Prothomalo:
2025-08-02@05:06:08 GMT

‘হায়া’ মানে শুধু শালীনতা নয়

Published: 17th, June 2025 GMT

ইসলাম মানুষকে উত্তম চরিত্রের শিখরে পৌঁছানোর পথ দেখায়। মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে পাঠানো হয়েছে শুধু উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় পৌঁছাতে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮,৯৫২)

উত্তম চরিত্র গড়ে তুলতে ইসলাম কিছু মৌলিক গুণের ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে হায়া অন্যতম। হায়া শুধু লজ্জা বা শালীনতা নয়, বরং এটি এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অশোভন আচরণ থেকে বিরত রাখে। মহানবী (সা.

) বলেছেন, ‘প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।’ (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১)

প্রতিটি ধর্মের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো হায়া।সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪,১৮১হায়া কী

হায়া আরবি শব্দ হায়াত (জীবন) থেকে এসেছে, কারণ প্রাচীন আরবরা বিশ্বাস করত, হায়া ছাড়া মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ। এটি লজ্জা, শালীনতা, সংযম ও সচেতনতার সমন্বয়, যা মানুষকে অনৈতিক কাজ থেকে দূরে রাখে।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫)

আধুনিক যুগে লজ্জার ধারণা ব্যক্তিবাদের কারণে নেতিবাচক হয়ে উঠলেও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সুস্থ লজ্জা আমাদের ভুল সংশোধনের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ সতর্কতা হিসেবে কাজ করে।

কোরআনে হায়ার সূচনা দেখা যায় আদম ও হাওয়া (আ.)-এর ঘটনায়। নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তাঁরা তাঁদের নগ্নতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে পাতা দিয়ে নিজেদের ঢেকেছিলেন (সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ১২১)।

কেননা, হায়া প্রতিটি মানুষের ফিতরাতে (সৃষ্টিজাত স্বভাব) রয়েছে। ইসলাম হায়াকে ইমানের অংশ বলে আরও শক্তিশালী করেছে, যাতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাঁর শাস্তির ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকে।

হায়া মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ, যা ছাড়া মানবতার কোনো অংশ থাকে না। এটি ছাড়া কেউ অতিথির সেবা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা বা পবিত্রতা বজায় রাখতে পারে না।ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.), আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ২৫আরও পড়ুনশিক্ষাদানে মহানবীর (সা.) ১২ কৌশল১৩ মে ২০২৫কোরআন ও সুন্নাহতে হায়া

মুসা (আ.) মাদিয়ানের কূপে দুই নারীকে সাহায্য করার পর প্রতিদান না চেয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে চলে যান, যা তাঁর শালীনতার প্রকাশ (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৪)। একই সুরায় একজন নারী হায়ার সঙ্গে মুসা (আ.)-কে তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান, যা তার কণ্ঠ ও আচরণে প্রতিফলিত হয়। (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৫)

নবীজি (সা.) হায়াকে ইমানের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, ‘হায়া ও ইমান একসঙ্গে জোড়া; একটি উঠে গেলে অপরটিও চলে যায়।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৫৮)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম’ (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস: ২,৮৮৫)। তিনি বলেছেন, ‘হায়া শুধু কল্যাণ বয়ে আনে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১১৭)

ইসলামি আইনে হায়ার সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। যেমন কাউকে লজ্জার চাপে তার অধিকার ছাড়তে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিমের সম্পত্তি তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নেওয়া হারাম।’নবী ও সাহাবিদের জীবনে হায়া

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ হায়াসম্পন্ন ও উদার; যখন কেউ তাঁর কাছে হাত তোলে, তিনি তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৫৬)

হায়া আল্লাহর মহত্ত্ব ও দয়ার প্রকাশ। তিনি পাপ গোপন রাখতে ভালোবাসেন, কিন্তু যারা নিজের পাপ প্রকাশ করে, তারা এই রক্ষাকবচ হারায়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,৭২১)

নবীদের জীবনে হায়া ছিল তাঁদের চরিত্রের প্রধান অলংকার। মুসা (আ.)-এর তীব্র হায়ার কারণে আল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ থেকে তাঁকে মুক্ত করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮)

আমাদের নবীজি (সা.) ছিলেন এমন লজ্জাশীল, যখন তিনি কিছু অশোভন দেখতেন তাঁর চেহারায় অপছন্দের ভাব ফুটে উঠত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১০২)

মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)

সাহাবিদের মধ্যে ওসমান (রা.)-এর হায়া এত বেশি ছিল যে ফেরেশতারাও তাঁর সম্মানে লজ্জা পেতেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪০১)। ওমর (রা.)-এর কবরের পাশে যেতেও আয়েশা (রা.) হিজাব পরতেন হায়ার কারণে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৫,৬৬০)।

ফাতিমা (রা.) মৃত্যুর পরও তাঁর শরীরের আকৃতি গোপন রাখতে বিশেষ কাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩৯)।

প্রথম প্রজন্মের মুসলিমরা, যেমন ফুজায়েল ইবনে আয়াজ (রহ.), অন্ধকারেও আল্লাহর প্রতি হায়া পোষণ করতেন।

আরও পড়ুনইসলাম সম্পর্কে কীভাবে শিখবেন০৮ জুন ২০২৫মিরাজের রাতে অন্য নবীদের পরামর্শে বারবার নামাজের সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে যাওয়ার পরে, শেষে ৫ ওয়াক্তের পরে আর ফিরে যাননি, কারণ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লজ্জায় পড়ে গেছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,৫১৭)হায়া গড়ে তোলার উপায়

হায়া গড়ে তুলতে কয়েকটি পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমত, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা হায়াকে জাগিয়ে তোলে। ইবনুল কাইয়্যিম বলেন (রহ.), ‘যে আল্লাহর গুণের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করে, সে তাঁর নৈকট্য লাভ করে।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৫০)

দ্বিতীয়ত, হায়ার চর্চা, যেমন দৃষ্টি নত করা বা হিজাব পরা, এটিকে পুনরুজ্জীবিত করে। (সুরা আল-আ’রাফ, ৭:২৭)

তৃতীয়ত, আল্লাহর গুণাবলি, যেমন আর-রাকিব (পর্যবেক্ষক) বা আল-বাসির (সর্বদ্রষ্টা), সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন হায়াকে শক্তিশালী করে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘পাপ করার সময় তোমার ডানে-বাঁয়ে ফেরেশতাদের উপস্থিতি ভুলে যাওয়া পাপের চেয়েও বড়।’

চতুর্থত, আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত স্মরণ করা হায়া জাগায়। আল-জুনায়দ বলেন, ‘হায়া হলো নিয়ামত দেখা এবং নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করা।’ (আল-মুকাদ্দিম, ফিকহুল হায়া, পৃ. ১৭৫)

পঞ্চমত, নিয়মিত ইবাদত করা। যেমন নামাজ অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)। ষষ্ঠত, সৎসঙ্গ এবং সাহাবিদের জীবনী পড়া হায়াকে অনুপ্রাণিত করে।

সপ্তমত, সততা আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনে, যা হায়ার ভিত্তি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সততা পুণ্যের দিকে নিয়ে যায়, আর পুণ্য জান্নাতে নিয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০৯৪)

হায়া ইসলামের প্রাণ। এটি শুধু লজ্জা নয়, বরং আল্লাহ ও মানুষের সামনে আমাদের আত্মমর্যাদা ও পবিত্রতার প্রতীক। এটি নবীদের উত্তরাধিকার এবং আল্লাহর প্রিয় গুণ।

সূত্র: ইয়াকিন ইনস্টিটিউট

আরও পড়ুনঘড়ির চাপে কি আমাদের ইবাদতের ক্ষতি হচ্ছে২২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ম ক দ দ ম সহ হ ব খ র চর ত র র জন য আম দ র বল ছ ন আল ল হ র জ বন শ ল নত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলি কূটনীতিকদের আরব আমিরাত ছাড়ার নির্দেশ
  • দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা
  • গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল