Prothomalo:
2025-09-17@21:11:08 GMT

‘হায়া’ মানে শুধু শালীনতা নয়

Published: 17th, June 2025 GMT

ইসলাম মানুষকে উত্তম চরিত্রের শিখরে পৌঁছানোর পথ দেখায়। মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে শুধু উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় পৌঁছাতে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮,৯৫২)

উত্তম চরিত্র গড়ে তুলতে ইসলাম কিছু মৌলিক গুণের ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে হায়া অন্যতম। হায়া শুধু লজ্জা বা শালীনতা নয়, বরং এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অশোভন আচরণ থেকে বিরত রাখে। মহানবী (সা.

) বলেছেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১)

প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১হায়া কী

হায়া আরবি শব্দ হায়াত (জীবন) থেকে এসেছে, কারণ প্রাচীন আরবরা বিশ্বাস করত, হায়া ছাড়া মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ। এটি লজ্জা, শালীনতা, সংযম ও সচেতনতার সমন্বয়, যা মানুষকে অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখে।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫)

আধুনিক যুগে লজ্জার ধারণা ব্যক্তিবাদের কারণে নেতিবাচক হয়ে উঠলেও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সুস্থ লজ্জা আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ সতর্কতা হিসেবে কাজ করে।

কোরআনে হায়ার সূচনা দেখা যায় আদম ও হাওয়া (আ.)-এর ঘটনায়। নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাঁরা তাঁদের নগ্নতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকেছিলেন (সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ১২১)।

কেননা, হায়া প্রতিটি মানুষের ফিতরাতে (সৃষ্টিজাত স্বভাব) রয়েছে। ইসলাম হায়াকে ইমানের অংশ বলে আরও শক্তিশালী করেছে, যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর শাস্তির ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকে।

হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.), আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫আরও পড়ুনশিক্ষাদানে মহানবীর (সা.) ১২ কৌশল১৩ মে ২০২৫কোরআন ও সুন্নাহতে হায়া

মুসা (আ.) মাদিয়ানের কূপে দুই নারীকে সাহায্য করার পর প্রতিদান না চেয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে চলে যান, যা তাঁর শালীনতার প্রকাশ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৪)। একই সুরায় একজন নারী হায়ার সঙ্গে মুসা (আ.)-কে তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান, যা তার কণ্ঠ ও আচরণে প্রতিফলিত হয়। (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৫)

নবীজি (সা.) হায়াকে ইমানের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ‘হায়া ও ইমান একসঙ্গে জোড়া; একটি উঠে গেলে অপরটিও চলে যায়।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৫৮)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম’ (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস: ২,৮৮৫)। তিনি বলেছেন, ‘হায়া শুধু কল্যাণ বয়ে আনে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৭)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম।’নবী ও সাহাবিদের জীবনে হায়া

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ হায়াসম্পন্ন ও উদার; যখন কেউ তাঁর কাছে হাত তোলে, তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৫৬)

হায়া আল্লাহর মহত্ত্ব ও দয়ার প্রকাশ। তিনি পাপ গোপন রাখতে ভালোবাসেন, কিন্তু যারা নিজের পাপ প্রকাশ করে, তারা এই রক্ষাকবচ হারায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৭২১)

নবীদের জীবনে হায়া ছিল তাঁদের চরিত্রের প্রধান অলংকার। মুসা (আ.)-এর তীব্র হায়ার কারণে আল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ থেকে তাঁকে মুক্ত করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮)

আমাদের নবীজি (সা.) ছিলেন এমন লজ্জাশীল, যখন তিনি কিছু অশোভন দেখতেন তাঁর চেহারায় অপছন্দের ভাব ফুটে উঠত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১০২)

মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)

সাহাবিদের মধ্যে ওসমান (রা.)-এর হায়া এত বেশি ছিল যে ফেরেশতারাও তাঁর সম্মানে লজ্জা পেতেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪০১)। ওমর (রা.)-এর কবরের পাশে যেতেও আয়েশা (রা.) হিজাব পরতেন হায়ার কারণে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫,৬৬০)।

ফাতিমা (রা.) মৃত্যুর পরও তাঁর শরীরের আকৃতি গোপন রাখতে বিশেষ কাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩৯)।

প্রথম প্রজন্মের মুসলিমরা, যেমন ফুজায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.), অন্ধকারেও আল্লাহর প্রতি হায়া পোষণ করতেন।

আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)হায়া গড়ে তোলার উপায়

হায়া গড়ে তুলতে কয়েকটি পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমত, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা হায়াকে জাগিয়ে তোলে। ইবনুল কাইয়্যিম বলেন (রহ.), ‘যে আল্লাহর গুণের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করে, সে তাঁর নৈকট্য লাভ করে।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৫০)

দ্বিতীয়ত, হায়ার চর্চা, যেমন দৃষ্টি নত করা বা হিজাব পরা, এটিকে পুনরুজ্জীবিত করে। (সুরা আল-আ’রাফ, ৭:২৭)

তৃতীয়ত, আল্লাহর গুণাবলি, যেমন আর-রাকিব (পর্যবেক্ষক) বা আল-বাসির (সর্বদ্রষ্টা), সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন হায়াকে শক্তিশালী করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘পাপ করার সময় তোমার ডানে-বাঁয়ে ফেরেশতাদের উপস্থিতি ভুলে যাওয়া পাপের চেয়েও বড়।’

চতুর্থত, আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত স্মরণ করা হায়া জাগায়। আল-জুনায়দ বলেন, ‘হায়া হলো নিয়ামত দেখা এবং নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করা।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৭৫)

পঞ্চমত, নিয়মিত ইবাদত করা। যেমন নামাজ অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)। ষষ্ঠত, সৎসঙ্গ এবং সাহাবিদের জীবনী পড়া হায়াকে অনুপ্রাণিত করে।

সপ্তমত, সততা আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনে, যা হায়ার ভিত্তি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সততা পুণ্যের দিকে নিয়ে যায়, আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০৯৪)

হায়া ইসলামের প্রাণ। এটি শুধু লজ্জা নয়, বরং আল্লাহ ও মানুষের সামনে আমাদের আত্মমর্যাদা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি নবীদের উত্তরাধিকার এবং আল্লাহর প্রিয় গুণ।

সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুনঘড়ির চাপে কি আমাদের ইবাদতের ক্ষতি হচ্ছে২২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ম ক দ দ ম সহ হ ব খ র চর ত র র জন য আম দ র বল ছ ন আল ল হ র জ বন শ ল নত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কেচ জেলার শেরবান্দি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অভিযান চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। একই অভিযানে ‘ভারত-সমর্থিত’ পাঁচজন সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। খবর সামা টিভির।

আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, শেরবান্দি এলাকায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা ধ্বংসে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছিল। এ সময় একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর গাড়ি আঘাতপ্রাপ্ত হয়, এতে পাঁচজন সেনা নিহত হন। 

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানকে সহজেই হারিয়ে ‘সুপার ফোরে’ এক পা ভারতের

ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানের মামুলি সংগ্রহ

নিহত সেনারা হলেন- ক্যাপ্টেন ওয়াকার আহমদ (লোরালাই), নায়েক আসমাতুল্লাহ (ডেরা গাজী খান), ল্যান্স নায়েক জুনায়েদ আহমদ (সুক্কুর), ল্যান্স নায়েক খান মোহাম্মদ (মারদান) এবং সিপাহী মোহাম্মদ জাহুর (সোয়াবি)।

আইএসপিআর বলেছে, পাকিস্তানের সাহসী অফিসার ও সেনাদের ত্যাগ দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলের দৃঢ় সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে। শুধু গত এক সপ্তাহেই খাইবার পাখতুনখোয়ার বিভিন্ন অভিযানে অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়ার লালকিলা মাইদান এলাকায় ‘ভারত সমর্থিত সন্ত্রাসী’দের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সাতজন সেনা সদস্য নিহত হন।

পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, এসব অভিযানে তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং অপারেশন চলমান থাকবে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত