ভারতের সংসদ অধিবেশন কেন বারবার মুলতবি হয়ে যাচ্ছে
Published: 23rd, July 2025 GMT
ভারতীয় সংসদের অচলাবস্থা অব্যাহত। আজ বুধবারও লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন হট্টগোলের দরুন মুলতবি হয়ে গেল। পেহেলগাম–কাণ্ড, অপারেশন সিঁদুর, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিরোধে বর্ষাকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনেও কোনো কক্ষে কোনো কাজ হয়নি।
চলতি সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও সংসদ অচল থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রথম কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশযাত্রা। চার দিনের সফরে আজ বুধবারই তিনি যুক্তরাজ্য রওনা হন। দুই দিন সেখানে কাটিয়ে তিনি দুই দিনের সফরে যাবেন মালদ্বীপ। আগামী সোমবারের আগে সংসদে তিনি উপস্থিত হতে পারছেন না। বিরোধীরা চান, মোদির উপস্থিতিতেই পেহেলগাম, অপারেশন সিঁদুর ও বিহার নিয়ে আলোচনা করতে, যাতে তাঁকে জবাবদিহিতে বাধ্য করা যায়।
বিরোধীরা চান, মোদির উপস্থিতিতেই পেহেলগাম, অপারেশন সিঁদুর ও বিহার নিয়ে আলোচনা করতে, যাতে তাঁকে জবাবদিহিতে বাধ্য করা যায়।দ্বিতীয় কারণ, বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে দুই কক্ষে কবে থেকে কীভাবে কতক্ষণ আলোচনা হবে, তা এখনো ঠিক না হওয়া। রাজ্যসভায় এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েও শেষ হতে পারেনি উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের পদত্যাগের কারণে। চলতি সপ্তাহে তা ঠিক হলেও আগামী সপ্তাহের আগে আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা নেই। কাজেই বিরোধীরাও তত দিন পর্যন্ত সভা অচল রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারপক্ষ যদিও বারবার বলছে, সব বিষয় নিয়ে তারা আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে কবে থেকে কতক্ষণ আলোচনা, সরকার না বিরোধী কাদের প্রস্তাব মেনে—তা এখনো স্থির হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শাসক দল বিজেপি যেমন বিরোধীদের সমালোচনায় মুখর, বিরোধীপক্ষেরও তেমন অভিযোগ সরকার আলোচনা থেকে পালাতে চাইছে।
আজ বুধবার সংসদ অচলের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিহারে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) ভূমিকা। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বিহারে নাগরিকত্ব নির্ধারণপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য, ভুয়া ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নামে পরিযায়ী শ্রমিক, দরিদ্র মানুষ ও ‘অবাঞ্ছিতদের’ নাম বাদ দেওয়া। যে কারণে জন্মসনদ দাখিলের ওপর জোর দিচ্ছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বিহারে নাগরিকত্ব নির্ধারণপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের মূল লক্ষ্য, ভুয়া ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নামে পরিযায়ী শ্রমিক, দরিদ্র মানুষ ও ‘অবাঞ্ছিতদের’ নাম বাদ দেওয়া।নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা করা হয়েছে। এক দিন শুনানিও হয়েছে। সেই শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে বলেছিলেন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড বৈধতার প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করতে। সুপ্রিম কোর্টের সেই প্রস্তাব কমিশন খারিজ করে দিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে হলফনামা পেশ করে তারা জানিয়েছে, ওই তিন নথি প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রাহ্য করা সম্ভবপর নয়।
আজ লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীরা কমিশনের এই মনোভাবেরই বিরোধিতা করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দল নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করছে।
কেন ওই তিন নথি গ্রাহ্য করা হবে না, সেই যুক্তিও সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছে নির্বাচন কমিশন। হলফনামায় তারা বলেছে, বিহারে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য যে বিশেষ সমীক্ষা চালানো হচ্ছে, সেখানে ভোটার কার্ড বিবেচনা করা যায় না। কারণ, ওই ভোটার কার্ডের নিরিখেই ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেই তালিকা সংশোধিত হচ্ছে বলে ওই ভোটার কার্ড গ্রাহ্য করা যাবে না।
কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ড বিবেচনা করা যাবে না, কারণ ওই কার্ড শুধু এক ব্যক্তিবিশেষের পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের পরিচয় নয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারির পর যে আধার কার্ড জারি করা হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের মতে, রেশন কার্ড বিবেচনা না করার কারণ হচ্ছে, দেশে প্রচুর ভুয়া রেশন কার্ড ছড়িয়ে রয়েছে।
সংসদ কীভাবে ও কবে থেকে সচল হবে, তা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে উপরাষ্ট্রপতি পদে শাসক বিজেপি কাকে পছন্দ করবে, সেই রাজনৈতিক জল্পনা। নির্বাচন কমিশন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আজ বুধবারও শুরু করেনি। স্পষ্টতই, বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হচ্ছেন না।
উপরাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করায় রাজ্যসভা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং। তিনি বিজেপির জোটসঙ্গী জেডিইউ নেতা। বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালোই। তিনি বিজেপির বিশ্বাসভাজনও। ফলে উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে বিবেচনার জল্পনা কোনো কোনো মহল তুলছে।
সংসদ কীভাবে ও কবে থেকে সচল হবে, তা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে উপরাষ্ট্রপতি পদে শাসক বিজেপি কাকে পছন্দ করবে, সেই রাজনৈতিক জল্পনা। নির্বাচন কমিশন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আজ বুধবারও শুরু করেনি।কেউ কেউ আবার মনে করছেন, বিজেপি বিহারের জেডিইউ–দলীয় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে উপরাষ্ট্রপতি করলে রাজনৈতিক দিক থেকে ভালো হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে বিজেপি বিহার জিতলে তাদের কোনো নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করা সহজতর হবে।
নীতীশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে অবশ্য তাঁর স্বাস্থ্য। রাজ্যসভা পরিচালনা করার মতো দক্ষতাও তাঁর কতটা আছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। তা ছাড়া সে ক্ষেত্রে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যান দুজনেই একই দলের হয়ে যাবেন। সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপির রাজ্যসভা নেতা ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জে পি নাড্ডার নামও কোনো কোনো মহলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নাড্ডা সক্রিয় রাজনীতিক। তাঁর বয়সও মাত্র ৬৪। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে ৭১ বছর বয়সে অবসর গ্রহণে তিনি রাজি হবেন কি না, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে।
জম্মু–কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা ও দিল্লির উপরাজ্যপাল বিনয় কুমার সাকসেনার নামও শোনা যাচ্ছে। দুজনেই সংবিধানবিশেষজ্ঞ। প্রশাসনিক দক্ষতারও প্রমাণ তাঁরা দিয়েছেন। জগদীপ ধনখড়ও উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সুবাদে এই দুজনের নাম উঠে এসেছে। কোনো কোনো মহল আবার প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসভাজন ও ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নাম তুলে ধরছেন।
জল্পনা সত্ত্বেও বিজেপি এখনো কোনো ইঙ্গিতই দেয়নি, কাকে তারা উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চায়। সাধারণত দেখা যায়, যেসব নাম প্রচারে উঠে আসে তাঁরা কেউই বিবেচিত হন না। সম্পূর্ণ অজানা একজন হয়ে ওঠেন তুরুপের তাস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপর ষ ট রপত প রক র য় র জন ত ক র জ যসভ প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
মাত্র দেড় মাসে কীভাবে ১৭ কেজি ওজন কমালেন ক্রিকেটার সরফরাজ খান?
শুরুটা যেভাবে করেছিলেন
সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে। এর পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় তৃপ্তির জন্য রেখেছিলেন বেশি আঁশসমৃদ্ধ ফল ও সবজির সালাদ, ব্রকলি, শসা। প্রোটিনের জন্য রেখেছিলেন গ্রিল করা মাছ ও মুরগি, সেদ্ধ ডিম আর গুড ফ্যাটের জন্য রেখেছিলেন অ্যাভোকাডো। চা ও কফির পরিবর্তে খেয়েছেন গ্রিন টি ও গ্রিন কফি।
৮০ শতাংশ ওজন কমে সঠিক ডায়েটেভারতের হলিস্টিক হেলথ এক্সপার্ট ড. মিকি মেহতা বলেন, ‘আপনি যত কঠোর ব্যায়ামই করুন না কেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ ভূমিকা রাখে খাদ্যনিয়ন্ত্রণ, আর বাকি ২০ শতাংশ ব্যায়াম। প্রতিদিন কী খাবেন, সেটাই ঠিক করে দেবে শরীর কত দ্রুত বদলাবে।’
সরফরাজ খান ১৭ কেজি ওজন কমিয়েছেন ভাত, রুটি, চিনি, ময়দা ও বেকড খাবার একেবারে বাদ দিয়ে