রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। অনুদানের চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব সুপারিশ করেছেন; যার একটি কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।

ঘটনাকে অনেকেই ‘চাঁদাবাজি’ বলে ফেইসবুকে সমালোচনা করেছেন। তবে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ বলে অভিহিত করেছেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি জানান, অনেকেই তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করে। তাহলে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয় সবই চাঁদাবাজি।

গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আম্মার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’

আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ

ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এই সাবেক সমন্বয়ক মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।”

কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে।

বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, “রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’। এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।”

আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কেএসকে হৃদয়। তিনি ৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের আয়োজক এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার পরিচালক ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা। গত ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন, ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।

চিঠির বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক আম্মার বলেন, “রাবি প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়ার পর তারা জানিয়েছিলেন, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারলেও তারা অন্যান্য সহযোগিতা করবেন। এরপর উপাচার্যের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনে আবেদন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নগর ভবনে শুধু আমরাই অনুদানের জন্য চিঠি দিয়েছি, তা নয়। বিভিন্ন বিভাগের প্রোগ্রাম আয়োজনের ক্ষেত্রেও সেখানে অনুদান চেয়ে থাকে। আমরা একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করব, সেজন্য সিটি করপোরেশন বরাবর একটা অনুদান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সেই প্রোগ্রামের স্পন্সর হিসেবে আমরা তাদের লোগোটা ব্যবহার করব। আর এটাকে যদি কেউ চাঁদাবাজি বলে, তাহলে স্পন্সর নিয়ে যত প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়, সবই চাঁদাবাজি।”

এদিকে, সাবেক এ সমন্বকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনা শুরু হলে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ‘আমার কিছু কথা ছিল’ শিরোনামে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন রাবির ছাত্র উপদেষ্টা ড.

আমিরুল ইসলাম কনক।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “স্পন্সরশিপের সব টাকা একই প্রতিষ্ঠান দেয় না। সবাই কিছু করে দিলে একটা বড়ো এমাউন্ট হয়। আর্টসেলের মতো একটা টিমের জন্য খরচ, প্লেন ফেয়ার, আপ্যায়ন, শহীদ-আহতসহ ছাত্র-শিক্ষক-জনতা জুলাই যোদ্ধাদের উত্তরীয়, সম্মাননা, ক্রেস্ট, হল ভাড়া, ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা, আল্পনা, ডিজিটাল মনিটর, সাউন্ড সিস্টেম. লেবার ও স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আপ্যায়ন, ট্রাভেলিং ফ্যাসিলিটির গাড়ী ভাড়া, হোটেল খরচ, চা-কফি-নাস্তা, অন্যান্য পারফরমারদের সম্মানী ও যাতায়াত খরচ সব মিলিয়ে সর্বকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রামে কোটি টাকা খরচ হওয়া অস্বাভাবিক? যন্ত্রীসহ নানান লোকেদের সম্মানী যোগ করলে আরও বাড়ে।”

তিনি আরো লিখেছেন, “আর যেহেতু মিডিয়া পার্টনারের অনেকে মিলে পৃথক পৃথক এমাউন্ট দেয়, কাজেই টাকা সংগ্রহ করে পাওনাদারকে পরিশোধের যে প্যারা তা ভুক্তভোগীই জানে। নিয়ম মেনে অন্যান্য প্রোগ্রামের আয়োজকদের জন্য যে খসড়া বাজেট ও আবেদন, তেমন দেখে আমি নিজেও সুপারিশ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির সুপারিশ না থাকলে কেউ টাকা দিতে আস্থা পায় না। তাহলে এটাকে চাঁদা বলে প্রচার করা অনৈতিক।”

ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়ো বড়ো কনসার্ট ও প্রোগ্রাম হয় স্পন্সরশিপ নিয়েই। একেকজন একেকটি পার্ট হিসেবে টাকা দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল। রাবিতে স্মরণকালের একটা মেগা বাজেটের প্রোগ্রাম করার কথা ভবিষ্যতে কেউ করতে উৎসাহ পাবে কি না সংশয় রয়েছে। আর সমন্বয়কের চাঁদাবাজি নামক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জুলাই অর্জনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। নিজের গায়ে থুতু ফেলে যারা চাঁটছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।”

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “রেকোমেন্ডেশন চেয়েছে, কিন্তু পায়নি- এমন মনে করতে পারি না। আমি মনে করি, কো-কারিকুলার, এক্সট্রা-কারিকুলার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের ছাত্র-ছাত্রিরা যে উদ্যোগ নেবে, তাতে আমার দিক থেকে সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এটা আমি শুরু থেকেই করে আসছি।”

তিনি আরো বলেন, “আজ ঠিক এই ধরনের একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সোর্স থেকে একের পর এক আমাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমি একদম প্রথম দিন থেকে যেভাবে এই সমস্ত উদ্যোগের সাথে ছিলাম, সেভাবেই থাকতে চাই। কিন্তু পরিবেশ এতটাই বিষাক্ত যে, এরপর যেকোনো উদ্যোগে সাহায্য করার আগে আমাকে ১০ বার ভাবতে হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ স ব ক সমন বয়ক অন দ ন চ ন র জন য ৩৬ জ ল ই অন দ ন র ন আম ম র উপ চ র য ফ সব ক প রস ত কর ছ ন র একট

এছাড়াও পড়ুন:

‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল  সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।

সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে  একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য। 

সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের  গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি,  সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।

‎‎মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর)  শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

‎দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।

‎‎জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।

‎‎এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

‎‎তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।

‎‎এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ‎পূজাকে  ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • ২০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে ভোলার বৈষা দধি
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫