মামা পাল্টিয়েও রক্ষা পেলনা চাঁদাবাজ সাগর
Published: 28th, July 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকার পরিবহন চাঁদাবাজ শফি আলম চৌধুরী সাগরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রাজিব নামে একজন বাস চালকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম।
গ্রেপ্তার সাগর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি কেন্দ্রীয় যুবকমাণ্ডের চেয়ারম্যান। সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগর এলাকায় ভাড়া থাকেন।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে শফি আলম চৌধুরী সাগর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাংরোর্ড এলাকায় বীরদর্পে চাঁদাবাজি করতো। তার কাছে জিম্মি ছিল পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর নতুন মামা বানায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী মুন্সিকে। মামা পাল্টিয়ে আইয়ুব আলী মুন্সির ছত্রছায়ায় নতুন রূপে পরিবহণ চাঁদাবাজি শুরু করে সাগর।
আইয়ুব আলী মুন্সির ছোট ভাই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি কেন্দ্রীয় যুবকমাণ্ডের সাধারণ সম্পাদক এম এ রহিম মুন্সিকে সঙ্গে নিয়ে সগর গড়ে তুলে নতুন চাঁদাবাজ চক্র।
তবে রহিম মুন্সি ৫ আগস্টের পর বনে যায় বিএনপি নেতা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় মাস দেড়েক আগে শ্রমিক পরিবহণের আলমগীর নামে একজন বাস মালিককে মারধর করে রহিম মুন্সি।
সোনারগাঁ উপজেলার কাঠপুর সোনাপুর রোড এলাকার আরফান খাঁর ছেলে মো.
গত ২৫ জুলাই দুপুর ২ টায় ৭-৮ জন লোক নিয়ে সাগর চিটাগাংরোড বাসস্ট্যাণ্ড এসে আমি ও আমার হেলপারকে মারধর করে ৬ হাজার ৮০০ টাকা জোর করে নিয়ে যায়। চাঁদা না দিলে গাড়ি চালাতে দিবে না বলে হুমকি দেয়।
এঘটনায় আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আবার সাগর লোকজন সঙ্গে নিয়ে বাসস্ট্যাণ্ডে এসে আমি আমার হেলপারকে মারধর ও বাসের চার পাশের সব গ্লাস ভেঙে ফেলে।
পরে আমি ভাঙাচুরা বাস নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যাই। তখন পুলিশ এসে ১১ টার দিকে চিটাগাংরোড এলাকা থেকে সাগরকে গ্রেপ্তার করে।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, সাগরকে গ্রেপ্তার করার পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ফজলুল রহমান তাকে থানা না নিয়ে চিটাগাংরোড হাজী এরহমান সুপার মার্কেটে এমএ রহিম মুন্সির অফিসে নিয়ে যায়। তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রহিম মুন্সির অফিসে দেনদরবার শুরু হয়।
এতে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিলে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে থানায় নিয়ে যান। রহিম মুন্সির অফিসে গেলেও সাগরকে ছেড়ে দিতে দেনদরবারের বিষয়টি অস্বীকার করেন ফজলুল রহমান।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম সাগরকে আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন গ র প ত র কর রহ ম ম ন স র ড এল ক পর বহন স গরক
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।