সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন চার-পাঁচ বছর আগে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও শেষ বহু আগেই। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত ফল না পেয়ে দিশেহারা নিয়োগপ্রত্যাশীরা। তাই দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী (কলেজ), ল্যাবরেটরি সহকারী এবং সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদের নিয়োগপ্রত্যাশীরা। আজ বুধবার সকালেও মাউশির প্রধান ফটকের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান করতে দেখা গেছে তাদের।

অনশনকারীদের একজন সাদ্দাম হোসেন সমকালকে বলেন, ২০২১ সালে পরীক্ষা দিয়েছি, এখন ২০২৫—এই চার বছরে কত কিছু পাল্টে গেছে, শুধু আমাদের অবস্থানই বদলায়নি। শুধু একটা ফলাফলের অপেক্ষায় জীবনটা আটকে গেছে।

প্রদর্শক পদে আবেদন করা সুমাইয়া আফরিন বলেন, আমার বাবা নেই। সংসার আমার ওপর নির্ভরশীল। ভাইভা শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর, অথচ আজও কোনো ফল নেই। মানসিকভাবে আমরা ভেঙে পড়ছি।

অবশ্য, দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে এরইমধ্যে আন্দোলনকারীরা লিখিতভাবেও মাউশিতে আবেদন জানিয়েছেন। তবে কোন সাড়া মেলেনি। তাই প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২০২১ সালে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ বিলম্বে ২০২৪ সালের এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় এবং মে-জুনে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এখন ২০২৫ সালের জুন—কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত ফল নেই। এতে চাকরির বয়সসীমা পার হওয়ার শঙ্কায়ও পড়েছেন অনেকেই।

এর আগে, আজ সকাল থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরা মাউশি ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন। তারা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানান চূড়ান্ত ফল প্রকাশের। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস বা পদক্ষেপ না পেয়ে দুপুর থেকে তারা আমরণ অনশনে বসেন। পরে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনশনরত এক ফলপ্রত্যাশী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান।

এসময় তারা অভিযোগ করেন, গত চার বছরে বিভিন্ন সময় মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালক, কলেজ প্রশাসন ও উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর বা সমাধান পাওয়া যায়নি। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ নিয়ে বছরের পর বছর ঝুলে থাকার কারণে অনেকের বয়স এখন চাকরির বয়সসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ড় ন ত ফল অবস থ ন পর ক ষ র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের

ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। গত তিন সপ্তাহ ধরে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে এখানকার চরাঞ্চলের মানুষের। নদীতীরসংলগ্ন বেশ কয়েকটি রাস্তা ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। কিছু এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পাউবো বলছে, প্রতি বছর জুন ও জুলাইয়ে নদীতে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন দেখা যায়। গত কয়েক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার শয়তানখালি ঘাট, খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, গোপালপুর ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সদরপুরের আকোটেরচর ইউনিয়নের মুন্সীরচর, পিয়াজখালীরচর, আকোট, আকোটেরচর, ছলেনামা ও খোকারামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। নদী ভাঙতে ভাঙতে এই ঘরগুলোর মাত্র কয়েক গজ দূরে এখন পদ্মা। এ ছাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, নুরুদ্দিন সরদারকান্দি, কাচিকাটা গ্রাম, নন্দলালপুর, ফকিরকান্দি, তালপট্টিরচর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদারকান্দি এবং চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দুর্বারটেক, মফিজদ্দিনেরকান্দি, হাফেজকান্দি, রাড় চরগজারিয়া ও গিয়াস উদ্দীন মুন্সীরকান্দি গ্রাম ভাঙছে। কমপক্ষে ৬০টির বেশি ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এসব ভাঙন এলাকায় কেউ কেউ এখনও নদীর তীরে ঝুঁকি নিয়ে আছেন। বসতঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তারা বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখলেও খুঁটি ও বেড়া সরাচ্ছেন না। তাদের আশা, যদি ভাঙন থেমে যায়।
চরভদ্রাসনের চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারেরডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপিডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামেও ভাঙন চলছে। নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের আইয়ুব শেখ বলেন, ‘নদীর পাশেই আমার ঘর ছিল। হঠাৎ দেখি ফাটল। রাতে ভাঙন বেশি হয়, তাই ঘর ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি সরিয়ে নিয়েছি। যদি না সরাতাম এখন আমার ঘর থাকত নদীতে।’
আকোটেরচর ইউনিয়ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী গ্রামের গুচ্ছগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। বালু তোলেন যারা, তারা প্রভাবশালী–তাই কেউ প্রতিবাদ করতে পারতেন না। প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন নদীভাঙনে তার খেসারত দিচ্ছেন এলাকাবাসী। 
ঢেউখালি ইউনিয়নের শয়তানখালি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কাজী নজরুল। তিনি জানান, পদ্মায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাঁর। 
আকোটেরচর ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার কৃষক ইসমাইল মুন্সি বলেন, প্রতি বছর নদীর তীর কেটে নিচ্ছেন কিছু লোক। এখনও নদীর তীর কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদীভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক বসতবাড়ি।
রিনা বেগম নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কে করে দেবে আমাদের ঘরবাড়ি? সরকার একটি ঘর দিয়েছে সেখানে থাকি। নদী যেভাবে ভাঙছে হয়তো বেশিদিন থাকতে পারব না। ঘর চলে যাবে নদীতে। কীভাবে থাকব, বুঝতে পারছি না।’
গত দুই সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চারটি পরিবারের বাড়ি বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা। তিনি বলেন, ৩ হাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এখনও পদক্ষেপ নেননি তারা।
আকোটেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই নদী ভাঙছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নদীভাঙন নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত তারা ভাঙনরোধে ব্যবস্থা  নেবেন।
গত ২০ দিনে যে স্থানগুলো ভেঙেছে সেখানে নদীর গভীরতা অনেক বেশি। তাই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাদের একটি দল ভাঙনরোধে কাজ করছে। তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন। এরপর ভাঙনরোধে টেকসই স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উচ্চমহলে পাঠানো হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তেহরান থেকে হঠাৎ ওমানে গেল ৩ উড়োজাহাজ
  • সংকট এখনও কাটেনি, বললেন রিজভী
  • পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের
  • প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকে কাতর প্রিয়াঙ্কা
  • ঋণে জর্জরিত ৫ কোম্পানিতে বিএসইসির নজরদারি, কমিটি গঠন
  • শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি
  • সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম
  • সাকিবকে এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম