জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বর্তমানে দেশে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে অতি দ্রুত নির্বাচন হতে হবে।

কারফিউ ভাঙা গানের মিছিল স্মরণে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে এ সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য।

আলোচনা সভার আগে বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গানের মিছিল বের করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের নেতা-কর্মীরা। মিছিলের সময় ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/ কত প্রাণ হল বলিদান; ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা; কারার ঐ লৌহ কপাট’সহ বিভিন্ন গান গাওয়া হয়।

মিছিলে নেতা-কর্মীদের হাতে বেশ কিছু প্ল্যাকার্ডও ছিল। তাতে লেখা ছিল—বিচার কত দূর ইন্টেরিম?; হাসিনাকে ফিরিয়ে আনো, হাজির খুনির বিচার করো; সাংস্কৃতিক উৎসবে বাধা কেন; জানমালের নিরাপত্তা দাও; মাজার-বাউলপন্থীসহ ভিন্নমতের ওপর হামলা বন্ধ করো প্রভৃতি। মিছিলটি দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।

জনগণের আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্য গত বছরের ২০ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার যে কারফিউ জারি করেছিল, এই দিনে (২৬ জুলাই) সংস্কৃতিকর্মীদের নেতৃত্বে প্রথম তা ভঙ্গ করা হয় বলে উল্লেখ করেন গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সমন্বয়ক মফিজুর রহমান।

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন মফিজুর রহমান। এ সময় তিনি বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা; দেশে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করা; অনতিবিলম্বে নির্বাচন দেওয়া; রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিংস পার্টি তৈরি করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা; দেশে সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ তৈরি করা; জাতিগত বিদ্বেষ দূর করা; পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করা; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সব চুক্তি প্রকাশ্যে আনা ও বাতিল করা এবং ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি প্রকাশ্যে আনা ও বাতিল করা।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানুষ বৈষম্য দূর করার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে মফিজুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমরা করেছি, বৈষম্যের অবসান হচ্ছে না।’ বরং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হয়ে উঠছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পক্ষে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে—এমন প্রশ্ন তোলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীন যেসব কমিশন গঠিত হয়েছে, সেসব কমিশনের অনেক সদস্যই বিদেশি নাগরিক। বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে কমিশন করে কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভালো হবে, তা স্পষ্ট নয়।

এখন সরকারের ভেতরে তিনটি সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। তিনি বলেন, সরকারের ভেতরে একটি ইউনূসের সরকার, আরেকটি বিএনপির সরকার এবং অন্যটি জামায়াতের সরকার। এই বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পেতে হলে অতি দ্রুত নির্বাচন হতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সমন্বয়ক হিসেবে অনেকে অফিস-আদালতে, সচিবালয়ে, গণমাধ্যমে গেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রগতি লেখক সংঘের কোষাধ্যক্ষ দীনবন্ধু দাস। তিনি বলেন, গিয়ে তাঁরা তালিকা দিয়ে বলেছেন, এই সাংবাদিকদের বরখাস্ত করুন এবং এই সাংবাদিকদের নিয়োগ দিন। অতীতের কোনো আন্দোলনে পর এ রকম দেখা যায়নি।

সমাজ চিন্তা ফোরামের আহ্বায়ক কামাল হোসেন বলেন, এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য। আজকে চারদিকে বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী কোনো ধরনের পদক্ষেপ এই সরকার নিচ্ছে না।

আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ