‘বৈষম্য নিরসনে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না’
Published: 26th, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে দেশে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে অতি দ্রুত নির্বাচন হতে হবে।
কারফিউ ভাঙা গানের মিছিল স্মরণে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এ সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য।
আলোচনা সভার আগে বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গানের মিছিল বের করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের নেতা-কর্মীরা। মিছিলের সময় ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/ কত প্রাণ হল বলিদান; ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা; কারার ঐ লৌহ কপাট’সহ বিভিন্ন গান গাওয়া হয়।
মিছিলে নেতা-কর্মীদের হাতে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ডও ছিল। তাতে লেখা ছিল—বিচার কত দূর ইন্টেরিম?; হাসিনাকে ফিরিয়ে আনো, হাজির খুনির বিচার করো; সাংস্কৃতিক উৎসবে বাধা কেন; জানমালের নিরাপত্তা দাও; মাজার-বাউলপন্থীসহ ভিন্নমতের ওপর হামলা বন্ধ করো প্রভৃতি। মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।
জনগণের আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্য গত বছরের ২০ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার যে কারফিউ জারি করেছিল, এই দিনে (২৬ জুলাই) সংস্কৃতিকর্মীদের নেতৃত্বে প্রথম তা ভঙ্গ করা হয় বলে উল্লেখ করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন মফিজুর রহমান। এ সময় তিনি বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা; দেশে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করা; অনতিবিলম্বে নির্বাচন দেওয়া; রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিংস পার্টি তৈরি করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা; দেশে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ তৈরি করা; জাতিগত বিদ্বেষ দূর করা; পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করা; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সব চুক্তি প্রকাশ্যে আনা ও বাতিল করা এবং ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি প্রকাশ্যে আনা ও বাতিল করা।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানুষ বৈষম্য দূর করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে মফিজুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমরা করেছি, বৈষম্যের অবসান হচ্ছে না।’ বরং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হয়ে উঠছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পক্ষে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে—এমন প্রশ্ন তোলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন যেসব কমিশন গঠিত হয়েছে, সেসব কমিশনের অনেক সদস্যই বিদেশি নাগরিক। বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে কমিশন করে কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভালো হবে, তা স্পষ্ট নয়।
এখন সরকারের ভেতরে তিনটি সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। তিনি বলেন, সরকারের ভেতরে একটি ইউনূসের সরকার, আরেকটি বিএনপির সরকার এবং অন্যটি জামায়াতের সরকার। এই বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতে হলে অতি দ্রুত নির্বাচন হতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সমন্বয়ক হিসেবে অনেকে অফিস-আদালতে, সচিবালয়ে, গণমাধ্যমে গেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রগতি লেখক সংঘের কোষাধ্যক্ষ দীনবন্ধু দাস। তিনি বলেন, গিয়ে তাঁরা তালিকা দিয়ে বলেছেন, এই সাংবাদিকদের বরখাস্ত করুন এবং এই সাংবাদিকদের নিয়োগ দিন। অতীতের কোনো আন্দোলনে পর এ রকম দেখা যায়নি।
সমাজ চিন্তা ফোরামের আহ্বায়ক কামাল হোসেন বলেন, এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য। আজকে চারদিকে বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী কোনো ধরনের পদক্ষেপ এই সরকার নিচ্ছে না।
আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।
রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।
কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?
কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।
রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।
রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।
এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।
রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।