মাদারীপুরের রাজৈরে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে রাজৈর উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রাজৈর উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে উপজেলা পরিষদ এলাকায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে হেলিপোর্ট মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা চলছে। গতকাল বিকেলে ওই টুর্নামেন্টে অংশ নেয় মজুমদারকান্দি ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের দুই দল কিশোর। খেলার সময় দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে সন্ধ্যার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় রাজৈর উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

এরপর দ্রুত স্থান ত্যাগ করে উভয় পক্ষের লোকজন। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫ জন আহত হয়। তারা রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে রাজৈর থানার পুলিশ।

সিসিটিভির ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ খান বলেন, ফুটবল খেলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর দুই গ্রামের মধ্যে টানা তিন দিনব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সময় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের পক্ষ নিয়ে বদরপাশা গ্রামের বিপক্ষে সংঘর্ষে অংশ নেয় মজুমদারকান্দি গ্রামও। এতে অন্তত ৩০টি দোকান ভাঙচুর করা হয়। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ। পরে ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে প্রশাসন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জ র উপজ ল স ঘর ষ ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী

আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।

রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।

মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ