ইসি গঠনে ঐকমত্য, আলোচনায় ‘ঐতিহাসিক মোড়’ বললেন আলী রীয়াজ
Published: 23rd, July 2025 GMT
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ বুধবার তিনি বলেন, আজকের আলোচনা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং এটি একটি ঐতিহাসিক মোড় তৈরি করেছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৮তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ন্যায়পাল।
আলী রীয়াজ বলেন, আজকের বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি নির্দিষ্ট কমিটি গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এ–সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন থাকবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আইনে নির্ধারিতসংখ্যক নির্বাচন কমিশনারদের সমন্বয়ে। তাঁদের মনোনয়নের জন্য একটি নির্বাচক কমিটি গঠিত হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দল থেকে), প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং প্রধান বিচারপতির প্রতিনিধির হিসেবে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।
এ কমিটি বিদায়ী কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে প্রার্থী অনুসন্ধান শুরু করবে। যোগ্যতা-অযোগ্যতা, প্রার্থী আহ্বান এবং অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্ধারিত হবে সংসদে প্রণীত আইনের মাধ্যমে।
কমিটি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত স্বচ্ছভাবে যাচাই-বাছাই করে সর্বসম্মতিক্রমে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং প্রতিটি কমিশনার পদের জন্য একজন করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাঁদের পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। স্পিকারের অধীন সংসদ সচিবালয় এই কমিটিকে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান করবে।
সংবিধানের বিদ্যমান ১১৮ অনুচ্ছেদের ২, ৪, ৫, এবং ৬ উপ–অনুচ্ছেদ অপরিবর্তিত থাকবে। তবে ৫ উপ–অনুচ্ছেদে একটি নতুন অংশ যোগ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যেখানে জাতীয় সংসদের জবাবদিহির আওতায় আনতে কমিশনের জন্য একটি আইন ও আচরণবিধি প্রণয়নের বিধান যুক্ত হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের আগের অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়ে আজ যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তা একটি স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করবে। আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে এই দায়িত্বশীল অবস্থানের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এ সময় জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। আশা করছি, শিগগিরই আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সনদে উপনীত হতে পারব।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলোচনার জন্য আজ রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁর বাসভবন যমুনায় ডেকেছেন। এ জন্য ঐকমত্য কমিশনে আজ আধা বেলা আলোচনা হয়।
আজকের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি, বিএনপি মোটামুটি একমত
জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে—সনদের এ বিষয়টি নিয়েই মূলত আপত্তি। দলগুলো বলছে, জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে তা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে। না হলে পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। তবে এ খসড়ার সঙ্গে মোটামুটি একমত বিএনপি।
গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ফাঁকে সাংবাদিকদের কাছে সনদের খসড়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় কয়েকটি দল। আজ বুধবার দুপুরের মধ্যে দলগুলোকে এ খসড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত জানাতে বলেছে ঐকমত্য কমিশন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংসদে নারী আসন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এসব বিষয়ে গতকালও ঐকমত্য হয়নি। দ্বিতীয় পর্বের আলোচ্য সূচিতে থাকা ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে এখনো ৮টি প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়নি।
আলোচনা শেষ না হলেও গত সোমবার জাতীয় সনদের একটি খসড়া দলগুলোকে দেয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের
মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে অঙ্গীকার করবে রাজনৈতিক দলগুলো। সেখানে মোট সাতটি অঙ্গীকার করার কথা বলা আছে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে ছয় সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সেগুলো নিয়ে তৈরি হবে জাতীয় সনদ। তবে কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, খসড়ায় তা উল্লেখ করা হয়নি। দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা পুরোপুরি শেষ হওয়ার পর বিষয়গুলো সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
খসড়া নিয়ে দলগুলোর বক্তব্যসনদের কিছু অংশ ‘বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা যেকোনো একটি পদ্ধতিতে এই সনদকে আইনগত বৈধতা দেওয়ার পক্ষে। এটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা না হলে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিয়শ্চয়তার দিকে চলে যেতে পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। তাঁর মতে, সেটি দুইভাবে হতে পারে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি আইনি কাঠামো গঠন করে পরে নির্বাচিত সংসদে তা অনুমোদন অথবা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া। জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদের একটি খসড়া ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেবে বলেও জানান তিনি।
* তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। * আজ আবার আলোচনা। * খসড়া নিয়ে মতামত জানাতে হবে আজকের মধ্যেই।খসড়াটি দলীয়ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই খসড়ায় আমরা মৌলিক সংস্কারের প্রতিটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাই। যদি তা বাদ দেওয়া হয়, তাহলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সই করব কি না।’
আখতার বলেন, আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে তারা ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার’ (আইনি আদেশ) করার প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে যে সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দলগুলো সম্মিলিতভাবে মেনে নিচ্ছে, তা যেন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসা কোনো দল উপেক্ষা করতে না পারে, এ নিশ্চয়তাও চান তাঁরা।
শুরু থেকে সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ গঠনের কথা বলে আসছে এনসিপি। এ বিষয়ে গতকাল আখতার হোসেন বলেন, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান পুনর্লিখন করা গেলে সঠিকভাবে সব বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য ছয়টি বিকল্প পদ্ধতির কথা বলেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেগুলো নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি উল্লেখ করে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। আলোচনার পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা হয়নি, অথচ তারা খসড়া প্রকাশ করেছে। এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।’
জুলাই সনদের খসড়াকে আইনি বাধ্যবাধকতাহীন একটি দুর্বল উপস্থাপনা বলে অভিহিত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ গতকাল দলের নিয়মিত বৈঠকে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খসড়ায় একবারের জন্যও পতিত ফ্যাসিবাদের মূল হোতা ও অশুভ চক্রের প্রধান শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়নি। জুলাই সনদের ক্ষেত্রে প্রধান চাওয়া ছিল, এর আইনি মর্যাদা ও বাধ্যবাধকতা। কিন্তু খসড়া সনদে এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ফলে সনদের আদতে কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না।
অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশনের খসড়ার সঙ্গে মোটামুটি একমত বিএনপি। গতকাল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ার সঙ্গে তাঁরা মোটামুটি একমত। অঙ্গীকারের বিষয়েও বিএনপি একমত। খসড়ায় শব্দ-বাক্য গঠন-সংক্রান্ত বিষয়ে বিএনপি তাদের পর্যবেক্ষণ আজ কমিশনকে জানাবে।
কাল সনদ চূড়ান্ত করার আশাগতকাল দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দলগুলোর মন্তব্যের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করবেন। তিনি আশা করছেন, বিভিন্ন মন্তব্য সমন্বয় করে একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করতে পারবেন। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেসব বিষয় ও মন্তব্যগুলো নিয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সনদের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
গতকাল সন্ধ্যায় আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, কেউ কেউ মৌখিকভাবে সনদের খসড়ায় কিছু কিছু সংশোধনীর কথা কমিশনকে বলেছেন। বড় ধরনের আপত্তির কথা কমিশন এখনো শুনতে পায়নি। কমিশন এখনো আশাবাদী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করানো যাবে।
গতকালের আলোচনানির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও এ সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। গতকালের আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন রূপরেখা নিয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। তবে সেটি নিয়েও ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কয়েকটি ধাপে বিকল্পের কথা আছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রস্তাবের প্রথম কয়েকটি ধাপ নিয়ে ঐকমত্য আছে। এর পরের ধাপ কী হবে, সেটা ঠিক করার বিষয়টি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
তবে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল বিষয়টি পরবর্তী সংসদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনা থেকে বোঝা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে গেলে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কমিশন এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানাবে।
সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা এবং সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। কিন্তু তাতে ঐকমত্য না হওয়ায় কমিশন নতুন প্রস্তাব দেয়। তাতে বলা হয়, ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে দলগুলো এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। গতকালও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।
গতকাল এ বিষয়ের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সরাসরি নির্বাচনে নারী প্রার্থী দিতে জামায়াতের সমস্যা হবে না। জমিয়তে ওলামা ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব দলের ক্ষেত্রে নারী প্রার্থী দিতে ‘টেকনিক্যাল’ সমস্যা হবে। ইসলামী আন্দোলন যে সংস্কৃতির দল, তাদের পক্ষে নারী প্রার্থী দেওয়া কঠিন। তাই নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না করে বলা যায়, এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। যারা পারবে, নারী প্রার্থী দেবে।
গতকালের আলোচনা শেষে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনায় বিভিন্ন রকম প্রস্তাব এসেছে। পর্যায়ক্রমে নারী প্রতিনিধিত্ব কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে ঐকমত্যের কাছাকাছি আসা গেছে। বুধবার এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে একটি লিখিত ভাষ্য দেওয়া হবে। কমিশন আশা করছে, সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।