দেশ থেকে রাজনৈতিক গুমোট ভাব কিছু কাটল এ সপ্তাহে। ঈদের আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে হলো তার শুভসূচনা; আর লম্বা ছুটি শেষের ঠিক আগে আভাস মিলল নির্বাচনের রোডম্যাপের। খানিক ফুরফুরে মনে বাংলাদেশ আবার কর্মজগতে ফিরছে আজ। অর্থনীতিতে লন্ডন বৈঠকের প্রভাব হবে সরাসরি ও ইতিবাচক।

যাঁরা দ্রুত নির্বাচন চাইছিলেন, তাঁদের যুক্তি বেশ গুরুত্ব পেল লন্ডন বৈঠকে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় বড় দ্বার খুলল। একটি জীবন্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ আশা করা যায় সামনের দিনগুলোতে। 

ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলো থেকে মানুষ সচরাচর গ্রামে ছুটে যান ঈদে। তবে আগামী ঈদের আগেই হয়তো শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ আবার গ্রামে যাবেন ভোট দিতে। বহুকাল পর সে রকম উৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।

আরও পড়ুনরমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে১৩ জুন ২০২৫

নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আনতে পারার কর্তৃত্ব বিএনপি ও সমমনাদের। তবে এরপর তাদের চাওয়ার বড় কিছু থাকছে না আর। ফেব্রুয়ারিতে বাংলায় নতুন করে বসন্ত আসে। নির্বাচন হওয়ামাত্র বিএনপির জন্য এই ‘বসন্ত’ হবে চ্যালেঞ্জের। তার দেওয়ার পালা আসবে তখন। সংস্কারপন্থীদের জন্য ঠিক তখন থেকে শুরু হবে সম্ভাবনার কাল। যে সময়ের প্রত্যাশায় গত শরতে গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছিল ‘আগামী বসন্তে আমরা দ্বিগুণ হব।’ বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারির দিকে যত হাঁটবে, ‘৩৬ জুলাই’ও তত তার সঙ্গ নেবে। এ দেশ একাত্তর ছাড়ছে না, নব্বই মনে রেখেছে, চব্বিশের আকাঙ্ক্ষা থেকেও পিছু হটবে না। 

আরও পড়ুনলন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো ৪ ঘণ্টা আগে

দেশের জন্য অকাতরে রক্ত দিতে শিখে ফেলা মানুষ ভয়ংকর। তারেক রহমান নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কোটি কোটি বোবা-প্রত্যাশার সামনে কত বড় ঝুঁকিতে আছেন তিনি। প্রায় ছিন্নভিন্ন অবস্থা থেকে তিনি দলকে একটি সোনালি সময়ের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছেন; কিন্তু এই মুহূর্তকে দীর্ঘস্থায়ী করা তাঁর দলের কর্মীদের দ্বারা বেশ কঠিন। তাঁরা হয়তো ভাবছেন, এটা পাওয়ার সময়; কিন্তু এটা আসলে দেওয়ার সময় এবং তরুণ প্রজন্ম চাইছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু; বিপুল কিছু। সেই প্রত্যাশায় আছে নতুন ধাঁচের প্রশাসন, নতুন স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নতুন শিক্ষা ও স্থানীয় সরকার কাঠামো এবং বিপুল কাজের সুযোগ। পুরোনো দিনের সচিবালয়, ভূমি অফিস বা থানাগুলোর চেনা সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ আর ফিরতে চায় না, বিদেশনীতিতে সাহস আর ভারসাম্যের মেলবন্ধন চায়। ‘লাল জুলাই’ এ রকম দারুণ সব আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছে। এসবের ফয়সালা যে কত দুরূহ, তার প্রমাণ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্র ও সমাজ বদলের রাজনৈতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া মানুষ ছাড়া যে এসব লক্ষ্যের দিকে এগোনো কঠিন, তার সাক্ষী গত ১০ মাস। তবে গণ–অভ্যুত্থানের সরকার দ্রুত টের পেয়েছে, কী ঘটে গেছে এবং কী ঘটানো সম্ভব নয়। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তাঁরা শাসনক্ষমতা ভোটারদের পছন্দের হাতে স্থানান্তর করতে ইচ্ছুক এখন। এটা শুভ ও স্বস্তিকর মুহূর্ত। 

আরও পড়ুনইউনূস-তারেকের ‘সন্তুষ্টি’তে স্বস্তি টেকসই হবে কি ১৪ জুন ২০২৫

মানুষের আশা—ক্ষমতার ভবিষ্যৎ পালাবদল বাংলাদেশকে মবের অরাজকতা থেকে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে নেবে। মতামতের ফারাক থাকলেও ‘৩৬ জুলাই’র যৌথ সাধারণ ইচ্ছাগুলোতে পরস্পরকে টেনে ধরে রাখবেন নাগরিকেরা। গণতান্ত্রিক সম্মতিতে ধাপে ধাপে ঔপনিবেশিক আইনকানুন ও প্রশাসন বদলাবে। কমে আসবে সব বৈষম্য। লেখক লিখতে বসে সেল্ফ-সেন্সরশিপে ভুগবেন না। 


● আলতাফ পারভেজ গবেষক ও লেখক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ