ও দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস সংসদে তুলে ধরার সুযোগ করে দেন- এটাই আমাদের আহ্বান।”
গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল, কমলাপুর, ফকিরাপুল, কালভার্ট রোড হয়ে বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সিকদার হারুন মাহমুদ, মীর রেজাউল আলম, কবি জামাল সিকদার, ফাইজুর রহমান মুনির, বাবর চৌধুরী, মহানগর নেতা যুবরান আলী জুয়েল, সালাউদ্দিন, রিয়েল মাতবর, আরিফুল ইসলাম, মুজিবুল হক চুন্নু, গোলাম রাজিব, মাহমুদুল হাসান খান, ফয়েজ ইবনে জাফর, নান্টু দাস, শিবু মহন্ত ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
ঢাকা/এএএম/এস