গরিব পাচ্ছে বিদ্যুৎ ভর্তুকির ছিটেফোঁটা, লাভবান ধনীরা
Published: 3rd, July 2025 GMT
বিদ্যুতের ভর্তুকি বছরে ৬২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে এর বড় অংশ ধনীরা ভোগ করছেন। বিপরীতে গরিবরা ছিটেফোঁটা পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া ভর্তুকির মাত্র ১২ শতাংশের সুবিধাভোগী সবচেয়ে গরিবরা। বিপরীতে ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ (এক-তৃতীয়াংশ) পাচ্ছেন সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ গ্রাহক, যার পরিমাণ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। বৈষম্যমূলক কাঠামোর কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি করছে।
আইএমএফের কারিগরি সহায়তা-সংক্রান্ত খসড়া প্রতিবেদনে এমন চিত্র তুলে ধরে সংস্থাটি ভর্তুকি কমাতে কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি দাম বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। প্রয়োজনে সরাসরি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ। গত ৩০ জুন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ভর্তুকি সংস্কার শীর্ষক এ প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি
২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। গত ১৬ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৮০। অথচ দেশের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা না থাকলেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র বানিয়েছিল। ফলে উৎপাদন না করেও কেন্দ্র মালিকরা প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা সরকার থেকে পেয়েছে, যার প্রভাবে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিডিবির বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট কিনতে লেগেছে ১১ টাকা ৭৪ পয়সা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৬ টাকা ১৮ পয়সা। মাত্র পাঁচ বছরে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এ চাপ সামলাতে তৎকালীন সরকার বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। এখন হয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। এর পরও উৎপাদন খরচের সঙ্গে খুচরা দামের সমতা হয়নি। লোকসান কমাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পিডিবির ভর্তুকি ছিল ৭ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর পর থেকে বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০০, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৫১১, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৪০০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভর্তুকি ৬২ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ-গ্যাস মিলে ভর্তুকি ছিল জিডিপির ১.৩২ শতাংশ। তবে ২০২৩-২৪-এ তা কিছুটা কমে ১.১০ শতাংশ হলেও বাজেটের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে।
আইএমএফ তিন ধাপে ভর্তুকি সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে প্রাথমিক (লাইফলাইন) গ্রাহকদের দাম অপরিবর্তিত রেখে ধনীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এতে ২.১ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি শহরে ১০ এবং গ্রামের জন্য ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে হবে। এতে ৬.১ শতাংশ ভর্তুকি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
মধ্য মেয়াদে সরাসরি ভর্তুকি তুলে দিয়ে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ পরিবারকে মাসে ৪৮৮ টাকা করে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এতে ৬৪ শতাংশ ভর্তুকি কমানো সম্ভব। আর দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ মূল্যকে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধাভোগীদের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করে প্রকৃত দরিদ্রদের ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। এতে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি সাশ্রয় সম্ভব।
পাশাপাশি আইএমএফ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ তথ্য ব্যবস্থাপনা একীভূত, অকার্যকর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থাটি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সরকারকে সংস্কারের রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে বলেছে।
দাম বাড়ার চাপে সরকারের নারাজি
আইএমএফের সঙ্গে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তির শর্ত হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি প্রতিবছর চারবার করে দাম বাড়িয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে ভর্তুকি ধাপে ধাপে শূন্যে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়েনি।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, অনেক চাপ সত্ত্বেও তারা দাম বাড়াননি। এ মুহূর্তে এমন উদ্যোগ নেই, নিকট ভবিষ্যতেও দাম বাড়বে না। তবে সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও খাতভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ভর ত ক র পর ম ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫