তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
Published: 30th, July 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। অনুদানের চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব সুপারিশ করেছেন; যার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।
ঘটনাকে অনেকেই ‘চাঁদাবাজি’ বলে ফেইসবুকে সমালোচনা করেছেন। তবে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি জানান, অনেকেই তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করে। তাহলে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় সবই চাঁদাবাজি।
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আম্মার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাবেক সমন্বয়ক মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।”
কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে।
বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, “রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।”
আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কেএসকে হৃদয়। তিনি ৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের আয়োজক এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।
চিঠির বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার বলেন, “রাবি প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়ার পর তারা জানিয়েছিলেন, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারলেও তারা অন্যান্য সহযোগিতা করবেন। এরপর উপাচার্যের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “নগর ভবনে শুধু আমরাই অনুদানের জন্য চিঠি দিয়েছি, তা নয়। বিভিন্ন বিভাগের প্রোগ্রাম আয়োজনের ক্ষেত্রেও সেখানে অনুদান চেয়ে থাকে। আমরা একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করব, সেজন্য সিটি করপোরেশন বরাবর একটা অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সেই প্রোগ্রামের স্পন্সর হিসেবে আমরা তাদের লোগোটা ব্যবহার করব। আর এটাকে যদি কেউ চাঁদাবাজি বলে, তাহলে স্পন্সর নিয়ে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, সবই চাঁদাবাজি।”
এদিকে, সাবেক এ সমন্বকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ‘আমার কিছু কথা ছিল’ শিরোনামে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাবির ছাত্র উপদেষ্টা ড.
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “স্পন্সরশিপের সব টাকা একই প্রতিষ্ঠান দেয় না। সবাই কিছু করে দিলে একটা বড়ো এমাউন্ট হয়। আর্টসেলের মতো একটা টিমের জন্য খরচ, প্লেন ফেয়ার, আপ্যায়ন, শহীদ-আহতসহ ছাত্র-শিক্ষক-জনতা জুলাই যোদ্ধাদের উত্তরীয়, সম্মাননা, ক্রেস্ট, হল ভাড়া, ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা, আল্পনা, ডিজিটাল মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম. লেবার ও স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আপ্যায়ন, ট্রাভেলিং ফ্যাসিলিটির গাড়ী ভাড়া, হোটেল খরচ, চা-কফি-নাস্তা, অন্যান্য পারফরমারদের সম্মানী ও যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে সর্বকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রামে কোটি টাকা খরচ হওয়া অস্বাভাবিক? যন্ত্রীসহ নানান লোকেদের সম্মানী যোগ করলে আরও বাড়ে।”
তিনি আরো লিখেছেন, “আর যেহেতু মিডিয়া পার্টনারের অনেকে মিলে পৃথক পৃথক এমাউন্ট দেয়, কাজেই টাকা সংগ্রহ করে পাওনাদারকে পরিশোধের যে প্যারা তা ভুক্তভোগীই জানে। নিয়ম মেনে অন্যান্য প্রোগ্রামের আয়োজকদের জন্য যে খসড়া বাজেট ও আবেদন, তেমন দেখে আমি নিজেও সুপারিশ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির সুপারিশ না থাকলে কেউ টাকা দিতে আস্থা পায় না। তাহলে এটাকে চাঁদা বলে প্রচার করা অনৈতিক।”
ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো কনসার্ট ও প্রোগ্রাম হয় স্পন্সরশিপ নিয়েই। একেকজন একেকটি পার্ট হিসেবে টাকা দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। রাবিতে স্মরণকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রাম করার কথা ভবিষ্যতে কেউ করতে উৎসাহ পাবে কি না সংশয় রয়েছে। আর সমন্বয়কের চাঁদাবাজি নামক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জুলাই অর্জনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। নিজের গায়ে থুতু ফেলে যারা চাঁটছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।”
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “রেকোমেন্ডেশন চেয়েছে, কিন্তু পায়নি- এমন মনে করতে পারি না। আমি মনে করি, কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রিরা যে উদ্যোগ নেবে, তাতে আমার দিক থেকে সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এটা আমি শুরু থেকেই করে আসছি।”
তিনি আরো বলেন, “আজ ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সোর্স থেকে একের পর এক আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি একদম প্রথম দিন থেকে যেভাবে এই সমস্ত উদ্যোগের সাথে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত যে, এরপর যেকোনো উদ্যোগে সাহায্য করার আগে আমাকে ১০ বার ভাবতে হবে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ স ব ক সমন বয়ক অন দ ন চ ন র জন য ৩৬ জ ল ই অন দ ন র ন আম ম র উপ চ র য ফ সব ক প রস ত কর ছ ন র একট
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।