গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় বড় দ্বার খুলল
Published: 15th, June 2025 GMT
দেশ থেকে রাজনৈতিক গুমোট ভাব কিছু কাটল এ সপ্তাহে। ঈদের আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে হলো তার শুভসূচনা; আর লম্বা ছুটি শেষের ঠিক আগে আভাস মিলল নির্বাচনের রোডম্যাপের। খানিক ফুরফুরে মনে বাংলাদেশ আবার কর্মজগতে ফিরছে আজ। অর্থনীতিতে লন্ডন বৈঠকের প্রভাব হবে সরাসরি ও ইতিবাচক।
যাঁরা দ্রুত নির্বাচন চাইছিলেন, তাঁদের যুক্তি বেশ গুরুত্ব পেল লন্ডন বৈঠকে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় বড় দ্বার খুলল। একটি জীবন্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ আশা করা যায় সামনের দিনগুলোতে।
ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলো থেকে মানুষ সচরাচর গ্রামে ছুটে যান ঈদে। তবে আগামী ঈদের আগেই হয়তো শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ আবার গ্রামে যাবেন ভোট দিতে। বহুকাল পর সে রকম উৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।
আরও পড়ুনরমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে১৩ জুন ২০২৫নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আনতে পারার কর্তৃত্ব বিএনপি ও সমমনাদের। তবে এরপর তাদের চাওয়ার বড় কিছু থাকছে না আর। ফেব্রুয়ারিতে বাংলায় নতুন করে বসন্ত আসে। নির্বাচন হওয়ামাত্র বিএনপির জন্য এই ‘বসন্ত’ হবে চ্যালেঞ্জের। তার দেওয়ার পালা আসবে তখন। সংস্কারপন্থীদের জন্য ঠিক তখন থেকে শুরু হবে সম্ভাবনার কাল। যে সময়ের প্রত্যাশায় গত শরতে গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছিল ‘আগামী বসন্তে আমরা দ্বিগুণ হব।’ বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারির দিকে যত হাঁটবে, ‘৩৬ জুলাই’ও তত তার সঙ্গ নেবে। এ দেশ একাত্তর ছাড়ছে না, নব্বই মনে রেখেছে, চব্বিশের আকাঙ্ক্ষা থেকেও পিছু হটবে না।
আরও পড়ুনলন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো ৪ ঘণ্টা আগেদেশের জন্য অকাতরে রক্ত দিতে শিখে ফেলা মানুষ ভয়ংকর। তারেক রহমান নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কোটি কোটি বোবা-প্রত্যাশার সামনে কত বড় ঝুঁকিতে আছেন তিনি। প্রায় ছিন্নভিন্ন অবস্থা থেকে তিনি দলকে একটি সোনালি সময়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছেন; কিন্তু এই মুহূর্তকে দীর্ঘস্থায়ী করা তাঁর দলের কর্মীদের দ্বারা বেশ কঠিন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, এটা পাওয়ার সময়; কিন্তু এটা আসলে দেওয়ার সময় এবং তরুণ প্রজন্ম চাইছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু; বিপুল কিছু। সেই প্রত্যাশায় আছে নতুন ধাঁচের প্রশাসন, নতুন স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নতুন শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার কাঠামো এবং বিপুল কাজের সুযোগ। পুরোনো দিনের সচিবালয়, ভূমি অফিস বা থানাগুলোর চেনা সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ আর ফিরতে চায় না, বিদেশনীতিতে সাহস আর ভারসাম্যের মেলবন্ধন চায়। ‘লাল জুলাই’ এ রকম দারুণ সব আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। এসবের ফয়সালা যে কত দুরূহ, তার প্রমাণ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্র ও সমাজ বদলের রাজনৈতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া মানুষ ছাড়া যে এসব লক্ষ্যের দিকে এগোনো কঠিন, তার সাক্ষী গত ১০ মাস। তবে গণ–অভ্যুত্থানের সরকার দ্রুত টের পেয়েছে, কী ঘটে গেছে এবং কী ঘটানো সম্ভব নয়। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাঁরা শাসনক্ষমতা ভোটারদের পছন্দের হাতে স্থানান্তর করতে ইচ্ছুক এখন। এটা শুভ ও স্বস্তিকর মুহূর্ত।
আরও পড়ুনইউনূস-তারেকের ‘সন্তুষ্টি’তে স্বস্তি টেকসই হবে কি ১৪ জুন ২০২৫মানুষের আশা—ক্ষমতার ভবিষ্যৎ পালাবদল বাংলাদেশকে মবের অরাজকতা থেকে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে নেবে। মতামতের ফারাক থাকলেও ‘৩৬ জুলাই’র যৌথ সাধারণ ইচ্ছাগুলোতে পরস্পরকে টেনে ধরে রাখবেন নাগরিকেরা। গণতান্ত্রিক সম্মতিতে ধাপে ধাপে ঔপনিবেশিক আইনকানুন ও প্রশাসন বদলাবে। কমে আসবে সব বৈষম্য। লেখক লিখতে বসে সেল্ফ-সেন্সরশিপে ভুগবেন না।
● আলতাফ পারভেজ গবেষক ও লেখক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কেন ইরানি হামলার লক্ষ্যবস্তু হাইফা
ইরান-ইসরায়েলের হামলা পাল্টা-হামলায় সাম্প্রতিক সময়ে তেল আবিবের পরেই ইসরায়েলের যে শহরটির নাম সবচেয়ে বেশি এসেছে, সেটি দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী ‘হাইফা’। শহরটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, হামলার পর শহরটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়েছে, শনিবার হাইফা ও তেল আবিব লক্ষ্য করে ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। যার মধ্যে অনেকগুলোই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলেও দাবি করেছে ইরান। চ্যানেল টুয়েলভ, টাইমস অব ইসরায়েলসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো হাইফায় বিস্ফোরণ ও বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের খবর দিয়েছে।
ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় হাইফাকে কেন লক্ষ্যবস্তু করছে ইরান– এই প্রশ্নের উত্তরে ওয়াশিংটন পোস্টসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটির অবস্থান এই শহরে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারসহ আরও কয়েকটি তেল শোধনাগার ও বহু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক কারখানা হাইফায় অবস্থিত।
হাইফা ইসরায়েলের প্রধান গভীর সমুদ্রবন্দর। কয়েক শতাব্দী ধরেই অঞ্চলটির অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হাইফাকে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এখান থেকে পরিচালিত হয়। এমনকি দেশটির মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই হাইফা বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয় বলে জানিয়েছে তারা।
হাইফায় অবস্থিত নৌঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও রাসায়নিক কারখানাগুলো তেল আবিবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অঞ্চলটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে হাইফায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম মোতায়েনসহ নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরায়েল। হাইফায় গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস অবকাঠামো থাকায় ইরানি হামলা প্রত্যাশিতই ছিল বলে উল্লেখ করেছে আলজাজিরা।
আলজাজিরা জানিয়েছে, হাইফায় ইরানের হামলা ইঙ্গিত দেয়, তেহরান অঙ্গীকার অনুযায়ী পাল্টা জবাব দিচ্ছে। এর আগে তেহরান বলেছিল, ইসরায়েল ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো বা জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালালে তারাও একই রকম জবাব দেবে।